অলোক সরকার : ভরবিকেলে ক্লাব হাউসের সামনে যে ভিড় জমেছিল, তাঁরা পরিষ্কার ধোঁকা খেলেন। জনতা জানতই না যে এই ম্যাচে তারকাদের প্রবেশপথ ১৭ নম্বর গেট। কোভিড বড় বালাই! এই গেটে পা দেওয়া মানে আপনি সোজা বায়ো-বাবলের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। সেখান থেকে বি-১ গ্যালারির নিচে টানেল-সদৃশ রাস্তা দিয়ে সটান মাঠে। তারপর সেখান থেকে ঘুরে ঢুকতে হবে ভারত-নিউজিল্যান্ড ড্রেসিংরুমে।
যে ধোঁকার কথা হচ্ছিল, সেটা আসলে রাহুল দ্রাবিড়কে নিয়ে। বিকেলে ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরকে নিয়ে তিনি যে ইডেনের পিচ দেখে গেলেন, জনতা প্রায় ঠাহরই করতে পারল না! রোহিতদের নতুন কোচ সাধারণ একটি গাড়ি করে এসে ১৭ নম্বর গেট দিয়ে সোজা চলে গেলেন মাঠে। নাড়ি টেপার মতো পিচ দেখলেন। খোঁজ নিলেন শিশিরের। কথা বললেন ইডেন কিউরেটরের সঙ্গে। তারপর হুস করে বেরিয়ে গেলেন হোটেলের দিকে। জনতা তখনও ক্লাব হাউসের মেন গেটের সামনে তারকা দর্শনের অপেক্ষায়।
দু’বছর বাদে ক্রিকেট ফিরছে ইডেনে। তবে কোভিড আবহে নানাবিধ নিয়ম-কানুন সামলে। যেমন গ্যালারি থেকে আপনি রোহিত-রাহুলদের দেখতে পারেন, কিন্তু কাছে যাওয়ার উপায় নেই। সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া মজা করে বললেন, ‘‘আরে, আমরাই তো ওদের কাছে ঘেঁষতে পারছি না।” ঘটনা হল এই ম্যাচে নতুন কোচ ও অধিনায়ককে সংবর্ধনা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল সিএবির। কিন্তু হচ্ছে না। বোর্ডের এসওপি-তে এসব আটকে যাচ্ছে। বলা হয়েছে একটা ফুলের তোড়াও নাকি দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন :স্পেশ্যাল ট্রেন শিয়ালদহ-হাওড়ায়
তবে মনে হয় না বহির্জগতের এসব কাণ্ড-কারখানা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামানোর দরকার আছে রোহিতদের। ওঁদের সামনে এখন বড় করে ঝুলছে ৩-০! না হলে শহরে পা দিয়েই দ্রাবিড় কেন ছুটে যাবেন ইডেনে। কেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়কে ডেকে জানতে চাইবেন, বল ঘুরবে? দাঁড়ান, আরও আছে। দ্রাবিড় খোঁজ নেন শিশিরেরও। সুজন তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, গত কয়েকদিনে মাত্র একদিনই বেশি শিশির পড়েছে। না হলে এটা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। তবু ম্যাচের দু’ঘণ্টা আগে ইডেনকে শিশিরের প্রভাব-মুক্ত রাখতে কেমিক্যাল স্প্রে করা হবে। ঘাসের উপর দড়ি ঘুরিয়ে শিশির মোছারও ব্যাবস্থা থাকছে। সুজন বলছিলেন, ‘‘আশা করছি পিচ ভালই হবে। ভাল রান আছে এখানে। ১৬০-এর বেশি তো হবেই।”
ক্রিকেটাররা এদিন শেষ দুপুরে রাঁচি থেকে কলকাতায় পা দিয়ে সোজা ঢুকে পড়েন হোটেলে। কোভিড প্রোটোকলে এর বেশি কিছু করারও নেই। এ এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে কমেন্টেটরদের জন্য ক্লাব হাউসে গ্রিন করিডর করতে হয়েছে। আম্পায়ার-ম্যাচ রেফারি বসবেন মাঠেই। সাংবাদিকদের আসতে হবে দুটি ভ্যাকসিন নেওয়া সার্টিফিকেটের হার্ড কপি নিয়ে। গ্যালারিতে সত্তর শতাংশ লোকের বেশি বসার অনুমতি নেই। তবু তাতেই সন্তুষ্টি বঙ্গ ক্রিকেটের। ‘কোভিড হারিয়ে জিতল ক্রিকেট’ গোছের কিছু একটা রবিবাসরীয় ম্যাচে শোনা যেতেই পারে! এদিকে, সিএবি বলছে ফুল হাউস। বহুদিন বাদে ক্রিকেট-জ্বরে আক্রান্ত শহর। সেই চেনা ছবি, বটতলায় টিকিটের খোঁজ। দাদা, একটা টিকিট হবে? আইপিএলে অভ্যস্ত ইডেন এবার টি-২০-র মজা লুটতে প্রস্তুত। এসব তারই ইঙ্গিত।