চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: ময়দান থেকে ফুটবল আইএসএলের দৌলতে যখন থেকে পুরোপুরি কর্পোরেট নির্ভর হয়ে যুবভারতী-মুখী হয়েছে, বাঙালির চিরকালীন বড় ম্যাচের আগে সমর্থকদের আবেগের ছবিটা ম্লান হয়েছে। চলতি আইএসএলের ফিরতি ডার্বির আগেও ছবিটা বদলায়নি। টিকিট বিতর্ক নিয়ে মাঠের বাইরে গরমাগরম আবহাওয়া থাকলেও কলকাতা ক্ল্যাসিকো ঘিরে দুই শিবিরই যেন নিরুত্তাপ।
আইএসএলে দুই শিবিরের সামনে দুই লক্ষ্য। লিগ টেবলে তিন নম্বরে থাকা মোহনবাগান ওড়িশা, মুম্বইকে টপকে শীর্ষস্থান দখল করে লিগ-শিল্ড জয়ের পথ সুগম করতে চায়। তাই রবিবার যুবভারতীর ডার্বি জিততে ইস্টবেঙ্গলকে ‘বুলসআই’ করেছেন মোহনবাগান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। সুপার কাপ জয়ের পর আইএসএলে ফিরে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স গ্রাফ তলানিতে। ফিরতি ডার্বি হারলে প্রথম ছয়ে থেকে প্লে-অফ খেলার আশা আর থাকবে না তাদের।
আইএসএলের প্রথম পর্বের ডার্বিতে বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলই ছিল মোহনবাগানের কাঁটা। পরপর হার, জুয়ান ফেরান্দো বিদায়ে দুঃস্বপ্নের মতো ছিল সবুজ-মেরুন শিবিরের পরিস্থিতি। মাসখানেকের মধ্যে ছবিটা বদলে গিয়ে পরিস্থিতি এমন, ফিরতি ডার্বিতে বদলে যাওয়া মোহনবাগানকে থামানোর পরীক্ষা ছন্নছাড়া ইস্টবেঙ্গলের সামনে। আইএসএলের দ্বিতীয় পর্বে এখনও অপরাজিত সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। টানা ছয় ম্যাচ জিতে রবিবারের ডার্বি খেলতে নামছে তারা। হাবাস ফের দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলে গিয়েছে মোহনবাগান। তার উপর জনি কাউকো ফেরায় তাঁর সঙ্গে দিমিত্রি পেত্রাতোস, মনবীর সিংদের বোঝাপড়া মোহনবাগানের শক্তি বাড়িয়েছে। তার উপর ডার্বিতে কোচের হটসিটে এখনও অপরাজিত হাবাস। কিন্তু তিনি দায়িত্বে ফেরার আগেই চলতি মরশুমে কার্লেস কুয়াদ্রাতের টিমের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের স্কোরলাইন এখনও ১-২। ইস্টবেঙ্গল দুটো ডার্বি এবার জিতেছে। গত মাসের প্রথম পর্বের ডার্বি ২-২ ড্র হয়েছে। রবিবারের যুবভারতীতে বদলারও লড়াই দিমিত্রিদের কাছে।
বড় ম্যাচের আগের দিন প্র্যাকটিসেও ফুরফুরে মেজাজে দিমিত্রি, মনবীররা। সাহাল আব্দুল সামাদ চোট সারিয়ে ফিট। সুস্থ হ্যামিলও দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেছেন। কার্ড সমস্যায় শুধু দীপক টাংরিকে পাবে না দল। ইস্টবেঙ্গলও একই কারণে মহম্মদ রাকিপকে পাবে না। চোট থাকায় এদিন প্র্যাকটিস করেননি মন্দার। তবে মাঝমাঠে কাউকোকে আটকাতে সম্পূর্ণ ফিট সাউল ক্রেসপোকে শুরু থেকে খেলাতে চান কুয়াদ্রাত। এদিন চুটিয়ে দলের সঙ্গে অনুশীলনও করেছেন। জানিয়েও দিলেন, ‘‘ডার্বিতে নামার জন্য মুখিয়ে আছি। মোহনবাগানকে ফের হারাতে চাই।’’
পয়েন্ট টেবলের মগডালে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ হাবাস। শিকারির মতোই স্প্যানিশ কোচ বললেন, ‘‘আমার ও দলের আত্মবিশ্বাসে কোনও খামতি নেই। তিন পয়েন্টে ফোকাস। সেটা পেলে শীর্ষে পৌঁছে যেতে পারব।’’ যোগ করেন, ‘‘দুটো দলের পরিস্থিতি আলাদা। ওরা সেরা ছয়ে শেষ করতে চায়। আমরা শীর্ষস্থানের লক্ষ্যে ছুটছি। তবে ডার্বি সবসময় আলাদা ম্যাচ। ছেলেদের মধ্যে দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা লক্ষ্যে স্থির থাকতে চাই।’’ পাশে বসে গোলমেশিন দিমিত্রি বললেন, ‘‘আমি গোল করি বা না করি, দলের জয়টাই আসল’’ কুয়াদ্রাতের ছোঁয়ায় ফের উঠে দাঁড়াতে চায় ছন্দহীন ইস্টবেঙ্গল। সেখানে চলতি মরশুমে ডার্বি পারফরম্যান্সই লাল-হলুদ বাহিনীর মোটিভেশন। কিন্তু যুবভারতীতে মশাল জ্বালাতে হলে পাহাড় টপকাতে হবে ক্লেটন সিলভাদের। কুয়াদ্রাতও নিরুত্তাপ। হয়তো এটাই তাঁর স্ট্র্যাটেজি। বলে গেলেন, ‘‘মোহনবাগান দারুণ ছন্দে। ওরাই ফেভারিট। ওদের প্রস্তুতি ভাল হয়েছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ওদের সুযোগ দিলে যা কিছু করতে পারে।’’
বদলে যাওয়া মোহনবাগানকে থামানোর পরীক্ষা ইস্টবেঙ্গলের
লিগ টেবলে তিন নম্বরে থাকা মোহনবাগান ওড়িশা, মুম্বইকে টপকে শীর্ষস্থান দখল করে লিগ-শিল্ড জয়ের পথ সুগম করতে চায়।