প্রতিবেদন : চলে গেলেন দিলীপ দোশি। ৭৭ বছর বয়সে। সাগরপারে থাকতেন কয়েক দশক ধরে। কিন্তু সুযোগ পেলেই মাটির টানে চলে আসতেন দেশে। আরও পরিষ্কার করে বললে, কলকাতায়। সৌরাষ্ট্রে জন্মালেও ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় সবটাই খেলেছেন বাংলার হয়ে। নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলা দলের। আপাদমস্তক বাঙালিই হয়ে গিয়েছিলেন দোশি। তাঁর প্রয়াণে নিঃস্ব হল বঙ্গ ক্রিকেট।
সোমবার লন্ডনে দোশির মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগজনিত কারণে। এই লেখার সময় পর্যন্ত বিস্তারিত খবর আসেনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে, ভারতীয় দল যখন ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলছে, তখনই চলে গেলেন তিনি। ৩৩টি টেস্ট খেলে ১১৪টি উইকেট নিয়েছেন দোশি। ছ’বার পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। খেলেছেন ১৫টি একদিনের ম্যাচ। নেন ২২টি উইকেট। ইকনমি রেট ৩.৯৬। সুনীল গাভাসকরের মুখে বহুবার শোনা গিয়েছে সুভদ্র সতীর্থের কথা।
আরও পড়ুন-পেশাকে অপমান, সুকান্তর বিরুদ্ধে রাজপথে সোনাগাছি
অনেক দূরে থাকলেও বাংলার ক্রিকেটের সমস্ত খবর রাখতেন বাঁহাতি স্পিনার। কলকাতার লোক পেলে খোঁজ নিতেন এখানকার খবরের। আস্তে কথা বলতেন। ব্যবহার ছিল অত্যন্ত মার্জিত। দোশি কখনও গলা তুলে কথা বলেননি। কলকাতায় থাকলে নেমে পড়তেন ক্লাব ক্রিকেটে। বাড়ি থেকেই ধবধবে সাদা শার্ট-প্যান্ট পরে এসে সোজা মাঠে নেমে পড়তেন। যে গাড়িতে আসতেন, সেটাও দুধ সাদা অ্যাম্বাসাডার। টিপটপ পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। দোশির লাঞ্চ আসত বাড়ি থেকে।
ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলেছেন ওয়ারউইকশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে। পরে সেখানেই পাকাপাকিভাবে থেকে যান। ছেলে নয়ন বাবার মতোই ক্রিকেট খেলেছেন। খেলতেন সৌরাষ্ট্র ও সারের হয়ে। মৃত্যুকালে দোশি রেখে গেলেন ছেলে নয়ন, মেয়ে বিশাখা ও স্ত্রী কালিন্দীকে। পুরো নাম ছিল দিলীপ রসিক লাল দোশি। জন্ম রাজকোটে ১৯৪৭-এর ২২ ডিসেম্বর। ১৯৭৯-এ চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল দোশির। শেষ টেস্ট খেলেছেন বেঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, ১৯৮৩-র সেপ্টেম্বরে।
আরও পড়ুন-ক্লাইভের বাড়ি সংস্কারের আর্জিতে মামলা
সম্প্রতি বোর্ডের বার্ষিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এসেছিলেন দোশি। তাঁকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালেও দেখা গিয়েছিল লর্ডসে। যখন খেলতেন, তখন সতীর্থরা খুব তাঁর পিছনে লাগতেন। কেউ ব্যাট লুকিয়ে রাখতেন। কেউ বুটে পেস্ট ভরে দিতেন। পাক ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ একবার ব্যাট করছিলেন। দোশি বোলার। খেলার ফাঁকে মিয়াঁদাদ বারবার তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলেন, তেরা রুম নাম্বার কিতনা। খানিকটা বিরক্ত হয়েই দোশি পাল্টা জানতে চেয়েছিলেন, কী ব্যাপার? রুম নাম্বার জেনে কী করবে? মিয়াঁদাদের উত্তর ছিল, তেরা রুমমে যাকে পিটুঙ্গা। এতটাই কৃপণ বোলিং করতেন যে, ব্যাটাররা বিরক্ত হয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি কখনও বিরক্ত হননি।
যে ২৩৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে খেলেছেন, তাতে নিয়েছেন ৮৯৮টি উইকেট। বেশিরভাগই এসেছে বাংলা ও পূর্বাঞ্চলের হয়ে খেলে। দোশি পরে ইংল্যান্ডে চলে গেলেও তাঁর লেগাসি আজও ছড়িয়ে রয়েছে বঙ্গ ক্রিকেটে। ভালমানুষ ক্রিকেটারের উদাহরণ ছিলেন তিনি। ইডেনের প্রতিটি ঘাস দোশিকে সেভাবেই মনে রেখেছে।