টেপ দিয়ে কি আর সব উচ্চতা মাপা যায়!
এই তো মাত্র ৪ ফুট ২ ইঞ্চি হাইটের একটি মেয়ে, কিন্তু তাঁর গুণের উচ্চতা অনেক বেশি, ওই টেপ দিয়ে তা মাপা সম্ভব নয়। পরিহাসের সুরে সবাই বলে, বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িও না; কিন্তু সেই আসমানের চাঁদ যখন বামনের প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং অপরিসীম গুণে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর কপালে এসে বিরাজ করে, তখন চতুর্দিক মাত্রাহীন সম্ভাবনার নতুন আলোকে মেতে ওঠে! মুম্বই নগরীর বাসিন্দা মিস দিশা পান্ডিয়া ঊনচল্লিশ বছর বয়সি এমনই একজন বেঁটে মানুষ এবং যাঁর অদম্য জেদের বলে সতেরো বার প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর আজ তিনি একজন কর্পোরেট স্টার। আজকে তিনি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে একজন অভিজ্ঞ গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত। গোটা বিশ্বের দরবারে ওই বেঁটে মানুষ সম্প্রদায়ের জন্য উনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
তবে শুধু নিজের চাকরি ও প্রতিষ্ঠিত জীবন নিয়েই তিনি থেমে নেই; সমাজের সর্বত্র এই শ্রেণির মানুষদের খর্বাকৃতি গঠনের জন্য যে বিকৃত মানসিক বিভ্রাটের এবং দৈহিক অবহেলার শিকার হতে হয় তার বিরুদ্ধে লড়তে তিনি নতুন উদ্যোগ চালু করেছেন। গত ছয় বছর ধরে এই সম্প্রদায়ের মানুষ যেন তাঁদের সঠিক মেধা ও অভিব্যক্তির প্রকাশ এবং কর্পোরেট জগতে কর্মসংস্থানের সুব্যবস্থা করার জন্য আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন-মাসাইমারার মেয়েরা
বিপুল সম্ভাবনার সম্ভার
আমরা বেঁটে নই, আমরা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি মাটির মানুষ; আমাদের উচ্চতা খাটো নয়, আমাদের ওপরওয়ালা ভূমির কাছাকাছি সৃষ্টি করছেন ঐশ্বরিক গতি ও নির্ভুলতার জন্য; ভূপৃষ্ঠ থেকে আমাদের দৈর্ঘ্য কম, তাই আমরা সবসময় উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাই এবং জীবনে একটি মহান দৃষ্টিকোণ বজায় রাখি; আমরা জানি জীবন ছোট, তাই আমরাও! এই মজবুত আদর্শপৃক্ত দিশা তাই নিজের পরিচয় দেন, ‘আই অ্যাম দিশা পান্ডিয়া— অ্যান আর্টিস্ট অ্যান্ড অ্যাথলিট, এ ডিজাইনার, এ ফোটোগ্রাফার, এ রিয়েলিস্ট, অ্যান্ড এ ডোয়ার্ফ।’ আমি শিল্পী ও ক্রীড়াবিদ, একজন নকশাকার, একজন চিত্রগ্রাহক, একজন বাস্তববাদী, এবং একজন বেঁটে মানুষ।
বিশেষভাবে সক্ষম এইসব বেঁটে মানুষেরা স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের মানুষদের চেয়ে কেবল উচ্চতায় ছোট; তবে আর পাঁচটা সম-বয়স্ক স্বাভাবিক মানুষের মতোই তাঁদের ‘ইন্টেলিজেন্ট কোশেন্ট’ একই। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়; তা না হলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই এদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর দৈর্ঘ্য ছোট হলেও প্রাকৃতিক বিচার, বুদ্ধি, মেধা, সৃজনশীলতা, পর্যবেক্ষণ, কিংবা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা প্রায় সমকক্ষ। তবুও এঁদের কম উচ্চতার কারণে সমাজের প্রায় সর্বস্তরেই এঁদের অনাচার এবং অবিচারের সম্মুখীন হতে হয়; প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই মেলে তাচ্ছিল্য, উপহাস, পরিহাস, প্রত্যাখ্যান, আর না হয় পক্ষপাতদুষ্টতার বিতাড়ন। অধিকাংশ সামাজিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে এঁরা ব্রাত্য বললেই চলে। এত কিছু সত্ত্বেও তাঁরা কিন্তু সমানভাবে আমাদের মতো স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের মানুষদের সঙ্গে প্রতিক্ষেত্রেই তাঁদের অন্তর্নিহিত প্রতিভার সাহায্যে টক্কর দিতে প্রস্তুত!
আরও পড়ুন-কবে জুড়বে শিয়ালদহ-এসপ্ল্যানেড, বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ, ফের জটিলতা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রােয়
দিশা পান্ডিয়া এমনই একজন অদম্য প্রতিভার ইস্তাহার। তাঁর বাবা-মা দু’জনেই খর্ব। বাবার জীবনের লড়াই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। দিশা তাঁর জীবনে মাত্র সতেরো বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, কিন্তু তাঁর বাবা তারও অনেক বেশিবার লাঞ্ছিত। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁর বাবা তাঁকে সবসময় মনে করিয়ে দেন, আমেরিকান তরুণ অভিনেতা জনাথন ডেভিসের সেই বিখ্যাত কথাটি, ‘তুমি আমায় দেখে হাসো কারণ আমি সবার চেয়ে আলাদা, কিন্তু আমি তোমায় দেখে হাসি কারণ তোমরা সবাই এক।’ নিজেকে আলাদা হিসেবে প্রতিপন্ন করাটাই যেন একমাত্র লক্ষ্য ছিল এই দুই বাপ-বেটির!
নিম্নবিত্ত দিশার বাবা কোনওরকমে লটারি বিক্রি করে সংসার যাপন করছিলেন; কাজের জন্য বহু দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন, কাজ মেলেনি, তবে মিলেছে নিপীড়ন ও বিতাড়ন; তবুও হাল ছাড়েননি। শেষমেশ নিজের ইচ্ছাশক্তির উপর ভর দিয়েই নিজের স্ত্রী-সন্তানের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজ তিনি নিজের কাজের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন ঠিকই, তবে একদিন তিনি নিজেই অন্যদের কাজ দেবেন। তাঁর এই ‘জব সিকার’ থেকে ‘জব ক্রিয়েটার’-এর লড়াইয়ে তিনি আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিলেন। দিশার বাবার দরিদ্র লটারি বিক্রেতা থেকে মধ্যবিত্ত রিয়েল এস্টেট বিজনেসম্যান হয়ে ওঠার জার্নিটা তাঁকে সত্যিই জীবন নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল।
দেখতে বেঁটে দিশা তাঁর বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়া ডোয়ার্ফিজম নামে একটি জিনগত শারীরিক সমস্যা নিয়েই তাঁর জন্ম, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর হাত পায়ের দৈর্ঘ্য খুব ছোট। তবে বাবা-মায়ের চেষ্টায় দিশা সবসময় তাঁর মধ্যে নিহিত প্রতিভা উন্মেষ ঘটানোর চেষ্টা করেছে। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রির পড়াশোনার সময় পরীক্ষায় ফেল করলে তাঁর মা-বাবা খুব দুঃখ পান এবং তাঁর পর থেকেই দিশা অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখতে শুরু করেন। নিবিড় চেষ্টায় তিনি প্রথমে একটি সংস্থায় সাধারণ ডিটিপি অপারেটরের কাজে যোগদান করেন; পরবর্তীতে তিনি বিসলেরি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে ক্রিয়েটিভ বিভাগেও চাকরি করেন। তিনি সহজানন্দ লাইফ সায়েন্স বলে একটি কোম্পানির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে যোগদানের পর, কর্মজগতে প্রায় বারো বছরের অভিজ্ঞতা-সহ বর্তমানে রিচস্ ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্রিয়েটিভ হেড।
আরও পড়ুন-প্রয়াত পরিচালক দেবকুমার বসু, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
তবে দিশা এখানেই থেমে থাকেননি; ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে কোনও এক ট্রেন যাত্রায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল বিখ্যাত আন্তর্জাতিক প্যারা ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার মিঃ মার্ক ধার্মাই-এর। তিনি দিশাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য এবং তিনি দিশা-সহ আরও বেশ কয়েকজন প্যারা অ্যাথলিটকে মুম্বইয়ের একটি জিমখানাতে প্রশিক্ষণ দিতেন।
দিশা জুটি বাঁধেন মিস রুহি শিঙ্গাড়ের সঙ্গে এবং ২০১৯-এ ব্যাডমিন্টন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৯’-এ শর্ট স্ট্যাচিওর ক্যাটেগরিতে দিশা উইমেন্স ডাবলসে সোনা জেতেন। ওই একই প্রতিযোগিতায় মার্কের সঙ্গে মিক্সড ডাবলসে রুপো জেতেন। এরপরেই তিনি টেড টকস এবং আরও একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শোয়ে আমন্ত্রণ পান এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন; সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জীবনের প্রতি দৃষ্টিকোণ বদলে যায় এবং তিনি আগামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন।
সমাজকল্যাণমুখী অভিনব উদ্যোগ
ডোয়ার্ফ বা বেঁটে মানুষদের সাধারণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক অধিকার এবং কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর আমেরিকার একটি বিখ্যাত সংস্থা ‘দ্য লিটল পিপল অব আমেরিকা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী যে সকল মানুষদের দৈহিক উল্লম্বিক উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি বা তার কম, তাঁদের বেঁটে মানুষ বা ডোয়ার্ফ বলে চিহ্নিত করা হয়। এঁরা উচ্চতায় অনেক ছোট হওয়ায় এঁদের শরীরের নমনীয়তা কম এবং সব ধরনের পরিকাঠামোর জন্য এঁরা ফিট নন তাই কর্মক্ষেত্রে এঁদের নিয়োগ এবং নিয়োগ-পরবর্তী অভিযোজনে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়। এইসব কারণগুলো এড়াতেই এঁদের সচরাচর কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয় না।
দিশা এই সমস্যা মেটাতে, ওঁদের জন্য চিকিৎসা-সংক্রান্ত সুবিধা দিতে এবং বৈবাহিক জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে তিনি। পাকাপোক্তভাবে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘দ্য লিটল পিপল অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি নতুন অভিনব উদ্যোগ চালু করেছেন। দক্ষিণ ভারতে এইরকম দুটি আঞ্চলিক স্তরীয় সংস্থা থাকলেও ভারতবর্ষে এটিই প্রথম জাতীয় উদ্যোগ। এখনও পর্যন্ত এই উদ্যোগের সঙ্গে প্রায় ৬৫০ জন সভ্য যুক্ত হয়েছেন। দিশা, তাঁর সংস্থা এবং বিভিধাতা নামে একটি সংস্থা মুম্বইয়ের জুহু ক্লাবে এবছর গত মার্চ মাসে একটি ‘ডাইভার্সিটি জব ফেয়ারে’র আয়োজন করেছিল, যেখানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, আর্মি ভেটেরানস— যে-সমস্ত মেয়েরা কাজ হারিয়েছেন, অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারস এবং আর্থসামাজিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়ারা ওই কর্মসংস্থান মেলায় উপস্থিত ছিলেন। বিভিধাতা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর রত্নাপ্রভা সাবলে জানান, তাঁরা এইভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দক্ষতা, প্রশিক্ষণ, ও নির্দেশিকার মাধ্যমে ওঁদের বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। তাঁরা আশা করেন, যদি এই মহৎ উদ্যোগে সমাজের ওইসব মানুষেরা একটি সুন্দর জীবন পায়।
আরও পড়ুন-৫ কোটি টাকা না দিলে বাবার থেকেও খারাপ পরিণতি হবে সলমনের! ফের হুমকি-বার্তা
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান
বিশেষ করে প্রাণীকুলের সদস্যদের মধ্যেই এই ডোয়ার্ফিজম বা বামনত্ব বা বেঁটে দৈর্ঘ্যের বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। এইসব বামন প্রাণীদের ধড় বা স্কন্ধ, গ্রীবা, হাত, পা এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ছোট হয়। সাধারণত চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যদি কোনও প্রাণীর দৈর্ঘ্য ১৪৭ সেন্টিমিটার বা তার কম হলেই তাঁদের বেঁটে বলে চিহ্নিত করা হয়, সমগ্র পৃথিবীতে এই জাতীয় বেঁটে মানুষদের গড় উচ্চতা হল প্রায় ১২০ সেন্টিমিটার। এদের দৈহিক বৃদ্ধি অনিয়মিত হলেও বুদ্ধিমত্তা এবং আয়ু স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের মানুষদের মতোই।
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বিরল বামনত্ব অর্জিত অর্থাৎ কোনও প্রকার অসুখবিসুখ বা দুর্ঘটনা এবং বংশগত অর্থাৎ জিনের পরিব্যক্তি— উভয় কারণেই হয়ে থাকে। কিছু লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীদের সুরাহা প্রদান করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্যার মূল কারণ হল শরীরে বৃদ্ধি-হরমোনের ঘাটতি। তবে এই বামনত্ব মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী যেমন ঘোড়া, কুকুর, এবং নেকড়ে প্রভৃতিদের মধ্যেও দেখা যায়। কম উচ্চতার কারণে ছোটবেলায় অনেককে মজার পাত্র এবং বয়স্ক বেলায় বাছবিচারের শিকার হতে হয়!
গ্রোথ হরমোনের অভাবে হয় পিট্যুইটারি ডোয়ার্ফিজম, আবার গ্রোথ প্লেটের অস্বাভাবিকতার জন্য স্কেলিটাল ডোয়ার্ফিজম হয়ে থাকে। আবার এন্ডোক্রাইন ডিজ-অর্ডারের জন্য প্রোপোর্শনেট ডোয়ার্ফিজম, তবে ‘এস এল সি ২৬এ২’ নামে একটি জিনের মিউটেশনের জন্য হয় অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়া ডোয়ার্ফিজম। এটি বংশগত এবং এই বিরল রোগেই দিশা আক্রান্ত।
আরও পড়ুন-১৮ অক্টোবর থেকে শুরু উপাচার্য বাছাইয়ের কাজ
বৈচিত্র্য, ন্যায়, এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি
ডোয়ার্ফিজম আক্রান্ত ব্যাক্তির হাত, পা, কপাল, মেরুদণ্ড, লিভার, কিডনি, ও অন্ত্রের নানা সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক অসুস্থতাও দেখা যায়। পরিলক্ষিত বামনত্বের প্রায় ৭০ শতাংশই অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়ায় আক্রান্ত। জন্মদাতা পিতা-মাতার জিনোমে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ‘অল্টার্ড অ্যালিল’ বা ডিএনএ দ্বারা গঠিত একপ্রকার জিনের ভিন্নতা, উপস্থিত থাকায় অপত্যের শরীরের বামনত্ব দেখা যায়। ভারতবর্ষের বেঁটে মানুষদের সঠিক সংখ্যা ঠিক জানা না গেলেও, মোটামুটি আড়াই কোটি বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের মধ্যে, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ডোয়ারফ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় দু-লক্ষ বেঁটে মানুষ আছেন আমাদের দেশে। গোটা বিশ্বে প্রায় ৬ লক্ষ ৫১ হাজার ৭০০ জন ডোয়ার্ফ রয়েছেন; তবে বিরল অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সার্বিকভাবে প্রায় ১৫-৪০ হাজারের মধ্যে একজন।
সহস্র বিপত্তির মধ্যেও একটি কথা বারবার বলতে হয় সেটা হল সামাজিক ন্যায় ও তার প্রতিষ্ঠা। দৈর্ঘ্যে মাত্র ৫৭ সেন্টিমিটার হলেও আমরা ভুলে যাইনি ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্ক খর্বকায় ব্যাক্তিত্ব গুল মোহাম্মদের কথা; আমরা চোখের সামনে দেখছি মাত্র ৩০ বছর বয়সি ২ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ভারতীয় বেঁটে অভিনেত্রী জ্যোতি আম্গের লিভিং লেজেন্ড হওয়ার দৃষ্টান্ত; তেমনই দিশা পান্ডিয়ার নয়া উদ্যোগ। সম্প্রতি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট মানুষ হিসেবে নাম লেখালেন ২০ বছর বয়সি ইরানের আফসিন ইসমাইল ঘাদেরজাদে, জানা গেছে তাঁর উচ্চতা না কি মাত্র ৬৫.২৪ সেন্টিমিটার। আমরা সবাই সারা পৃথিবীতে বেঁটে মানুষদের অসম্ভব প্রতিভা ও প্রাপ্তির সাক্ষী, তবুও ব্যবহারিক জনজীবনে আমরা তাঁদের আমাদের সমকক্ষ মানতে নারাজ। তাঁদের পদে পদে বৈষম্য ও বিতাড়নের শিকার হতে হয়। বর্তমানে ভারতবর্ষ তথা বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর জয়জয়কার; যখন একজন বেঁটে মানুষ এবং একজন স্বাভাবিক দৈর্ঘ্যের মানুষের একটি ভোটের মূল্য সমান, তখন সমগ্র শিক্ষিত জাতির এটা নৈতিক দায়িত্ব যে তাঁদেরকেও সমাজের সকল স্তরে সমমর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করা। আজ থেকে আমাদের সবাইকে সেই পথে এগিয়ে যেতে হবে একটি সুন্দর এবং সুস্থায়ী মানবতার খাতিরে।