ইডি সিবিআই এজেন্সি রাজনীতি, নিট ফল সেই মাইনাস টু

ইডি সিবিআইয়ের হ্যাঁচড়প্যাঁচড় চলিতেছে। বাড়িতেছে বই কমিতেছে না। কিন্তু লাভের লাভ কী হইল? সেই তো ‘মাইনাস টু’! জিজ্ঞাসা করছেন অনির্বাণ সাহা

Must read

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩। সময় রাত ৯টার আশপাশ। সাকিন সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স। টানা ৯ ঘণ্টা পর জনসমক্ষে যুব বাংলার হৃদয়সম্রাট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
নির্দ্বিধ ভঙ্গিমায়, স্পষ্ট উচ্চারণে, শিরদাঁড়া সোজা রেখে তিনি বললেন, ‘গতবার জিজ্ঞাসাবাদের নিট ফল ছিল শূন্য। আর এবার বলছি, মাইনাস ২। আবার ডাকলে ফল হবে মাইনাস ৪। ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যাওয়া আটকাতেই এই ষড়যন্ত্র! যতবার ডাকবে, আসব, ১০ পয়সার লেনদেন প্রমাণ করে দেখাক ইডি, সিবিআই।’ এবং সেই সঙ্গে তাঁর বয়ান কোর্টে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেশ করার চ্যালেঞ্জ।

আরও পড়ুন-উদাসীন কেন্দ্র, তাসের ঘরের মতো পাঁচটি বাড়ি ডুবে গেল নদীগর্ভে

এইখানেই জাগছে প্রশ্নটা।
আসলে লড়াইটা শুরু হয়েছিল ২০২১-এ। ২ মে, ২০২১। দমবন্ধ করা নেগেটিভ প্রচার সত্ত্বেও, অনেক কাড়া-নাকাড়া বাজিয়েও বাংলার জনাদেশ সপক্ষে আনতে ব্যর্থ বহিরাগতরা । শক হূন দল পাঠান মোগল, আমাদের জন্মের অনেক আগের ইতিহাস। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই লড়াই ও তার পরিণাম একদম টাটকা। স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বার্ধক্যভাতা, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী হারিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের ডেলি প্যাসেঞ্জারিকে, ডাবল ইঞ্জিনের দু’হাত ভরা লাড্ডুকে। তাঁদের তৃণমূল ভাঙার হীন প্রচেষ্টা সফল হয়নি। দু’হাতে অর্থ, পদ এবং ক্ষমতা বিলিয়েও তৃণমূলের বিকল্প গড়তে পারেনি বিজেপি। কারণ, যোগ্য নেতৃত্ব ও মুখের অভাব। অত ঢাকঢোল পিটিয়েও গেরুয়া শিবির আজও থমকে। কারণ, তাঁদের ধর্ম আছে, মেরুকরণ আছে, ইডি আছে, সিবিআই আছে, কিন্তু একজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেই। নিদেনপক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও নেই।

আরও পড়ুন-নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, বিলে আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি প্রাক্তন কমিশনারদের

তার পরে কেটে গেছে ২৭ মাস। ইডি, সিবিআইয়ের হানাদারি অব্যাহত। তবু কি তৃণমূলের জনসমর্থনের ভিত নড়ানো গেল? বোকা বাক্সের সান্ধ্য আসরে পণ্ডিত সাজা কিছু মুখের দেদার সমালোচনায় কিছু আসে যায়নি ভোটবাক্সের চেহারার। জগাই মাধাই গদাইরা বিস্ফারিত নেত্রে পুরসভা থেকে পঞ্চায়েত তারই মুক্ত প্রদর্শনী দেখল। আর উত্তর ও দক্ষিণের বিস্তৃত গ্রামবাংলা, জেলা শহর এখনও আচ্ছন্ন সরকারের জনমুখী একের পর এক প্রকল্প নিয়ে। সবুজসাথীর সাইকেলে চেপে গ্রামের রাস্তায় যৌবন জলতরঙ্গ রুখবে কে?

আরও পড়ুন-ঘুষ নিতে গিয়ে সিবিআইয়ের জালে সরকারি কর্তা-সহ ৭

ক’দিন আগেকার ঘটনা। এত সভা, জেলায় জেলায় মিটিংয়ে মিছিলে এত জনসমাগম। ভোট নিয়ে অভিযোগ নেই কোনও। তবুও, জগাই মাধাই গদাইদের মুখ শুকনো।ধূপগুড়ি সব উৎসাহে এক লহমায় যেন জল ঢেলে দিয়েছে। জামানত জব্দ বলে আলিমুদ্দিনের ছোট-মেজো কর্তারা শুকনো মুখে কপাল ঠুকে বলছেন, ৬০০ ভোট তো বেড়েছে! আর বিজেপি? উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র বঙ্গ বিজেপির পিছু হটা যেন অনিবার্য দেওয়াল লিখন। এখনও পর্যন্ত বঙ্গ-রাজনীতি যেখানে দাঁড়িয়ে তাতে উত্তরবঙ্গও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। তাই গতবারের ১৮ আসন কমতে কমতে কমতে কোথায় নামবে, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

আরও পড়ুন-বেনামে আদানির শেয়ারে বিনিয়োগ, মরিশাসে বাতিল লাইসেন্স

লড়াইটা তো আসলে মোদি-অমিত শাহের সাকরেদদের সঙ্গে জননেত্রীর জনমুখী উন্নয়নের নয়, লড়াইটা আসলে এজেন্সি রাজনীতির সঙ্গে জনমুখী রাজনীতির। সেই লড়াইয়ের বাইনারিতে তাই অনিবার্য পক্ষ ইডি-সিবিআই। বিগত ২৭ মাস ধরে তাদের দৌরাত্ম্যের নিটফল শূন্য। সেই কথাটাই বাঘের বাচ্চার মতো উচ্চারণে স্পষ্ট করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি, বন্ধ হচ্ছে সেই ইন্ডিয়া ক্লাব

ইডি ও তার দোসর সিবিআইয়ের অতিসক্রিয়তার আসল কারণ কিন্তু জনসাধারণের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে। আগামী ৬-৭ মাস পর লোকসভা ভোট মিটে গেলেই এই বঙ্গে ইডির ব্যস্ততা যে কমে যাবে, তাও সবাইকার জানা। আবার দোকান খুলবে ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে। অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন সাইকেলের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই অতি-সক্রিয়তার চক্রটাকেও কিন্তু মানুষ ধরে ফেলেছে।

Latest article