প্রতিবেদন : ফের মুখ পুড়ল বিজেপির। লখিমপুর খেরিতে আন্দোলনরত কৃষকদের উপর গাড়ি চালিয়ে দিয়ে খুন করার অপরাধে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির গুণধর পুত্র আশিস মিশ্রের জামিন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। এই সিদ্ধান্ত যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন তো বটেই, মোদির সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলার জন্যেও যথেষ্ট। খোদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সোমবার মন্ত্রী-পুত্রের জামিন খারিজ করতে গিয়ে যে সব কড়া পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন, তা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের কাছে আইএএস আইপিএস চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে আশিস মিশ্রকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। জানিয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে৷ গত ১০ ফেব্রুয়ারি এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান আশিস। সেদিন উত্তরপ্রদেশে প্রথম দফা ভোট ছিল৷ এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান কৃষকরা৷ আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিল, আশিস মিশ্র অতি প্রভাবশালী৷ তাঁর বাবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ জামিন বাতিল হওয়া উচিত৷ জেলের বাইরে থাকলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন৷
আরও পড়ুন-মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন কমিটি তৈরি হল
এমনকী তাঁদের প্রাণনাশের ভয়ও রয়েছে৷ কৃষকদের সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট এদিনের নির্দেশ দিতে গিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট৷ শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় বিষয়কে অগ্রাহ্য করে ভিত্তিহীন পর্যবেক্ষণের উপর জামিনের নির্দেশ দিয়েছিল৷ হিংসার শিকার যাঁরা হয়েছেন তাঁদের বক্তব্য শোনা হয়নি৷ যদিও আশিস মিশ্রের সামনে ফের জামিনের আবেদন করার পথ খোলা আছে৷ তবে সেই আবেদনের শুনানি হবে পৃথক বেঞ্চে৷ এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ আর ঠিক এখানেই প্রশ্ন উঠছে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে। কারণ, এলাহাবাদ হাইকোর্ট কীভাবে এক গুরুতর অপরাধে অপরাধীকে ছেড়ে দিতে পারে, তা নিয়ে বিস্ময় ছিল সব মহলেই।
আরও পড়ুন-রাজ্যে এবার বিপুল কর্মী নিয়োগের সুযোগ, রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্তগ্রহণ
আশিসের আদালতের এই নির্দেশে খুশি লখিমপুরকাণ্ডে নিহত কৃষকদের পরিবার৷ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের প্রতি ন্যায়বিচার করেছে৷ বিচারব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁরা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালত বুঝিয়ে দিয়েছে, দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে৷
২০২১ সালের ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরে আশিস মিশ্রের গাড়ি পিষে দেয় আন্দোলনকারীদের। মারা যান নক্ষত্র সিং, দলজিৎ সিং, লভপ্রীত সিং ও গুরবিন্দর সিং নামে চার কৃষক৷ সোমবার আদালতের নির্দেশের পর নিহত নক্ষত্র সিংয়ের ছেলে জগদীপ সিং বলেন, আদালতকে ধন্যবাদ জানাব৷ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আদালতকে শুধু বলব, বাকিরা যাঁরা জামিন পেয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক৷ বিচারব্যবস্থার উপর আমাদের ভরসা আছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছেলে হোক বা অন্য কেউ, দোষ করলে আদালত শাস্তি দেবে৷ শীর্ষ আদালত শহিদ পরিবারের সঙ্গে ন্যায়বিচার করেছে৷