ছোটদের বড় পত্রিকা ‘চির সবুজ লেখা’। প্রকাশিত হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত শিশু কিশোর আকাদেমি থেকে। প্রধান সম্পাদক অর্পিতা ঘোষ। দ্বিমাসিক এই পত্রিকার শারদীয়া ২০২৩ সংখ্যা বেরিয়েছে। শিশু কিশোরদের তো বটেই, বড়দেরও মন ভাল হতে বাধ্য। চমকপ্রদ লেখক-তালিকা। পত্রিকাটি পুরোপুরি রঙিন। অসাধারণ সব লেখার সঙ্গে পাতায় পাতায় আকর্ষণীয় ছবি। হাতে নিয়ে প্রথমেই বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হয়। তারপর তো পড়ার পালা।
আরও পড়ুন-দেবশিল্পী
শুরুতেই ‘ফিরে পড়া’। সুকুমার রায় লিখিত, সত্যজিৎ রায় চিত্রিত ‘কলিকাতা কোথা রে’। এই লেখা চিরকালের। চিরনূতন। মনকে দোলা দিয়ে যায়।
জয় গোস্বামী লিখেছেন দীর্ঘ কবিতা ‘গোঁসাইজির সাতকাহন’। কবিতার মধ্যে বুনে দিয়েছেন অফুরান মজা।
পড়ুয়াদের বিশেষ ছোটগল্প উপহার দিয়েছেন সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। শিরোনাম ‘ধুর! মরবি কেন? জীবন কি অত সস্তা?’ অনেকেরই তাঁর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচয় নেই। এই সংখ্যায় ছাপা হয়েছে তাঁর গল্পের পাণ্ডুলিপি। যা বিশেষ প্রাপ্তি।
আছে গল্পসল্প গল্পমালা। ছোট্ট ছোট্ট গল্প। লিখেছেন বলরাম বসাক, প্রচেত গুপ্ত, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়, দীপান্বিতা রায়, রূপক চট্টরাজ, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, তৃষ্ণা বসাক, চৈতালী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অল্প কথায় বলা গল্পগুলো মনের পাতায় দোলা দিয়ে যায়।
জয়া মিত্রের কবিতায় গল্প ‘বিরিক্ষ পাঁচালি’ অনবদ্য। ময়ূরী মিত্রর নাটিকা ‘এক যে ছিল লাকি’ বেশ মজার। স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রক্ত শপথ’ এবং সৈকত মুখোপাধ্যায়ের ‘আজনবি গলির বজ্জাতি’ বড়গল্প দুটি দুই রকমের। এক দমে পড়ে ফেলা যায়।
আরও পড়ুন-গণপতি বাপ্পা
আছে কয়েকটি ছোটগল্প। লিখেছেন মৌ দাশগুপ্ত, বাণী বসু, কমল চক্রবর্তী, দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর মিত্র, সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, হেমেন্দুশেখর জানা, রতনতনু ঘাটী, দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী, সঞ্জয় কর্মকার প্রমুখ। গল্পগুলো নানা স্বাদের, ভিন্ন বিষয়ের।
সংখ্যাটি সমৃদ্ধ হয়েছে কয়েকজন খ্যাতনামা কবির কবিতায়। বিশেষভাবে মনকে নাড়া দিয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়, রত্নেশ্বর হাজরা, শ্যামলকান্তি দাশ, মৃদুল দাশগুপ্ত, দীপ মুখোপাধ্যায়, যশোধরা রায়চৌধুরী, পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, অভীক মজুমদার, অভীক বসু, পার্থপ্রতিম আচার্য, অনির্বাণ ঘোষ, আনসার উল হক, প্রদীপ আচার্য, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, রামকিশোর ভট্টাচার্য। বদলেছে ছোটদের কবিতার ভাষা, লেখাগুলো পড়লেই বোঝা যায়।
আরও পড়ুন-সূর্যের কাছাকাছি আরও একধাপ
স্মৃতির জানালায় ‘বইবন্ধু’কে নিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করেছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিস্মৃত বাঙালি সারদারঞ্জন রায়। তাঁকে নিয়ে ‘বাংলার ক্রিকেটের জনক’ লিখেছেন প্রসাদরঞ্জন রায়। ফিরে পড়া বই-এ লীলা মজুমদারের ‘সব ভুতুড়ে’র উপর রাখী মিত্রর আলোকপাত যথাযথ। বিজ্ঞানে মানসপ্রতিম দাসের ‘পেস্ট্রিতে প্যাঁচানো প্রোটিন’ লেখাটি আকর্ষণীয়। আছে আরও কয়েকটি বিভাগ এবং উৎকৃষ্ট কিছু লেখা। সবমিলিয়ে জমজমাট একটি শারদ উপহার। প্রচ্ছদশিল্পী দেবব্রত ঘোষ।
দাম ১৫০ টাকা।
প্রকাশিত হয়েছে ‘আনন্দকানন’ পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা। অগ্নিশ্বর সরকারের সম্পাদনায়। গত কয়েক বছর ধরেই ছোটদের এই পত্রিকাটি আছে পাঠকদের পছন্দের তালিকায়। এই সংখ্যাটি সেজেছে নানা স্বাদের লেখায়।
শুরুতেই স্মৃতিকথা। ‘আমার স্কুলের প্রথম দিন’-এর কথা শুনিয়েছেন ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়। আন্তরিক একটি লেখা। বিশেষ রচনায় প্রচেত গুপ্ত লিখেছেন, ‘শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি কি সাহিত্যপাঠের প্রয়োজন আছে?’ লেখাটি খুবই মূল্যবান। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও অবশ্যপাঠ্য।
আরও পড়ুন-যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ১৩৬ পড়ুয়ার যোগ
প্রবন্ধে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর ‘নিরামিষ মাছ’ কৌতূহলী পাঠকদের মনের খিদে মেটাবে। আছে আরও কয়েকটি প্রবন্ধ। শুভব্রত বসুর ‘প্রমিথিউস’, অভীক মুখোপাধ্যায়ের ‘শেষ ক্রুসেড’, সমুদ্র বসুর ‘হিমালয়ের রহস্যময় ফুল’ পড়তে ভাল লাগে।
স্মৃতির পাতা থেকে বিভাগে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘রামবাবু এবং কানাইকুণ্ডু’। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখার শিরোনাম ‘দাদুর ইঁদুর’। দুটি লেখাই শরতের ঝলমলে রোদ্দুরের মতো। পড়ামাত্রই মনের মধ্যে আনন্দের জন্ম দেয়। বড়গল্প নিয়ে হাজির অভীক সরকার। শিরোনাম ‘ন্যাপলাদার পাগলা গারদ’। লেখাটি মজার। টানটান। ভাষা ঝরঝরে। কোথাও হোঁচট খেতে হয় না।
এ ছাড়াও আছে নানা রঙের কয়েকটি গল্প। মন ছুঁয়ে যায় জয়ন্ত দে-র ‘হুলো এবং রিবেরাল’, সন্মাত্রানন্দর ‘সিংহ, গজরাজ আর অজগরের গল্প’, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘এসব গল্প গুগলে নেই’, চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের ‘ডিংকির নতুন বন্ধু’, জয়তী রায়ের ‘আলোর কৌটো’ কমলেশ কুমারের ‘পুরস্কার’, কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাজাহান ও নীলকান্তমণি’, মনজিৎ গাইনের ‘মহাকালবাবার আতঙ্ক’। কোনও গল্প হাসায়, কোনও গল্প ভালবাসায়, কোনও গল্প মনকে নিয়ে যায় দূরে, কল্পনার জগতে।
আরও পড়ুন-লিগ জয়ের হ্যাটট্রিকে নজর মহামেডানের
ছন্দছড়ার ঢেউ তুলেছেন পবিত্র সরকার, স্মরণজিৎ চক্রবর্তী, অভীক বসু, দীপ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
বিজ্ঞান বিভাগে ‘তিন মানুষের দেশ’-এর কথা লিখেছেন কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবাশিস কর্মকারের লেখার শিরোনাম ‘ভারতের বিজ্ঞানচর্চা তথা মহাকাশ অভিযান’। দুটিই অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা। খেলা বিভাগে ‘উম্বলডনের নতুন রাজারাণী’র সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন তাপস বাগ। এ ছাড়াও আছে ভ্রমণ, মজার পাতা, কার্টুন, জানা অজানা, স্বাস্থ্য, সাক্ষাৎকার, ছোটদের বিভাগ। সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি শারদ উপহার। দাম ২৩০ টাকা।