শিক্ষক দিবসের আগে আজ, বৃহস্পতিবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া হল শিক্ষারত্ন সম্মান। সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে ২০২৫ সালের কৃতী ছাত্রছাত্রীদেরও। সেখানেই উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আরও একবার বাংলা ভাষার মাহাত্ম তুলে ধরলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ইংলিশ মিডিয়ামের পড়ুয়াদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ”এখানে অনেকেই হয়ত ইংলিশ মিডিয়ামের পড়ুয়া আছেন যাদের আমার ভাষা বুঝতে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু তবু আমি তাদের বলব যে যেই ভাষায় পড়াশোনা করুক, নিজের মাতৃভাষা ভোলা যাবে না। নিজের অস্মিতাকে ভুলবেন না, মা কে ভুলবেন না। আম্মাকে ভুলবেন না। উচ্চশিক্ষায় ইংলিশ প্রয়োজন আমি জানি, যতই অন্য ভাষা পড়ুন অসুবিধা নেই। সব ভাষা শিখুন কিন্তু যার যা মাতৃভাষা সেটা পড়ুন। জল তো জলই হয়, কেউ বলে পানি, কেউ বলে ওয়াটার। তফাৎ এটুকুই। একজন মানুষের সাথে আরেকজনের রক্তের পার্থক্য হয় না। যখন কোন রক্তদান শিবির হয়, তখন সবাই রক্ত দেয়। এরপর সেই রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে চলে গেলে আমরা আর খবর রাখি না কোন ধর্মের রক্ত আমাদের শরীরে যাচ্ছে। মনে রাখবেন ভেদাভেদ নয়। বিশ্ব আপনারা সেদিনই জয় করতে পারবেন যেদিন নিজের মনকে উন্নত করতে পারবেন। মগজটাকে আমরা মরুভূমির মত তৈরী করব না। আমাদের মগজটা বটবৃক্ষের মত, খোলা আকাশ হতে হবে। মেধা যদি সমাজ না গড়ে, মানুষ না তৈরী করে, মানবিকতা না থাকে তাহলে জানবেন জীবনের উন্নততর প্রচেষ্টায় বাধা তৈরী হচ্ছে।” এরপরেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের লাইন উদ্ধৃত করে সকলকে বলেন, ”জীবনের জয়গান গাও। আপনারা এগিয়ে চলুন। মাথা উঁচু করে চলুন। আমরা সবসময় বলব আমাদের শক্তি দাও, আমরা একসাথে চলবো, বন্ধুত্ব করব।”
আরও পড়ুন-জিএসটি সিদ্ধান্তের পর হু হু করে বাড়ছে সেনসেক্স-নিফটি!
শিক্ষারত্ন সম্মানপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধু পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান নয়, নৈতিকতা আর মূল্যবোধও শেখান ছাত্রছাত্রীদের। তাহলেই আগামী প্রজন্ম সঠিক পথে এগোবে।” স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের বার্তা অনেকের কাছেই এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ”আমি কোনও ভাষার বিরোধী নই। কিন্তু, বিভেদের বিরোধী আমি। আমি সবার মধ্যে ঐক্য চাই। বিবিধের মাঝে মিলন আমাদের মধ্যেই রয়েছে।” একাধিক রাজ্যে বাঙালি অস্মিতায় আঘাত আনা হচ্ছে। ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি তকমা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এরই প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন স্তরে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনও তিনি বলেন, ”আমরা যখন স্কুলে কলেজে যাই, আমরা কি কারোর পদবি দেখে মিশি? তারা নিজেদের একটা পরিবার তৈরী করে নেয়।সেই মেধাই আসল মেধা যা মানুষের জীবন তৈরী করে, যে পৃথিবীকে তৈরী করে, যে মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত মানুষকে জাহির করে, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। শুধু এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন থাকলেই হয় না, মেধা যদি সমাজ, মানুষ না তৈরী করে, মানবিকতা না তৈরী করে তাহলে উন্নততর মানুষ তৈরী করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”
আরও পড়ুন-
উল্লেখ্য, এদিনের অনুষ্ঠানে সেরা ১২টি স্কুলকে শিক্ষা ও খেলাধুলায় উৎকর্ষের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। মোট ৭৩ জন শিক্ষক শিক্ষারত্ন সম্মান পান, যাঁদের মধ্যে ৩৯ জন স্কুলশিক্ষক, ২১ জন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ১৩ জন ভোকেশনাল ও আইআইটি-সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্ত শিক্ষক। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শিক্ষকদের হাতে মানপত্র, শাল, ঘড়ি, স্মারক, বই ও ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সকল শিক্ষককে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “যাঁরা সমাজ গড়েন, যাঁরা শিক্ষালয় গড়েন, তাঁদের আমি সর্বোচ্চ সম্মান করি।”