হাতে আর মাত্র ৭৬ দিন। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর (Durga puja)। সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ দেবীর বোধন, মহাষষ্ঠী। ইতিমধ্যেই পুজোর প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করে দিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা। এই আবহে আজ পুজোর কমিটিগুলির সঙ্গে আজ বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
আরও পড়ুন-ডাইনিং টেবিল থেকে পড়ে মৃত্যু শিশুকন্যার, গিরিশ পার্কে চাঞ্চল্য
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিকাল ৫টে থেকে এই বৈঠক শুরু হয়। বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনকে নিয়ে এই বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। এ বছর পুজোর অনুদান বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাথে ক্লাবগুলির ফায়ার লাইসেন্স সহ সব কর মকুব করল রাজ্য সরকার। পুজো কমিটি পিছু গতবার ৮৫ হাজার দেওয়া হয়েছিল তবে এবার সেটা থেকে বেড়ে হল ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। ঘোষণা করার আগে তিনি বৈঠকে উপস্থিত সকল পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের জিজ্ঞেস করেন, এ বার কত? উত্তরে কেউ বলেন ৯০ হাজার, কেউ বা এক লক্ষ। সবাইকে চমকে দিয়ে তাঁর ঘোষণা এবারে অনুদান এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা। গতবার বিদ্যুতের ছাড় দেওয়া হয়েছিল ৭৫ শতাংশ। এবার ছাড় দেওয়া হয়েছে ৮০ শতাংশ। চলতি বছর কার্নিভাল হবে ৫ অক্টোবর।২, ৩ ও ৪ তারিখের মধ্যে বিসর্জন পর্ব শেষ করতে হবে।
আরও পড়ুন-জট কাটিয়ে ৭ অগাস্ট জয়েন্টের ফল প্রকাশ
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভিড় এড়াতে আলাদা এন্ট্রি-এক্সিট করুন পুজো কমিটিগুলি। একটা এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্ট রাখলে অসুবিধা হবে। প্রতিটি মণ্ডপে বিদ্যুতের কানেকশন, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা নিয়ম মেনে করতে হবে। টিভিতে আমায় দেখাবে, প্রথম হব বলে এমন কিছু বানালাম তাতে সারা কলকাতা স্তব্ধ হল একটা পুজোতে এটা যাতে না হয় দেখতে হবে। সুজিত বসু আছেন, শ্রীভূমির পুজোর জন্য এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে গেল, সেটা যেন না হয়। বাসস্ট্যান্ড, ফেরীঘাট, রেলস্টেশন কভার করতে হবে যাতে মানুষের অসুবিধা না হয়। ড্রোন, কুইক রেসপন্স টিম, সিসিটিভি সব ব্যবস্থা রাখতে হবে। মেয়েদের নিরাপত্তা, বয়স্ক মানুষদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। মিডিয়াকে বলবো কেউ যেন পদদলিত না হয়। ভিড় এর কম্পিটিশন দেখবেন না। মানুষ দেখান।
আরও পড়ুন-যাদবপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার বাংলাদেশি মহিলা
পুলিশের উদ্দেশে এদিন তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের মধ্যে সম্বন্বয় রক্ষা করতে হবে। কোনও রকম ট্রাফিক মুভমেন্টে অসুবিধা না হয়। এখন জেলাগুলোও টক্কর দিচ্ছে। জেলার পুজো দেখতে গেলে ভাবতে হবে ওরা এত সুন্দর পুজো করছে। আমি ওই সময় কলকাতা পুজোর পাশাপাশি জেলার পুজোগুলি লক্ষ্য রাখি। তাদেরও ভিড় বাড়ছে। ওদের থিম থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। এতে আমারও জ্ঞান বাড়ে। প্রচুর পুজো হয়। দুর্গাপুজোর সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বাংলায় প্রায় ৪৫ হাজারের বেশি দুর্গাপুজো ক্লাবগুলি করে। পুজো এবার আগে এসেছে। আগাম সিদ্ধান্ত নিলে অঘটন ঘটবে না। প্রশাসন সহায়তা করবে। মোবাইল পারট্রলিং টিম, কুইক রেস্পন্স টিম থাকবে। পুলিশ ও স্টেট সুরক্ষার টিম ২৪ ঘন্টা নজরদারিতে থাকবে। ভলেন্টিয়ার রাখতে হবে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক মানুষ আসে। মেট্রো যেন ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ায় যাতে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারে। হাসপাতাল ও এম্বুলেন্স তৈরী রাখতে হবে।
এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সমস্ত ধর্মের গুরুরা। ছিলেন সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন, দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ-সহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এই মঞ্চেও বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের প্রতি অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের পুজোর সময় নতুন জামাকাপড়ের ব্যবস্থা যাতে ক্লাবগুলি এবং প্রশাসনের তরফে করা হয়। নাম না-করে খোঁচা দিয়েছেন বিজেপিকেও। রাজ্যে দুর্গাপুজো-সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মীপুজো হয় না বলে যারা বলেছিল, তাদের ব্যঙ্গের স্বরে বলেছেন, এখানে সবাই সবটা জানে। ঘরে ঘরে সরস্বতী পুজো-লক্ষ্মীপুজো হয়।