ভূমিকম্পের ভূত-ভবিষ্যৎ

৮৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে তুরস্কের ভূমিকম্প। ক্ষয়ক্ষতি সীমাহীন। ওদেশের একটি জনপ্রিয় প্রবাদ রয়েছে 'জমিনই নিয়তি'। শুধু তুরস্ক নয়, সব দেশেরই নিয়তি মাটি। কারণ এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে ভূমিকম্প হয় না। ভূমিকম্প নিয়ে অনেক অজানা কথা লিখলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটমস্ফিয়ারিক সায়েন্সের অতিথি অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ ড. রামকৃষ্ণ দত্ত

Must read

তমসো মা জ্যোতির্গময়
মাটির নিচে কতক্ষণ কেটে গেছে জানা নেই! হঠাৎ কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ। স্বপ্ন দেখছেন না তো নেকলা! এ কি সত্যি! মানুষের গলার আওয়াজ। তবে কি অবশেষে ঈশ্বর পথ দেখালেন?
‘‘আপনি ঠিক আছেন? হ্যাঁ হলে একবার ধাক্কা দিন।’’ ধ্বংসস্তূপের কাছে এসে এক ব্যক্তি এই কথা বললেন।
‘‘আপনি কোন অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন?’’
হঠাৎ খানিকক্ষণ চুপ তারপর চোখে জোরালো আলো জ্বলে উঠল। আধাঁর কাটল।
উদ্ধারকারী দল খুব সাবধানে ধ্বংসস্তূপ খনন করতে শুরু করে এবং নেকলাকে দেখতে পায়। তখন পর্যন্ত তিনি ইয়াগিজকে আঁকড়ে ধরেছিলেন।

আরও পড়ুন-রাজকৃষ্ণ রায় : বাংলার প্রথম প্রফেশনাল সাহিত্যিক

প্রায় ৯০ ঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পর উদ্ধার হন নেকলা এবং তাঁর দ্বিতীয় পুত্র ইয়াগিজ।
ইয়াগিজ মানে ‘সাহসী’
তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় ইয়াগিজের বয়স ছিল মাত্র ১০ দিন। তাই উদ্ধারের পর নেকলাকে পুত্রের বয়স জিজ্ঞেস করলে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি। ২৭ জানুয়ারি নেকলা কামুজ যখন তাঁর দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন তখন নাম রেখেছিলেন ইয়াগিজ যার অর্থ হল ‘সাহসী’। সত্যি সে সাহসী তার প্রমাণ মিলল এর ঠিক দশদিন পরেই। স্থানীয় সময় ভোর ৪-১৭ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধংসস্তূপের তলায় মায়ের সঙ্গে চাপা পড়ে যায় সেও। কিন্তু জীবন্ত কবর থেকে বেঁচে ফিরে আসে আবার মায়ের কোলে। তার নামটা সেদিন জিতে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন-বিয়ের স্বীকৃতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে চার সমলিঙ্গ দম্পতি

ভয়াল ভয়ঙ্কর
নেকলা আর তাঁর পুত্র ইয়াগজি সেদিন অলৌকিকভাবে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হলেও ৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে লক্ষাধিক। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সবকিছু।
তুরস্কের গিজিয়ান্তেপ শহরের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর বন্ধ হয়নি আফটার শক। পরপর চলতে থাকে পরবর্তী কম্পনগুলি, যার মধ্যে একটি কম্পন মূল ভূমিকম্পের মতোই শক্তিশালী ছিল। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৭.৮ রিখটার স্কেল। ফল্ট লাইন বরাবর ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এটি আঘাত হেনেছে যার ব্যাপকতা ছাপিয়ে গিয়েছে পূর্বের অনেক বড়সড় ভূমিকম্পকে। ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। আসলে এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে দুশো বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কোনও ভূমিকম্প হয়নি ফলে সতর্কতার কোনও সংকেত যেমন ছিল না তেমনই ছিল না কোনও পূর্ব-প্রস্তুতি।

আরও পড়ুন-ইডির পর এবার সিবিআইয়ের তলব তেজস্বীকে

ভূমিকম্প, সুনামি, টাইফুনের দেশ
ভূমিকম্প বললেই জাপানের কথাই সবার আগে মনে আসে। আগ্নেয়গিরির উপর এই দেশটার অবস্থান। সব সময় মনে হয় এই বুঝি গেল! ভূমিকম্প, সুনামি আর টাইফুন-এর দেশ। এই তিনটেই কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রথম দুটির উৎপত্তিস্থল পৃথিবীর অভ্যন্তর, আর তৃতীয়টি বায়ুমণ্ডল। সবগুলিই জনজীবন বিধ্বংসী, কেউ কারওর চেয়ে কম যায় না। জাপানিদের কাছে রিখটার ৩ থেকে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প যেন গা-সওয়া ঘটনা। আবার এরই সহোদর সুনামি, যার জলোচ্ছ্বাসের আহ্লাদে ওদেশের মানুষ মাঝেই মাঝেই গৃহহারা হয়। ভূমিকম্পপ্রসূত এই সুনামি ২০০৪ সালের আগে ভারতের কাছে ছিল এক বিদেশি শত্রু।

আরও পড়ুন-আর্থিক মন্দার কারণে দেউলিয়া, বন্ধ হল আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক

ভারতেও বিপদ বড়
আমাদের দেশে হিমালয়-সংলগ্ন সমগ্র উত্তর ভারত ও উত্তর-পূর্ব ভারত ভূমিকম্পের নিরিখে অত্যন্ত বিপজ্জনক। যার মধ্যে আবার অসম ও হিমাচলপ্রদেশ বিশেষভাবে চিহ্নিত।
তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলায় হাজার হাজার মৃত্যু, সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি দেখে নড়ে গেছে গোটা পৃথিবী। বিপর্যস্ত সেখানকার জনজীবন। ভারতের ‘অপারেশন দোস্ত’ এই বিপর্যয়ের মোকাবিলায় বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে গোটা পৃথিবী। ঠিক সেই মুহূর্তে হিমাচলপ্রদেশে পরপর দুটি স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প হওয়ায় নিদ্রাহীন রাতযাপন করছে সেখানকার মানুষ। চরম আতঙ্কে কাটছে দিন।
কেন এত বিপর্যয়
পরিবেশ ধ্বংসের জন্যেই যে এমনটি হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য, তার সঙ্গে ধরে নেওয়া হচ্ছে এই স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পগুলি হল তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পের আফটার শক।
স্থানীয় টানেল তৈরি থেকে শুরু করে হাইড্রোপাওয়ার প্রোজেক্ট তৈরি— সবকিছুর জন্য বড় বড় মেশিনের সাহায্যে ড্রিলিং বোরিংয়ের ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠ দিনে দিনে হয়ে যাচ্ছে ভঙ্গুর। কেউ কেউ এটাকে পানীয় জলের সংকটের কারণ বলেও মনে করছেন। জলের অভাবে মানুষজনও সব ফেলে দূরে যাওয়ার কথা চিন্তা করছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে বড়সড় ভয়াল ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যেমন লাতুর (১৯৯৩), ভুজ (২০০১), কাশ্মীর (২০০৫), সিকিম (২০১১ ) ইত্যাদি।

আরও পড়ুন-মধ্যপ্রদেশেও বুলডোজারের শাসন!

ভূমিকম্প বিজ্ঞান
বিজ্ঞানের যে বিভাগে ভূমিকম্প নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা করা হয় তাকে সিসমোলজি বলা হয়। গ্রিক শব্দ, সিসমো হচ্ছে ভূমিকম্প আর লজি হচ্ছে বিজ্ঞান। এই পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয় না এমন জায়গা নেই বললেই চলে। কারণ ভূমিকম্প হল পৃথিবীর উপরিভাগে বহুকাল ধরে পুঞ্জীভূত হওয়া পৃথিবীরই অভ্যন্তরীণ শক্তির বহিঃপ্রকাশ। সারা পৃথিবীতে বেড়ে চলেছে ভূমিকম্প সেই সঙ্গে জেগে উঠছে ঘুমন্ত সব আগ্নেয়গিরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের এটাই যে, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পেতে আমরা আজও অক্ষম। ফলে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। ভূমিকম্পের প্রভাব কমানোর নানারকম বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি আছে। যার প্রয়োগ নেই। এখনও পর্যন্ত ভারতের ১০ শতাংশ আবাসনও এই নিয়ম মেনে তৈরি করা হয় না।

আরও পড়ুন-একুশতলা থেকে পড়ে OYO কর্ণধারের বাবার রহস্যমৃত্যু, শুরু তদন্ত

ভূমিকম্পের মাত্রা মাপার জন্য এখনও সারা পৃথিবীতে রিখটার স্কেল ব্যবহার করা হয়। জাপানিজ মেটিওরোলজিকাল সোসাইটির একটি নিজস্ব তীব্রতা-স্কেল আছে। মডিফাইড মেরিক্যাল্লি ইনটেনসিটি স্কেল যা থেকে রোমান XII পর্যন্ত তীব্রতায় ভাগ করা হয়েছে। তীব্রতা XII মানে সম্পূর্ণ ধ্বংস, ভূপৃষ্ঠে ঢেউ দেখা যাবে, সমস্ত প্রাণী বা বস্তুর গতি হবে ঊর্ধ্বমুখী। ভূমিকম্পের মাত্রা আর তীব্রতা আলাদা। কোনও একটি স্থানে ভূমিকম্প হলে যেখান থেকেই নির্ণয় করা হোক, তার মাত্রা একই থাকবে কিন্তু দূরত্ব অনুযায়ী তীব্রতা কমে যাবে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর জন্য, উদ্ধারকারী দলের কাছে দুর্ঘটনার স্থান, কাল, মাত্রা ও তীব্রতা জানা খুব প্রয়োজন। যেহেতু ভারতের ৬০ শতাংশ অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ, তাই তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পের আফটার শকের সম্ভাবনা নিয়ে সিসমোলজি ডিভিশন থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। হিমাচলপ্রদেশে পরপর দুটি ভূমিকম্প যার প্রমাণ।

আরও পড়ুন-চাপ সামলাতে শিখেছি : ইগা

বিপদসঙ্কুল কলকাতা ও আশপাশ
পুরানো ভূমিকম্পের তথ্য, প্রবণতা, নাশকতা ও ভৌগোলিক বিবরণের সাহায্যে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (BIS) ভারতবর্ষকে চারটি বলয়ে ভাগ করেছে। বলয় ৫-এর নাশকতা-প্রবণতা বেশি। এইভাবে বলয় ২-এর তা খুব সামান্য। এই বলয় অনুযায়ী হিমাচলপ্রদেশের মান্দি ও অসম-এর গুয়াহাটি ৫ নম্বর যা ভূমিকম্পের জন্য বিপদসঙ্কুল জায়গা। এর পরেই কলকাতা, লুধিয়ানা ও মুঙ্গের-এর স্থান। বলয় সংখ্যা অনুযায়ী একটু কম হলেও কলকাতা ও আশপাশের কেষ্টপুর, রাজারহাট ও নিউটাউন ভয়ানক বিপজ্জনক কারণ জায়গাগুলি পলিমাটি-যুক্ত। ফলে নমনীয়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষণা অনুযায়ী এইসব স্থান কাদাযুক্ত তরলের ওপর ভাসমান। এই কাদাযুক্ত স্তরটি বালি, পচা গাছপাতা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি এবং প্রায় ৮ কিমি পর্যন্ত গভীরে ছড়ানো। তাই যদি কখনও ৭ মাত্রার কাছাকাছি ভূমিকম্প হয়, তাহলে তার তরঙ্গ বা কম্পনে এই কাদা-যুক্ত স্তরটি তরলে পরিণত হয়ে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি ৪ থেকে ৫ মিটারের মধ্যে চলে আসবে এবং এতে বাড়িঘর, ফ্ল্যাট সব নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের মতো অবস্থা হবে। গবেষণা বলছে, এই অবস্থা কসবা, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দুই পার, সল্টলেক ও দমদম বিমানবন্দর সংলগ্ন জায়গাতে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিমানবন্দরের কাছেই যশোর রোডের পশ্চিম দিকে অনেক বাড়ি ১০ বছরের মধ্যেই প্রায় ৫ ফুট মাটির নিচে চলে গেছে। কিছু সংস্থা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাড়িগুলিকে আবার ওঠানোর চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন-কোচিতে ফের লকডাউন!

অপরিকল্পিত নিকাশি-ব্যবস্থা
কলকাতার পলিমাটিযুক্ত মাটিকে কর্দমাক্ত করছে পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ জলাভূমি এবং পশ্চিমে হুগলি নদী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বহুতল ফ্লাট, অ্যাপার্টমেন্টগুলির অপরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা। যদিও কলকাতায় মাটির তরলীকরণ নতুন নয়। সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পুরানো তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল বিহার-নেপাল বর্ডারের কাছে। যার মাত্রা রিখটার স্কেলে ৮-এর কিছু বেশি। এই ভূমিকম্পের জন্য উদ্ভব তরঙ্গের ফলে কলকাতার মাটি তরলীকৃত হয় এবং মেটিয়াব্রুজ, বালিগঞ্জ, রবীন্দ্রসদন, শোভাবাজার ইত্যাদি জায়গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব
ভূমিকম্পের কারণ হিসাবে প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব সর্বসম্মত। মানুষের মাথার খুলি যেমন ২২টি টুকরো দিয়ে গঠিত, তেমনি পৃথিবীর সর্বোপরি শক্ত তল লিথস্পিয়ার ১২টি বড় টুকরো ও অসংখ্য ছোট ছোট ভাঙা টুকরো দিয়ে গঠিত। এগুলিকে প্লেট বলে। সমস্ত প্লেটের গঠন অনিয়মিত। আর এগুলির সীমানা মহাদেশের সীমানার সঙ্গে কোনও মিল নেই। এই প্লেটগুলি কোনওটি স্থির নয়, সকল প্লেটের একটি নির্দিষ্ট গতি আছে যা ২ থেকে ১০ সেন্টিমিটার প্রতি বছর সরে। প্লেটগুলি অনন্ত কাল ধরে বিভিন্ন দিকে বহু দূর অতিক্রম করছে। এই ভাবে যখন যেখানে ২টি প্লেটের সংঘর্ষ হচ্ছে সেখানেই ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে।

আরও পড়ুন-খারাপ সময় পিছু ছাড়ছে না, ফের বিপাকে ইমরান

আফটার শক
পৃথিবীর ওপর সব জায়গাতে সমানভাবে ভূমিকম্প হয় না। দেখা গেছে কিছু বিশেষ প্রতিক্রিয়াশীল জায়গাতে এই ঘটনা বেশি ঘটছে যা বিভিন্ন প্লেটের সংযোগস্থল। এই প্রতিক্রিয়াশীল জায়গাগুলোকে সিসমিক বেল্ট বলে। পৃথিবীতে ৩টি প্রধান বেল্ট আছে, যেখানে বেশিরভাগ ভূমিকম্প হয়। একটি হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের চারদিক। এটিকে ‘সার্কাম প্যাসিফিক বেল্ট’ অথবা ‘রিং অফ ফায়ার’ বলে। দ্বিতীয়টি সাউথ প্যাসিফিক আইল্যান্ড থেকে জাভা, সুমাত্রা, সেন্ট্রাল এশিয়ান পর্বতমালা হয়ে গ্রিস, ইতালি ও স্পেনকে নিয়ে। এবং তৃতীয়টি হচ্ছে উত্তর-দক্ষিণ আটলান্টিকের মাঝ-বরাবর। ভারতে প্রধান ভূমিকম্পপ্রবণ জায়গা হচ্ছে হিমালয় পর্বতমালা হয়ে নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া, আন্দামান-নিকোবর আইল্যান্ড এবং কুচ। ভূমিকম্পের হাইপোসেন্টার হল পৃথিবীর অভ্যন্তরে সংঘর্ষ স্থান। যেখান থেকে নানারকম তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। এপিসেন্টার হল ভূপৃষ্ঠে অবস্থিত একবারে সংঘর্ষ কেন্দ্রের উলম্বভাবে উপরের স্থানটি। এখানে সবথেকে বেশি নাশকতা হয়। সাধারণত প্লেটের সীমানাগুলি ভীষণ অমসৃণ এবং বক্র। তাই ২টি প্লেটের যখন কাছাকাছি এসে সংঘর্ষ শুরু হয় তখন একই সময়ে শেষ হয় না। কোনও প্রান্তে সংঘর্ষ শুরু হলে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। একটি বড় সংঘর্ষের পরে পরবর্তী সংঘর্ষগুলোকে বলে আফটার শক। এই সময়ে আরও বড় সংঘর্ষও ঘটা অস্বাভাবিক নয়। তাই আফটার শক সতর্কতা অবলম্বন করতেই হয়।

আরও পড়ুন-খারাপ সময় পিছু ছাড়ছে না, ফের বিপাকে ইমরান

ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে
ভূমিকম্পের জন্য অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার পরিবর্তন একটি অন্যতম প্রধান কারণ। আর এই অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার পরিবর্তন সমতল থেকে মাপা সম্ভব নয়। প্রদূষণ তথা গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাতে হবে। কারণ যত বেশি পৃথিবী উত্তপ্ত হবে ভূমিকম্পের সংখ্যা বাড়বে। যথাসম্ভব সৌরশক্তির ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য আরও বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস শুরু করতে হবে, অর্থাৎ শহর থেকে দূরে থাকতে হবে। সমান উচ্চতার ২টি বাড়ির মধ্যে উচ্চতার দ্বিগুণেরও বেশি ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে। যাতে ভূমিকম্পের শুরুতেই সহজেই ফাঁকা জায়গায় পৌঁছনো যায়। নিকাশি ব্যবস্থার মাস্টার প্ল্যান করতে হবে। সমুদ্রের উপকূল আরও বেশি সহজ বসবাসযোগ্য করতে হবে। পাহাড় ও খনি অঞ্চল থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাই ভাল। প্রয়োজনে সহজে শহরে আসার আরও বেশি উন্মুক্ত রাস্তা তৈরি করতে হবে। এতে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের সরাসরি হস্তান্তর সম্ভব হবে যথাসম্ভব প্রদূষণমুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতে হবে। শহরের চারদিকে একাধিক রিং রোডের পরিকল্পনা রাখতে হবে। এতে ট্রাফিক জ্যাম তথা প্রদূষণ অনেক কম হবে। শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যথাসম্ভব প্রদূষণ কমাতে হবে। সৌরশক্তির প্রয়োগ ও সুনির্দিষ্ট নিকাশি ব্যবস্থা করতে হবে।

Latest article