লড়াই জাদেজা-বুমরার, তবু হার

ইংল্যান্ড ৩৮৭ ও ১৯২ ভারত ৩৮৭ ও ১৭০

Must read

লন্ডন, ১৪ জুলাই : জাদেজা আর বুমরা যখন মাটি কামড়ে পড়ে আছেন, তখনও কোথায় যেন জয়ের ক্ষীণ আশা ঘিরে রয়েছে। গাব্বা জয়ের সরণি বেয়ে আর একটা অলৌকিক কিছু। না, শেষপর্যন্ত ভারত জেতেনি। জেতার কথাও হয়তো ছিল না। জয়ের সম্ভাবনা তখনই বিনাশ হয়েছিল, যখন ঋষভ আর রাহুল ফিরে যান। তবু শেষলগ্নে বুমরার ৫৪ বলের লড়াই, জাদেজার লড়াকু ইনিংস ছাপ রেখে গেল। দু’জনে মিলে ১৩২ বল কাটিয়ে গেলেন। পার্টনারশিপ ৩৫ রানের। এরপরও কিছু লড়াই বাকি ছিল সিরাজের। কাঁধে বল লাগল। তারপরও লড়ে গেলেন। শুধু শেষরক্ষা হল না বশিরের বল গড়িয়ে বেল ফেলে দেওয়ায়। টিকে থাকার এই সদিচ্ছা যশস্বী, করুণরা দেখাতে পারলে ভারত ২২ রানে হারে না। সিরিজেও ১-২ পিছিয়ে পড়ত না। বলা হয়নি জাদেজা নট আউট থেকে গেলেন ৬১ রানে। খেললেন ১৮১ বল।

সকালের প্রথম ঘণ্টা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা নাসের হুসেন বলে রেখেছিলেন। কিন্তু চড়া সুর ছিল মার্কাস ট্রেসকোথিকের গলায়। ইংল্যান্ডের সহকারী কোচ আগের দিন বলছিলেন, আশা করি এক ঘণ্টায় ভারতের ছ’টা উইকেট তুলে নেব। প্রায় মিলিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম দু’ঘণ্টায় চার উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৫৪ রান। লাঞ্চে ভারতের স্কোর ছিল ১১২-৮। জাদেজা তখন ১৭ নট আউট। ট্রেসকোথিক চতুর্থ দিনের শেষ এক ঘণ্টার কথা তুলে বলেছেন, ছেলেরা দারুণ খেলেছে। গ্যালারিও আমাদের পাশে ছিল। এতেই সবাই তেতে গিয়েছিল। তিনি না বললেও এটা ঘটনা যে, এই ঝাঁজ নিয়েই পঞ্চম দিন ভারতীয় ইনিংসকে ১৭০ রানে শেষ করেছেন জোফ্রা আর্চার ও বেন স্টোকস। জোফ্রা ও স্টোকসের তিন উইকেট। দুটি উইকেট নেন কার্স।

আগেরদিন শেষ বেলায় ব্রাইডন কার্স যে ধাক্কা দিয়েছিলেন, তারপরও জেতার আশা ছিল ভারতের। কিন্তু পঞ্চম দিন সকালে হুড়মুড়িয়ে অনেকগুলো উইকেট চলে যাওয়ার পর এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে ভারত জিতছে না। সকালে জোফ্রা উইকেট থেকে যে সুবিধা পেলেন, তাতেই ইংল্যান্ডের জয়ের রাস্তা তৈরি করে দেন। গতির সঙ্গে সুইংয়ের মিশেলে তিনি ভারতীয় ব্যাটারদের নাজেহাল করে দেন।

আরও পড়ুন-শুভমন কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর আশায়

৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৫ রান দরকার ছিল ভারতের। খেলা যখন শুরু হল তখন পরিস্থিতি পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। কিন্তু জোফ্রা যা ক্ষতি করে দেওয়ার করে যান। সকালে ১৩ রান যোগ হওয়ার পর পঞ্চম উইকেট। ঋষভ টিকেছিলেন ১২ বল। করে গেলেন ৯ রান। এই সিরিজে শুভমনের পর কেউ যদি ইংল্যান্ডকে চিন্তায় ফেলে থাকেন, তিনি ঋষভ। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড তাঁর জন্য লেগ সাইডে সাতজন ফিল্ডার রেখে গায়ে বল করেছিল। এতেই পরিষ্কার যে চোট পাওয়া ঋষভও কত ভয়ঙ্কর স্টোকসদের কাছে।

মুশকিল হচ্ছে যে জোফ্রার বলে দুটো বাউন্ডারি মারার পর ঋষভ তাঁকে উইকেট দিয়ে চলে গেলেন। ডেলিভারির সময় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল থেকে সিমের উপর বল এমনভাবে ফেলেন যে, পরে সেটা সোজা হয়ে যায়। ঋষভ যেটা ধরতে পারেননি। তাঁর পাও নড়াচড়া করেনি। এখানে ঋষভের উপর ভরসা রেখেছিল ড্রেসিংরুম। তিনি কিছুক্ষণ উইকেটে টিকে থাকলে রানের গতি আসত। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে তার থেকেও বড় ধাক্কা ছিল রাহুলের আউট। রাহুল স্টোকসকে ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবি হয়েছেন।

আগেরদিন নট আউট ছিলেন রাহুল। জয়-পরাজয়ের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু রিভিউ নিয়েও রক্ষা পেলেন না। ৫৮ বলে ৩৯ রান। যেভাবে খেলছিলেন তাতে ড্রেসিংরুমকে ভরসা দিতে পেরেছিলেন। তবে আগেরদিন শেষবেলায় যে ছন্দে ছিলেন, এদিন সেটা মনে হয়নি। রাহুল প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। দল তাঁর কাছে বড় রান চাইছিল। যেটা হয়নি। আর রাহুল আউট হওয়ার পরই এটা ভারতের হার মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।

তারপর ওয়াশিংটন সুন্দরের পালা। জোফ্রা নিজের বলে অসাধারণ ক্যাচ ধরে তাঁকে ফিরিয়ে দেন। ওয়াশিংটন ব্যাটের মুখ সামনে করেছিলেন। বল একটু দেরিতে এল। এতে ক্যাচ উঠে আসে জোফ্রার দিকে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই ক্যাচ নেন জোফ্রা। চোট সারিয়ে চার বছর পর টেস্ট খেলছেন তিনি। শুধু বলের গতি ১৪৭-এ তোলেননি, অ্যাথলিটের মতো মাঠে নড়াচড়া করেছেন। বোঝা গেল ইংল্যান্ড কেন তাঁকে পেতে এত মরিয়া ছিল। অ্যাসেজের আগে জোফ্রার প্রত্যাবর্তন বাড়তি মদত দিচ্ছে ইংল্যান্ডকে।
ডে ফোর থেকেই উইকেট বদলাতে শুরু করে। প্রথম তিনদিন পাটা উইকেট থাকার পর বল এইবার সিম করতে শুরু করেছিল। সোমবার সকালে সেটা আরও সিম সহায়ক হয়ে ওঠে। জোফ্রা শুরু থেকেই বিপজ্জনক হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের জন্য সবথেকে বড় প্রাপ্তি অবশ্য স্টোকসের বল হাতে প্রত্যাবর্তন। লাঞ্চের ঠিক আগে নীতীশকে যে বলে কট বিহাইন্ড করলেন, সেটা সিমারদের জন্য স্বপ্নের বল। স্রেফ ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় সোজা স্মিথের হাতে। ৫৩ বল উইকেটে কাটিয়ে নীতীশ করেছেন ১৩ রান। জাদেজার সঙ্গে জুটিতে যোগ করে যান ৩০ রান। লাঞ্চে ভারত ছিল ১১২-৮। তারপর লড়াই শুরু।

Latest article