প্রতিবেদন : করোনা ঠেকানোর জন্য লকডাউন জারিকে কেন্দ্র করে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে যে এভাবে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠবে সেটা চিনের কমিউনিস্ট সরকার স্বপ্নেও ভাবেনি। লকডাউনের প্রতিবাদে চিনে বিক্ষোভের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। প্রথম দু’দিন চুপ করে থাকার পর পুলিশ ও প্রশাসনও এবার প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে লাঠিপেটা করার অভিযোগও উঠেছে।
আরও পড়ুন-উন্নয়নে ছন্দে বড়শাল পঞ্চায়েত
এমনকী, পুলিশে নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না সাংবাদিকরাও। বিবিসির এক সাংবাদিককে পেটানোর ঘটনায় গোটা বিশ্বেই নিন্দিত হয়েছে চিন। সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার পর ব্রিটেন কার্যত চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে। অন্যদিকে চিনের রাস্তায় ঘনঘন স্লোগান উঠছে, হয় আমাদের স্বাধীনতা দাও, নয় মৃত্যু।
গত সপ্তাহে উরুউমকি শহরে এক বাড়িতে আগুন লেগে ১০ জনের মৃত্যুর পরেই সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন। শনিবার রাত থেকে শুরু হওয়া মানুষের বিক্ষোভ আন্দোলন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বিস্তৃত হয়েছে। রাজধানী বেজিং ছাড়াও, সাংহাই, উহান, নানজিং, হুনানের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বিক্ষোভ চলছে। প্রতিবাদকারীরা মুখে সেলোটেপ এঁটে নীরবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন। প্রতিবাদকারীদের অনেকের হাতেই রয়েছে সাদা কাগজ। নিজেদের বক্তব্য সরকারের কাছে জানাতে পারছেন না বলে তাঁরা সাদা কাগজ হাতে রেখেছেন।
আরও পড়ুন-তালিবান জমানায় ভয়াবহ পরিস্থিতি আফগানিস্তানে
এই কমিউনিস্ট দেশে সাধারণত সরকার বিরোধী যেকোনও আন্দোলন কড়া হাতে দমন করা হয়। সেখানে সরকার বিরোধী কোনও কথা বলা কার্যত অপরাধের শামিল। আটের দশকের শেষ দিকে তিয়েন আনমেন স্কোয়ারে ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর স্মৃতি আজও টাটকা। পড়ুয়াদের বিক্ষোভ দমনে পুলিশের সেই কঠোরতা যাতে বিশ্বের দরবারে না পৌঁছয় তার জন্য মরিয়া ছিল তৎকালীন কমিউনিস্ট সরকার। সে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে উইঘুর মুসলিমদের উপরেও নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। এবার তার সঙ্গে যোগ হল কোভিড নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধি।
জিরো কোভিড নীতির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জনজীবন একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিধি-নিষেধের কারণে ঘরের বাইরে আসতে পারছে না মানুষ। জিনপিং প্রশাসনের কঠোরতা যত বাড়ছে ততই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পারদ চড়ছে। পথে ঘনঘন স্লোগান উঠছে জিনপিং দূর হটো। জিনপিং এবার গদি ছাড়ো। চলতি আন্দোলনে বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই নবীন প্রজন্মের। বিশেষ করে যেভাবে ছাত্র ও যুবরা এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে তা প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।