প্রতিবেদন : বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বৃহস্পতিবারই ‘এক দেশ, এক ভোট’ (one nation one election) প্রস্তাব পাশ হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। কিন্তু এই প্রস্তাব কোনওভাবেই মানছে না তৃণমূল। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমাদের দেশে এটা হতে পারে না। কারণ এটা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। কিন্তু তারপরও মোদি সরকার এটা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। মুখ খুলেছেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন তিনি বিজেপির এক দেশ, এক ভোট (one nation one election) নিয়ে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন লোকসভার স্পিকারকে। বলেন, ওদের ভাঁওতা আমি আগেই ধরে ফেলেছিলাম। দু’বছর আগে মহারাষ্ট্রে সর্বভারতীয় স্পিকার সম্মেলনে একদিন ওঁরা সরাসরি না বললেও ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট-এর আদলে একটি রেজলিউশন এনেছিল। লোকসভার স্পিকারকে বলেছিলাম, আপনারা যে রেজলিউশন এনেছেন সেটা তো ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট থিওরির দিকেই ইঙ্গিত করছে। কিন্তু লোকসভার স্পিকার বলেন, আপনি বিষয়টি বুঝতে পারছেন না, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কিন্তু আজ দেখছি, সেদিন যে আশঙ্কা করেছিলাম সেটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংবিধান থেকে তাঁরা এর জন্য কতটা অনুমোদন পাবেন, সংবিধান-বিশেষজ্ঞরাই ভাল বলতে পারবেন।
তৃণমূল কংগ্রেসও এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। এর পিছনে একাধিক কারণও তুলে ধরেছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তৃণমূলের যুক্তি— প্রথমত, ভারতের মতো দেশে এই এক দেশ এক ভোট একটি অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিক ধারণা। তৃণমূল কোনও অবস্থাতেই একে সমর্থন করবে না। আমাদের যে পরিকাঠামো, গঠন, ফেডারেল স্ট্রাকচার ও যে পরিস্থিতি তাতে এটা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, প্রতিটি রাজ্যের আলাদা ইতিহাস, আলাদা ভূগোল, আলাদা সংস্কৃতি ও আলাদা নির্বাচনী রসায়ন রয়েছে। সে-সবগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে এসে একদিনেই সব জায়গায় নির্বাচন— এটা কোনও ভাবেই বিজ্ঞানসম্মত হতে পারে না।
আরও পড়ুন- ধর্ষণ-খুন : ৬০ দিনে শাস্তিদান
তৃতীয়ত, জনগণ ভোট দেয় ৫ বছরের জন্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকার ভাঙাগড়া হয়ে যায় ৫ বছরের আগেই। কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলে দেওয়ার নজির আছে বিজেপির। তখন ওই রাজ্যে ফের নির্বাচন করতে হয়। তখন এটা কীভাবে সম্ভব? আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচনের একাধিক উদাহরণ রয়েছে। ফলে আমরা কোনও অবস্থাতেই এই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এগোতে দিতে পারি না।
চতুর্থত, এখানে লোকসভা, বিধানসভা ও পুরসভার নির্বাচনের প্যাটার্ন আলাদা, অভিমুখ আলাদা। লোকসভার ভোটে একজন নাগরিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে ভোট দেন। বিধানসভা ও স্থানীয় স্তরের ভোট আলাদা। এক্ষেত্রে যদি সব ধরনের ভোট একই দিনে করা তাহলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে অভিমুখ নিয়ে বিভ্রান্ত তৈরি হবে।
পঞ্চমত, এটা শুরু করা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। কারণ, কোথা থেকে শুরু করবেন। যখনই শুরু করুন না কেন সেখানে তো একটা সরকার রয়েছে। সবাই তো মেয়াদ সম্পূর্ণ করেনি। তাহলে সেখানে কী করা হবে!