বিগত ১৪ বছরে বদলে গিয়েছে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প আজ বাংলার ঘরে ঘরে। সরকারি পরিষেবা প্রদানকে তিনি এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। মানুষকে সরকারের কাছে যেতে হচ্ছে না সরকার আসছেন মানুষের দুয়ারে। সেই ভাবনা থেকেই ‘দুয়ারে সরকার’ বা ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ শিবির। যার মাধ্যমে মানুষ নিজের এলাকায় পরিষেবা পাচ্ছেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়েছেন নিরাপত্তা ও ডিজিটাল ব্যবস্থা-সহ অন্যান্য বিষয়েও। যার ফলে বদলে গিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের নীতি আক্ষরিক অর্থেই মডেল হয়ে উঠছে দেশে।
আরও পড়ুন-৬০ বছরের বর্ষপূর্তিতে বাসিন্দারা পেলেন আধুনিক হাসপাতাল
শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম, প্রযুক্তি-নির্ভর পরিষেবা প্রদান করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর শাসনব্যবস্থায় কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও পরিকাঠামো সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। সরকারি পরিষেবা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি বর্তমানে আলোচিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন মহলে। জাতীয় সংবাদমাধ্যমও মুখ্যমন্ত্রী প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সম্প্রতি ডেইলিহান্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাভানান এন তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনের বিভিন্ন নমুনা।
তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কিছু প্রকল্প চালু করেছেন, যার সুফল প্রতিনিয়ত পেয়ে চলেছে বাংলার মানুষ। রাজ্যে বর্তমানে ৩,৫০০-এরও বেশি ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ বা বিএসকে চালু রয়েছে। এর মাধ্যমে নাগরিকরা সরকারি অফিসে না গিয়েও বিভিন্ন শংসাপত্রের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের নাম নথিভুক্তকরণ বা জমির তথ্য পাচ্ছেন। তিনি নিয়েছেন ‘দিদিকে বলো’, ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’র মতো উদ্যোগ। এই কর্মসূচিতে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে। যা মানুষের অভাব-অভিযোগ, সমস্যা সমাধানের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে সরকার সরাসরি জনসংযোগও করতে পারছে। প্রথম দুই বছরেই এখানে ১৫ লক্ষেরও বেশি বার্তা জমা পড়েছে। এবং তার সমাধান হয়েছে। এভাবেই ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে পরিষেবা ও নিরাপত্তা প্রদান করছে রাজ্য সরকার। ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে জবাবদিহির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মানসিকতাকে দমন করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি একজন আদর্শ শাসক, তাই এমনটা ভেবেছেন, ভাবতে পেরেছেন।
তারপর মহিলাদের সুরক্ষার জন্য ‘রাত্তিরের সাথী’র মতো অ্যাপ, সিসিটিভি নজরদারি, এবং ডিজিটাল এফআইআর-এর মতো পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একইভাবে ডিজিটাল ব্যবস্থায় বিপ্লব এনে কর্মসংস্থান ও তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সোপান তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর আমলে প্রযুক্তি-নির্ভর কর্মসংস্থান বেড়েছে। নিউ টাউনের ‘সিলিকন ভ্যালি হাব’-এ ১,০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ এসেছে। যার মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ১ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ইউটিউবার, স্থানীয় স্টার্টআপ, এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে পরিচালিত ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মের কর্মজীবনের পরিধিকে এক লাফে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ডিজিটাল পরিকাঠামোকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও ‘কৃষক বন্ধু’র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর সুবিধা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হচ্ছে। আবেদনকারীরা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভাতা বা অনুদান পাচ্ছেন। মোবাইলের মাধ্যমে নিজেদের আবেদনপত্রের অবস্থা জানতে পারছেন। এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা বেড়েছে এবং দ্রুত অর্থ প্রদান নিশ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন-কুৎসাকারীদের মুখে ঝামা ঘষে কলকাতাই এখন দেশের অন্যতম সেরা তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র
শিক্ষাক্ষেত্রেও ডিজিটাল প্রসার ঘটিয়ে অনলাইনে ক্লাস, ই-পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কলারশিপ পোর্টালগুলো রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পের ডিজিটাল প্রয়োগে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া হয়েছে ডিজিটাল।
দুয়ারে সরকার কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিক পরিষেবাকে পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর হালে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ নামে আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি বুথে দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে উন্নয়ন খাতে। রাজ্যের ৮০ হাজার বুথে ৮,০০০ কোটি টাকার একটি নতুন প্রকল্প ডিজিটাল শাসনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা সরাসরি জানাতে পারছেন এলাকার মানুষ এবং তা সমাধান করছে সরকার।
একই সঙ্গে বাংলায় ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মেলবন্ধন ঘটাতে সমর্থ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ এবং আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বাংলা ভাষার বিস্তার স্থানীয় সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব বেড়েছে এবং তার ডিজিটাল রূপান্তর ঘটেছে। নির্ভরযোগ্য আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে।