৮৫টি গ্রামে জল বাঁচানোর লড়াইয়ে দিশা বেলপাহাড়ির ‘দুর্গা’ লীলাবতী

ধীরে ধীরে এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বেলপাহাড়ির প্রায় ৮৫টি গ্রাম। তৈরি হয়েছে অসংখ্য পুকুর ও ট্রেঞ্চ, যার সুফল পাচ্ছেন হাজারো কৃষক।

Must read

দেবব্রত বাগ, ঝাড়গ্রাম: শরতের আকাশে সাদা কাশের দোলা, শিউলির গন্ধে পুজোর আগমনী সুর জাগছে। এই আবহে অন্য এক দুর্গার লড়াইয়ের কাহিনি লিখলেন ঝাড়গ্রামের ধোবাকুঁড়িয়া গ্রামের লীলাবতী মাহাত। সমাজের বাধা আর প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে তিনি প্রমাণ করেছেন দুর্গার শক্তি শুধু পুরাণে নয়, বাস্তবেও আছে। জল ঘিরে তাঁর স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছেন লীলাবতী। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির এড়াগোদা অঞ্চলের ধোবাকুঁড়িয়া; গ্রামের লীলাবতী এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের বাধা, পরিবারের গঞ্জনা— সব কিছুকেই উপেক্ষা করে পথ দেখিয়েছেন তিনি। কখনও একার লড়াই, কখনও সহযোদ্ধাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েও এগিয়ে গিয়েছেন। আজ তাঁর সেই প্রয়াস বদলে দিয়েছে গোটা এলাকার চিত্র। স্থিতিশীল ভূগর্ভস্থ জলের কারণে গ্রামের মাঠে এখন বছরে তিনবার চাষ সম্ভব হচ্ছে।

আরও পড়ুন-নির্বাচন কমিশনের অন্তর্তদন্তে ফাঁস যোগীরাজ্যের ভোটার কারচুপি

২০১৪ সালে এক সংস্থার হয়ে জল সংরক্ষণের কাজ শুরু করেন লীলাবতী। বর্ষার জল ও জঙ্গলের জল ধরে রাখতে গ্রামবাসীদের হাতেকলমে শেখান ট্রেঞ্চ খনন, জমিতে জল পৌঁছে দেওয়া, আল তুলে জল সংরক্ষণের মতো নানা কৌশল। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনে যুক্ত হয় বেলপাহাড়ির প্রায় ৮৫টি গ্রাম। তৈরি হয়েছে অসংখ্য পুকুর ও ট্রেঞ্চ, যার সুফল পাচ্ছেন হাজারো কৃষক। সম্প্রতি কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে তাঁর এই উদ্যোগকে সম্মান জানানো হয়। পান ট্রফি, ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার ও বহু সংগঠনের প্রশংসা। তাঁর লেখা ও অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লীলাবতী বলেন, শুরুতে অনেক বাধা এলেও শেষমেশ গ্রামবাসীদের পাশে পেয়েছি। পরিবার পাশে না থাকলেও গ্রামের মানুষজনই আমার শক্তি। আজ প্রায় ৮৫টি গ্রামে জল সংরক্ষণের যে পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, তাতে বছরে তিনবার ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। গ্রামের সাধারণ এক গৃহবধূ হয়েও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। জল সংরক্ষণের এই সাফল্য বহু মহিলার অনুপ্রেরণা। এককালের নিঃশব্দ সংগ্রামী আজ তাই এক বাস্তবের ‘দুর্গা’।

Latest article