প্রতিবেদন : বিচারপতি নিয়োগ ঘিরে নতুন দ্বন্দ্ব। এবার সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত ঘিরেই ভিন্নমত ও বিতর্ক সামনে এল। সম্প্রতি পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিপুল এম পাঞ্চোলিকে শীর্ষ আদালতে উন্নীত করার সুপারিশ করেছে কলেজিয়াম। এই সুপারিশ ঘিরে কলেজিয়ামের সদস্যদের মধ্যে ভিন্নমত তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, এক বিচারপতি জোরালোভাবে আঞ্চলিক ভারসাম্য এবং বিচারবিভাগীয় নিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব উল্লেখ করে এই সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন। এই ঘটনা বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের গুরুত্ব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন-আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছি : সূর্য
সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম নিয়োগের জন্য দুটি নাম সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। এঁরা হলেন, বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অলোক আরাধে এবং পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিপুল এম পাঞ্চোলি। যদি এই সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সংখ্যা ৩২ থেকে বেড়ে ৩৪-এ পৌঁছবে, যা আদালতের অনুমোদিত পূর্ণ ক্ষমতা।
আরও পড়ুন-বৈষ্ণোদেবীর পথে ধস, মৃত ৫
কিন্তু বিতর্ক বেধেছে সুপারিশের নাম ঘিরেই। পাঁচ সদস্যের কলেজিয়ামের অন্যতম সদস্য বিচারপতি বি ভি নাগরত্না তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বিচারপতি পাঞ্চোলির পদোন্নতি নিয়ে। লিখিত ভিন্নমত নোট আকারে জমা দিয়েছেন তিনি। তাঁর যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই গুজরাত হাইকোর্ট থেকে দু’জন বিচারপতি আছেন—বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি এন ভি আঞ্জারিয়া। তৃতীয় আরেকজন বিচারপতি যুক্ত হলে আদালতে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। বিচারপতি পাঞ্চোলির গুজরাত থেকে পাটনায় বদলি এবং তাঁর দ্রুত পদোন্নতির প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি নাগরত্না। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ একটি ভুল দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে এবং কলেজিয়ামের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। নাগরত্না আরও উল্লেখ করেছেন যে, যদি বিচারপতি পাঞ্চোলিকে পদোন্নতি দেওয়া হয়, তাহলে তিনি ২০৩১ সালের অক্টোবরে ভারতের প্রধান বিচারপতি হওয়ার দৌড়ে থাকবেন। এই সময়কালে তিনি প্রায় দুই বছর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিচারপতি নাগরত্না সতর্ক করে বলেন, আঞ্চলিক বিবেচনাগুলি যদি সতর্কতার সাথে না দেখা হয়, তাহলে তা বিচার প্রশাসনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করার দায়িত্ব কলেজিয়ামের। এতে থাকেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এবং চারজন প্রবীণতম বিচারপতি। বর্তমান কলেজিয়ামে প্রধান বিচারপতি গাভাই এবং বিচারপতি নাগরত্না ছাড়াও বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি জে কে মাহেশ্বরী রয়েছেন। এদিকে কলেজিয়ামের অভ্যন্তরীণ মতভেদ সত্ত্বেও যদি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে দুটি সুপারিশই অনুমোদিত হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্ট বহু মাস পর পূর্ণ ক্ষমতায় পৌঁছবে।