প্রতিবেদন : বাংলার পাঁচ দিনের দুর্গাপুজোই কি উৎসব-অর্থনীতিতে বিশ্বের সেরা? এক সমীক্ষা চালিয়ে এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
বাংলা ও বাঙালির কাছে দুর্গোৎসবের আনন্দ ও একাত্মতার কোনও বিকল্প নেই৷ বাঙালির সর্বাপেক্ষা বড় উৎসব এই দুর্গাপুজো। গোটা একটা জাতি মেতে ওঠে এই উৎসবে৷ তাহলে এই দুর্গাপুজোই কি উৎসব-অর্থনীতিতে বিশ্ব-সেরা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে কিছুদিন আগে হাত মিলিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দফতর। আর পুজো-অর্থনীতি নিয়ে সমীক্ষার ওই রিপোর্টেই ব্রিটিশ কাউন্সিল জানিয়েছে, বাংলার জিডিপি-র প্রায় ২.৫% -এর কাছাকাছি সৃষ্টি হয় দুর্গাপুজো থেকেই। যার পরিমাণ প্রায় ৩২,৩৭৭ কোটি টাকা। এই অঙ্কটি একাধিক দেশের মূল অর্থনীতির থেকেও বেশি বলেই উল্লেখ করা হয়েছে কাউন্সিলের ওই রিপোর্টে৷
ব্রিটিশ কাউন্সিলের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩৬ হাজারেরও বেশি পুজো সংগঠিত হয়। এর মধ্যে কলকাতার সরকারি নথিভুক্ত পুজো আয়োজক ক্লাবের সংখ্যা প্রায় ২৫০০-র কাছাকাছি৷ এছাড়াও হয় আবাসন বা সোসাইটির পুজো৷ রাজ্যে শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা আয়োজিত পুজোর সংখ্যা প্রায় ১৫০০-র কাছাকাছি।
ব্রিটিশ কাউন্সিল দাবি করেছে, এই ধরনের জটিল পদ্ধতির সমীক্ষা এর আগে দেশে হয়নি৷ এই সমীক্ষার নেতৃত্বে ছিল লন্ডনের ম্যারি ইউনিভার্সিটি৷ আর সমীক্ষার কাজে সব ধরনের সাহায্য করেছে খড়গপুর আইআইটি৷
বাংলার অর্থনীতিতে দুর্গাপুজোর প্রভাবকে উত্তর ভারতের দীপাবলি, দক্ষিণের পোঙ্গল, পশ্চিমের গণেশ পুজো এবং দেশের উত্তর-পূর্বের বিহু-র সঙ্গে তুলনা করে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন-উত্তরপ্রদেশের বিশ্রাখে প্রদীপহীন অরন্ধন, রামই চক্ষুশূল
প্রসঙ্গত, বহু বছর ধরেই বাংলার দুর্গোৎসবের অর্থনীতি নিয়ে যুক্তিনির্ভর আলোচনার দাবি করেছিলেন অর্থনীতিকরা৷ আগ্রহ দেখান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ ব্রিটিশ কাউন্সিলও মনে করে যে, দুর্গাপুজোর মতো আর কোনও জন-উৎসবে এই পরিমাণ বিপুল টাকার লেনদেন সম্ভবত হয়না৷ দুর্গাপুজোর সঙ্গে শুধু বাংলার অর্থনীতিই যুক্ত নয়, জড়িয়ে রয়েছে বহু মানুষের কর্মসংস্থান, রুটি-রুজি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বার বার ঠিক এই কথাই বলেছেন৷
ব্রিটিশ কাউন্সিলের রিপোর্ট বলেছে, শুধু প্রতিমা প্রস্তুতিতেই ২৬০-২৮০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়৷ বিজ্ঞাপন বাবদ ৫০৪ কোটি টাকা এবং খাওয়াদাওয়া তথা বাজার ইত্যাদিতে ব্যবসা হয় প্রায় ২৮৫৪ কোটির। আলো, স্পনসরশিপ, পাবলিকেশনের মতো ক্ষেত্রের ব্যবসার তথ্যও জানানো হয়েছে রিপোর্টে। উল্লেখ করা হয়েছে দুর্গাপুজোর সময় পর্যটন বাবদ ব্যবসার তথ্য। ফি বছর মা-দুর্গার আরাধনাতেই রাজ্যে লক্ষ্মীর বাড়বাড়ন্ত হয়। কিন্তু, মা ঠিক কতখানি আর্থিক কৃপা করলেন, তার হিসাবই তুলে ধরা হয়েছে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত ব্রিটিশ কাউন্সিল ও পর্যটন দফতরের এই যৌথ রিপোর্টে।