প্রতিবেদন : নবমীর রাত পোহাল। এল বাতি নেভানোর বেলা। এবারে চোখের জলে উমাকে বিদায় জানানোর পালা। দেবীর ঘোড়ায় চড়ে আগমন, বিদায়ও ঘোড়ায় চেপেই। কিন্তু নবমীর সকালের রোদ ঝলমলে আকাশটা যে দুপুরে হঠাৎ এমন করে বদলে যাবে তা অনেকেই বোধহয় ভাবতেই পারেননি। তবে আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা মেনে অনেকেই সকাল সকাল সেরে ফেলেছেন ঠাকুর দেখার পর্ব। তারপরে পুজোর নতুন পোশাকেই বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরার পালা। অবশ্য সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই প্রকৃতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গলি থেকে রাজপথে আবার মানুষের ঢল। বেপরোয়া মনোভাব।
আরও পড়ুন-চিরঘুমের দেশে বেদী
নির্বিঘ্নে বিসর্জনের প্রস্তুতি সোমবার থেকেই শুরু করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ এবং অবশ্যই কলকাতা পুরসভা। বাবুঘাট, বাজাকদমতলা, বিচালিঘাট, নিমতলা, আহেরিটোলা, বাগবাজার- গঙ্গার পূর্বতীরের প্রতিটি ঘাটেই প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। ভিড় সামলাতে দেওয়া হচ্ছে ব্যারিকেড। সোমবার নবমী তিথি থেকেই কলকাতার ঘাটেঘাটে শুরু হয়েছে দশমীর বিসর্জনের মহড়া। নিম্নচাপের ভ্রুকুটি এড়িয়ে নিরাপদে প্রতিমা নিরঞ্জন নিশ্চিত করতে নবমীতেই দফায় দফায় ঘাটগুলি পরিদর্শন করেছেন কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। গঙ্গায় টহল দিতে শুরু করেছে জলপুলিশের লঞ্চ এবং স্পিডবোট। মোতায়েন করা হচ্ছে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী। থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।
আরও পড়ুন-এযুগের দুর্গা, কন্ডাক্টর ডলির কাঁধে অনেক দায়িত্ব
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রস্তুতিপর্ব শেষ হবে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যেই। কলকাতা পুরসভার পার্ক এবং উদ্যান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ বিধায়ক দেবাশিস কুমার এবারে প্রতিমা নিরঞ্জনের দেখভালের দায়িত্বে। তাঁর কথায়, সোমবারই যেহেতু নবমী শেষ হয়ে দশমী তিথির শুরু, তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিসর্জনের সম্ভাবনা। সেই অনুযায়ী ঘাটে ঘাটে প্রস্তুত থাকবেন পুরকর্মীরা। দূষণ রুখতে প্রতিমা জলে ফেলার সুনির্দিষ্ট সময় পরেই কাঠামো তুলে আনা হবে জল থেকে। এছাড়া গত কয়েক বছরের মতোই বিসর্জনের বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার পুজো উদ্যোক্তাদের গঙ্গায় না এসে ইএম বাইপাস লাগোয়া মুকুন্দপুরের জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বলা হয়েছে। যাদবপুর-সন্তোষপুর এলাকার অনেক পুজো কমিটিই এই অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।
আরও পড়ুন-মহানবমীতে শুভেচ্ছাবার্তা অভিষেকের
বিধাননগর পুরসভা এলাকার বেশকিছু প্রতিমার গত কয়েকবছরের মতোই এবারেও নিউটাউনের জলাশয়ে বিসর্জন হবে বলে জানা গিয়েছে। লক্ষণীয়, বছর দুয়েক আগে থেকেই বিকেন্দ্রীকরণের ফলে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের সংখ্যা ৩০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। যমজনগরী হাওড়াতেও বিসর্জনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবহাওয়ার মুড আচমকাই বদলে যাওয়ায় নবমীর বিকেল থেকেই রামকৃষ্ণপুর এবং শিবপুর ঘাটে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু করেছেন হাওড়ার পুর এবং প্রশাসনিক কর্তারা।