অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : ভারতের ১৩৫টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বিদ্যুতের চাহিদার ৭০ শতাংশ সরবরাহ করে। কিন্তু তাদের কাছে ৩ দিনেরও কম কয়লা মজুত আছে। ফলে উৎসবের মরশুমে, তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের সম্মুখীন দিল্লি, পাঞ্জাব, রাজস্থান সহ ভারতের অনেক রাজ্য ।রাজ্যগুলির কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে দুই-তিন দিনের জন্য কেবল কয়লার মজুত রয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা অনুসারে, কয়লা খনি থেকে ১০০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে সমস্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে কমপক্ষে ৩০ দিনের জন্য কয়লার মজুত রাখা উচিত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কয়লার মজুত তলানিতে এসে ঠেকেছে ।রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছে কয়লার সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আবেদন করেছে, অন্যথায় তাদের ব্ল্যাক আউট পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে । তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রকের মতে, সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়লা মন্ত্রণালয় প্রতি সপ্তাহে দুবার কয়লার মজুত পর্যালোচনার জন্য দুটি আন্ত -মন্ত্রণালয় গ্রুপ গঠন করেছে।কিন্তু এই কয়লা সংকটে বড় কেলেঙ্কারির আশংকা করছেন অনেকেই। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ টুইট করে বলেছেন, ‘হঠাৎ আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের সংকটের কথা শুনছি। একটি বিশেষ প্রাইভেট কোম্পানি কি এই সংকট থেকে আরও বেশি ধনবান হয়ে উঠবে ? কিন্তু কে তদন্ত করবে?
আরও পড়ুন-মহা পঞ্চমীতেও ৩৬৬ জন এলেন তৃণমূল কংগ্রেসে
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, কেন্দ্র যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার ঘাটতি দ্রুত সমাধান না করে তাহলে রাজধানী বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সম্মুখীন হবে। রাজধানী দুই দিনের মধ্যে ব্ল্যাকআউট পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। দিল্লির পাওয়ার সাপ্লাই প্লান্ট গুলোতে ১ মাসের স্টক থাকত, যা এখন ১ দিনে নেমে এসেছে। সমস্ত প্ল্যান্ট ইতিমধ্যে ৫৫ শতাংশ ধারণক্ষমতায় চলছে। বাওয়ানায় দিল্লির একটি ১৩০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। দিল্লির নিজস্ব কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নেই এবং এটি কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল।
রাজস্থান সরকার ইতিমধ্যেই বলেছে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসের কারণে, ১০ টি বড় শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহে কাটছাট করা হবে। কিছু এলাকায় ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ । সেন্ট্রাল গ্রিড রেগুলেটরের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম ৭ দিনেই বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে যে ঘাটতি হয়েছে তা সারাদেশে সারা বছরের ঘাটতির ১১.২ শতাংশ।কয়লার অভাবে বিহার ও ঝাড়খন্ডেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন-ঢাক ছাড়া পুজো হয় না, করোনা আবহে কেমন আছেন ঢাকিরা?
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন। জগন মোহন বলেছেন , এক মাসে অন্ধ্রের বিদ্যুতের ব্যবহার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি, অন্ধ্রের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২০ রেক কয়লার বরাদ্দ দাবি করেছেন। আর্জেনকো কয়লা প্ল্যান্ট ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ ধারণ ক্ষমতায় কাজ করছে। তার কাছে মাত্র ১-২ দিনের কয়লা মজুত আছে। সম্প্রতি রাজ্যে কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাঞ্জাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাঞ্জাব স্টেট পাওয়ার কর্পোরেশনের মতে, রোপার, লেহরার মতো প্লান্টগুলোতে কয়লার মজুদ আছে মাত্র ৫ দিনের মতো । রাজ্যে ৯ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদা রয়েছে, অক্টোবরে অস্বাভাবিক গরম পড়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। নাভা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মাত্র ২ দিন এবং তালওয়ান্দিতে ১.৩ দিনের কয়লা মজুত আছে ।