প্রতিবেদন : আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এবার জোড়া মামলা দায়ের করল কলকাতা পুলিশ। হাসপাতালে বেলাগাম আর্থিক অনিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে নির্যাতিতার নাম বলার অভিযোগে সন্দীপের নামে দুটি মামলা রুজু করেছে লালবাজার। সোমবারই সদ্য-প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের আমলে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছিল পুলিশ। এবার সন্দীপের নামে জোড়া মামলা দায়ের করে তাঁকে তলব করেছে লালবাজার। বুধবার দুপুর ১২টায় তাঁকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁরা তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর কেটে গিয়েছে সাতদিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কিছুই প্রকাশ্যে আনেনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তে সিজিও কমপ্লেক্সে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। গত ৫ দিন ধরেই তাঁকে দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে। রোজ সকালে বাড়ি থেকে সিজিও এবং গভীর রাতে সিজিও থেকে বাড়ি, গত কয়েকদিন ধরে এটাই সন্দীপের রুটিন। তার মাঝে এবার তাঁকে ডেকে পাঠাল কলকাতা পুলিশও।
আরও পড়ুন-নাবালিকার যৌন আচরণ, কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট
আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকেই তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ২০২১ সালের পর থেকে আরজি করে সন্দীপের জমানায় একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন সেখানকার চিকিৎসকরা। সেই ঘটনার তদন্তে সিট গঠনের পাশাপাশি এবার সন্দীপের নামে মামলা দায়ের করে তাঁকে তলব করেছে লালবাজার। ঘটনার তিনদিন পর সমস্ত নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছিলেন সন্দীপ। তারপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঘটনার বিষয়ে বলতে গিয়ে একাধিকবার প্রকাশ্যে নির্যাতিতার নাম উচ্চারণ করেন সন্দীপ। যদিও কোনও ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার নাম ও ছবি প্রকাশ্যে আনার ক্ষেত্রে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। তাই এই বিষয়েও সন্দীপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে গোটা শহর ও রাজ্য জুড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাগরিক আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক জলঘোলা করার চেষ্টা করছে বিজেপি ও সিপিএম। মঙ্গলবারও স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের নামে রাজপথ বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করে বিজেপির যুব সংগঠন এবিভিপি। যদিও পুলিশ কড়া হাতে বিরোধীদের সেই চক্রান্ত ভেস্তে দেয়।
আরও পড়ুন-সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
এদিকে সাতদিন ধরে আরজি করের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু একসপ্তাহ পরেও সেই তদন্তে অগ্রগতির কোনও খবর নেই। কলকাতা পুলিশের হাতেই ঘটনায় একমাত্র গ্রেফতার অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কেই জেরা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। কিন্তু নতুন করে এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেননি তাঁরা। তদন্তে সিবিআইয়ের এই শ্লথ গতি ক্ষোভ তৈরি করছে বিভিন্ন মহলে। মঙ্গলবার সকালে তদন্তের খাতিরে আরজি করে গিয়ে চিকিৎসকদে তরফে সেই ক্ষোভের মুখে পড়েন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এদিকে এদিন আরজি করের ঘটনায় সুয়োমোটো মামলা দায়ের করে হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ২৩ অগাস্টের মধ্যে সিবিআইকে তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।