মেক্সিকোর মাটিতে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া আটপৌরে সজ্জায় উমা

Must read

ইশিতা মাইতি, গুয়াদালাহারা (মেক্সিকো): সুদূর মেক্সিকোতেও শারদোৎসবের আমেজ। গুয়াদালাহারা দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোগে এটিই এই শহরের একমাত্র দুর্গাপুজো। তবে এই পুজোর বিশেষত্ব হল এখানে বাঙালিদের পাশাপাশি স্থানীয় মেক্সিকানদেরও সমান উপস্থিতি ও উৎসাহ। পুজোর আয়োজন থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সর্বত্র এখানকার প্রবাসী বাঙালিরা দুর্গাপুজোয় মেতে থাকেন। অন্য ভাষা-সংস্কৃতির উৎসবকেও সাদরে আপন করে নেন। প্রবাসে বসে পাঁজি মেনে পুজো সম্ভব হয় না। তাই বেছে নেওয়া হয় কোনও একটি উইকএন্ড। এবার আমাদের পুজো ১৩ অক্টোবর রবিবার। এখন দিনরাত এক করে চলছে প্রতিমা আর মণ্ডপ সাজানোর কাজ— সাদা ফুল, সাদা চাঁদমালা এবং আঞ্চলিক মৃৎশিল্পীদের ভাস্কর্য দিয়ে। পুজো কমিটির সদস্য ইপ্সিতা, সৌরভ, অনিন্দিতা, ইন্দ্রনীল, উৎসব আর আমি এখন পুজোর কাজে চূড়ান্ত ব্যস্ত। দম ফেলার সময় নেই। মেক্সিকোর আকাশে শরতের মেঘের উপস্থিতি না থাকলেও পুজোর সময় চারপাশের আয়োজন ঘিরে মনে মনে আমরা সাজিয়ে তুলি একটুকরো বাংলাকে। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে এখানকার দুর্গাপুজো। মেক্সিকান শিল্পীর হাতেই তৈরি আমাদের সেরামিকের দুর্গাপ্রতিমা। ২০১৭ সালে প্রতিমার একটি ছবি এঁকে মেক্সিকান শিল্পীদের দেওয়া হয়। সেরামিক শিল্পীরা নিখুঁত হাতে তৈরি করেন সেই প্রতিমা। ওই প্রতিমার বিসর্জন হয় না। তিনি রয়েছেন এক প্রবাসী বাঙালি পরিবারে। সেখানে হয় নিত্যসেবা। অন্যান্যবারের মত এবারও প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। তবে এবছর আমরা সাবেকি পুজোর আয়োজন করছি। মেক্সিকোর স্থানীয় শিল্পীর দ্বারা নির্মিত এই দুর্গা প্রতিমা যেন অন্য এক সৌন্দর্য্য বহন করছে। গোলাপী শাড়িতে মোড়া ঝকঝকে উমার মূর্তি, বিদেশের মাটিতে ঠিক যেন, মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো। পুজোর এক মাস আগে থেকে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। মেক্সিকোর প্রবাসী বাঙালিরা নিযুক্ত থাকেন এই পুজোর জোগাড়ে, এবছরও তার ব্যতিক্রম নেই। সপ্তাহ শেষে তারা জমায়েত হন এক জায়গায়, লক্ষ একটাই পুজোর আয়োজন, প্রতিমার সাজসজ্জা, মন্ডপ সাজানোর পরিকল্পনা, ইত্যাদি। শেষ বেলার কাজ চলছে জোরকদমে। মহড়া চলছে ধুনুচি নাচেরও। এর মধ্যেই অগ্রিম খুশির খবর, গ্লোবাল দুর্গা পূজা এক্সেলেন্স আওয়ার্ড ২০২৪ এর ‘সোশ্যাল আওয়ারনেস ওভারসিজ – বেস্ট ইনিশিয়েটিভ ইন হালিস্কো, মেক্সিকো’ ট্রফি উঠে এলো আমাদের হাতে। আমাদের মতে দুর্গাপূজোর মূল উদ্দেশ্য হল সবাইকে একত্রিত করা, মেলবন্ধন ঘটানো। এবং এই বিশ্বাসকেই বজায় রেখে আমরা প্রত্যেক বছর স্থানীয় মেক্সিকানদের নিয়েই পুজোর আয়োজন করি, প্রতিমা শিল্পী থেকে শুরু করে আমাদের সংকৃতিক অনুষ্ঠানেও সিংহভাগ অংশগ্রহণ মেক্সিকানদের। আমাদের এতদিনের প্রচেষ্টা এবার স্বীকৃতি পেল এই পুরস্কারের মধ্যে দিয়েই। জয় মা দুর্গা।

আরও পড়ুন: আইএফএ কর্তাদের ইস্তফা দাবি মোহনবাগানের

Latest article