ডবল ইঞ্জিন আর বেরোজগার, জিএসটির নামে লুঠেরার সরকার

বিজেপি শাসিত রাজ্যে শুধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি হয়। চাকরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ কথা বলেন না। সেসব রাজ্যের মানুষেরাই বলছেন, বিজেপিকে ভোট দিয়ে তাঁরা ভুল করেছেন। লিখছেন অনির্বাণ সাহা

Must read

কেমন আছে ডবল ইঞ্জিন চালিত রাজ্যগুলো? সেখানে কি আচ্ছে দিন এসে গেছে?
হাঁড়ির একটা চাল টিপলেই যেমন বোঝা যায় পুরো হাঁড়ির ভাত সেদ্ধ হয়েছে কি না, তেমনই একটা প্রতিক্রিয়ায় বোঝা যাচ্ছে কেমন আছে বিজেপি শাসিত রাজ্যসমূহ, কেমন চলছে সেখানকার সরকার ও প্রশাসন। গত রবিবারের একটি খণ্ড চিত্র।

আরও পড়ুন-সবে মিলি করি কাজ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের সামনের ফুটপাথে ফ্লেক্স পেতে কয়েকজন বসে রয়েছেন। বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজেছেন তাঁরা। উত্তরপ্রদেশ থেকে এসএসসি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিতে এসেছেন তাঁরা। সকলেই উচ্চশিক্ষিত। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি সাহিত্যের এক গবেষকও রয়েছেন।
তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে শুধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি হয়। চাকরি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে কেউ কথা বলেন না। এখানে তো তাও পরীক্ষা হচ্ছে।’’ একটু থেমে তাঁর সংযোজন, ‘‘সারা দেশেই তাই।’’ কিন্তু বিজেপিকে তো আপনারাই এনেছেন। গবেষকের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘ভুল করেছি।’’
কিন্তু বাইরের রাজ্যে তো বাংলা বললেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বাঙালিরা। এই আবহে কলকাতায় আসতে ভয় করেনি? এলাহাবাদের কৌশাম্বীর, জৌনপুর, গাজিয়াবাদের থেকে আসা মানুষজন একসঙ্গে বললেন, ‘‘এখানে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কলকাতার মানুষ খুবই সহযোগিতা করেছেন।’’ উচ্চশিক্ষিত এই যুবকদের কাছে শুধুই ডিগ্রি রয়েছে। পকেটে নেই টাকা। বাড়ি থেকে হাজারদুয়েক টাকা নিয়ে এসে স্টেশনেই রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। এবার যাদবপুর বিদ্যাপীঠে পরীক্ষায় বসবেন।
ওঁদের ঠিক পাশেই বড় ব্যাগ, ছোট কন্যাসন্তানকে নিয়ে বসে ছিলেন একজন ডক্টরেট ভদ্রলোক। বলছিলেন, ‘‘আমি বিশাখাপত্তনমে পড়াই। স্ত্রী পরীক্ষা দেবেন। তাই মেয়েকে নিয়েই আসতে হল।’’ মেয়ে কিন্তু তখন একমনে ছবি এঁকে চলেছে। আবার দিনকয়েক আগে গোরখপুর থেকে এসেছিলেন আর একজন নবম-দশমের পরীক্ষা দিতে। তিনি পরীক্ষা দিতে এসেছেন এদিনও। বলছিলেন, ‘‘পরীক্ষার সঙ্গে কলকাতাও ঘোরা হল। এখানকার মানুষজন খুবই ভাল।’’
এর পরেও কি আর বলতে হবে, কেমন আছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মানুষেরা। তাঁদের চাকরি আর শিক্ষার হাল হকিকত কেমন।
আর এদিকে পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা কেমন। সেটা বুঝতেও হাঁড়ির একটা চাল টিপে দেখা যাক। তুলে ধরা যাক একটা জেলার চিত্র।
বাঁকুড়া জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের পাশে দাঁড়াচ্ছে বীরভূম জেলা কৃষি বিপণন দফতর। অভাবী বিক্রি রুখতে এবার সরাসরি হিমঘর থেকে ‘রেডি আলু’ কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষি বিপণন দফতরের তরফে জেলার নানা প্রান্তের চাষিদের থেকে আলু কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে খবর, শুধুমাত্র প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের থেকেই রেডি আলু কেনা হবে। যাতে কোনওভাবেই তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে না পড়েন।

আরও পড়ুন-পিজির ‘অনন্য’র উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী

কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তাঁরা শুরু থেকেই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেইমতো হিমঘরে মজুত রেডি আলু সরাসরি চাষিদের থেকে ন্যায্য মূল্যে কিনে নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে সুফল বাংলার মাধ্যমে সেই আলু স্কুলের মিড-ডে মিলে পাঠানো হচ্ছে চাষিদের হাত ধরে। এছাড়াও শহর থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ স্টলেও সেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন, তেমনই সাধারণ মানুষও ন্যায্য দামে আলু পাবেন। প্রায়শই কৃষিকাজ শেষে আলুর সঠিক দর না পেয়ে চাষিদের একাংশের হতাশা দেখা যায়। বহু ক্ষেত্রে অভাবী বিক্রির মুখেও পড়তে হয়। সমস্যা সমাধানে এবছরই প্রথম জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনা হয়েছিল। বোলপুর উত্তর অজয় কৃষক সমবায় হিমঘর ও নলহাটি সিএডিপি সমবায় হিমঘর চত্বরে সুফল বাংলার তরফে আলু কেনা হয়েছিল। সেইসঙ্গে চাষিদের দাবি মেনে জেলার নানা প্রান্তে অস্থায়ী শিবিরের মাধ্যমেও আলু কেনা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি ১০ টাকা করে মূল্য পেয়েছিলেন চাষিরা। এবার দ্বিতীয় ধাপে চাষিদের থেকে আলু কেনার প্রক্রিয়া শুরু হল। কৃষি বিপণন দফতরের নয়া এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ১৫ জন প্রান্তিক চাষি উপকৃত হয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। হিমঘরে মজুত আলুর বন্ড ছাড়াতে গিয়ে অনেক সময় চাষিদের বিপাকে পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে অনেক সময় তাঁদের ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। সেই ক্ষতি রুখতেই এবার হিমঘরে মজুত রেডি আলু কেনা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৯১০ কুইন্টাল আলু কেনা হয়েছে। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত এই পদ্ধতিতেই সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনার প্রক্রিয়া জারি থাকবে।
ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের জনৈক চাষির অভিজ্ঞতা, এবছর আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। তবে সরকারিভাবে আলুর বন্ড কিনে নেওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি। এতে অনেকটাই সুবিধা হল।
দুটো ছবি পাশাপাশি রাখুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন। নিজেরাই বুঝতে পারবেন, কেন পশ্চিমবঙ্গে ফের একবার চাই মা মাটি মানুষের সরকার। বুঝতে পারবেন কেন বিজেপিকে এরাজ্য থেকে বিদায় করা দরকার।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সরকার বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার উপর যুক্তিসঙ্গত জিএসটি হার চালু এবং হ্রাস করেছে। তার ফলে বর্তমান কর কাঠামো মোটামুটি ভাল এবং কিছুটা সরলও হয়েছে। গত আট বছরে একাধিকবার তৃণমূল কংগ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটি ব্যবস্থার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এমতাবস্থায় জানাতেই হবে মোদি-শাহদের, আজ যদি টুথপেস্ট, কেশতেল, মাখন, শিশুদের ব্যবহার্য ন্যাপকিন, পেনসিল, নোটবুক, ট্র্যাক্টর, স্প্রিংক্‌লার প্রভৃতির উপর ৫ শতাংশ জিএসটি ভাল হয়, তাহলে গত আট বছরে কেন তা খারাপ ছিল? কেন আট বছর যাবৎ দেশবাসীকে মাত্রাতিরিক্ত কর গুনে যেতে হয়েছিল?
কর হার কমানোটা সূচনা মাত্র। এরপর আরও অনেক কিছু করতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে জনগণের কাছে। তৈরি থাকুন।

Latest article