সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : কাশীর দুর্গাপুজো বললেই বাঙালির মনে পড়ে যায় শশীবাবুর ঠাকুর তৈরির কথা। আসলে বাঙালি বেনারস বা কাশীর কিছু চিনুক না চিনুক, ঠাটারিবাজার আর রাম ভাণ্ডার চেনে, সৌজন্যে সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর সৃষ্টি ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। এই বাজারের কাছেই চৌখাম্বা। আর সেখানেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মাসির বাড়ি। সেই বাড়িতেই একসময় মহাধুমধাম করে দুর্গোৎসব হত। এই বাড়ির উঠোনে আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে এক বালকের পা পড়ত। যিনি আগামীর দেশনায়ক সুভাষ। কালের গহ্বরে আজ সেসব গিয়েছে হারিয়ে।
আরও পড়ুন-মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় এইমসে ভর্তি হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
উনিশ শতকের শেষের দিক। উত্তর কলকাতা দত্ত বাড়িতে মেয়েদের বিবাহের তোড়জোড় চলছিল। ছয় বোন প্রভাবতী, গুনবতী, রূপবতী, সত্যবতী, উষাবতী এবং নিশাবতী। বড়দিদি প্রভাবতীর বিয়ে হয় কটকের জানকীনাথ বসুর সঙ্গে। পালা আসে রূপবতী দেবীর। সম্বন্ধ হয় উপেন্দ্রনাথ বসুর। বিয়ে হল। সেই সূত্রেই কাশীর এই বসু পরিবারের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয়ে যায় দত্ত পরিবারের। কিন্তু সন্তানাদি রেখে অকালে মারা যান রূপবতী। তৎকালীন রীতি মেনে দিদির সংসার রক্ষায় এগিয়ে আসেন উষাবতী দেবী। ভরপুর হয়ে ওঠে চৌখাম্বার বাঙালি পরিবার। দুই মাসির বিয়ে একই পরিবারে। সেই সূত্রেই গাঁথা হয়ে গিয়েছিল সুভাষের সঙ্গে এই বাড়ির যোগ। সেই বাড়িতেই একসময় মহাধুমধামে হত দুর্গোৎসব।
বিশাল বড় ঠাকুরদালান থেকে শুরু করে সিংহাসনে দেবী মূর্তি, সঙ্গে ঢাক-ঢোল বাদ্যির বিশাল আয়োজন। প্রকাণ্ড এক রুপোর পাত বসানো কাঠের সিংহাসন। এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকতেন মহিষাসুরমর্দিনী, তাঁর বামদিকে দেবী সরস্বতী, কুমার কার্তিক, হনুমান ও শ্রীরামচন্দ্র এবং নারায়ণ শিলা। ডানদিকে দেবী লক্ষ্মী, সিদ্ধিদাতা গণেশ, মহাদেবের মূর্তি এবং আরেকটি ধাতুর সিংহাসন। মায়ের গায়ের রং সোনালি, স্বর্ণ আভরণে সজ্জিত, সঙ্গে অশ্বরূপী সিংহ।
আরও পড়ুন-গাজিয়াবাদের পুজোর থিমে এবার এক টুকরো গ্রামবাংলা
সেই বাড়ির এক জ্ঞাতি রণবিজয় বসু জানালেন, আমি ওই বাড়ির পুজো দেখতে গিয়েছিলাম ১৯৯৯ সালে। আসলে আমার মায়ের দাদুর মা ছিলেন উষাবতী দেবী, যিনি নেতাজির মাসি। সেই সূত্রেই ওই বাড়ির পুজোয় গিয়েছিলাম। সেই স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল। কথিত আছে, এই বাড়িতে সুভাষচন্দ্র বসু কিছুদিন ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে থেকেছিলেন। ২০০০ সালের পরেও কয়েক বছর নিয়ম মেনে পুজো হয়েছে। তবে কালের নিয়মে প্রাচীন বাড়িটি ভগ্নদশায় চলে যায় এবং বাড়ি রক্ষায় হেরিটেজ তকমা দেয় সরকার। তারপর থেকে বন্ধ হয়ে যায় বাড়ির পুজো। এখন যা কিছু আছে, সবই শুধু স্মৃতিতে।