রিতিশা সরকার, শিলিগুড়ি: পাহাড়ের বুকে অস্থায়ী কাঠের ছাউনিতেই শুরু হয়েছিল এই পুজো। দার্জিলিং পার্বত্য এলাকায় প্রথম দুর্গাপুজো বলতে এই পুজোই। বছরটা ছিল ১৯১৪। ব্রিটিশ আমলে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন দার্জিলিং শহরের চাঁদমারি রোডের কয়েকটি বাঙালি পরিবার। পুজোর জন্য জায়গা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রায়। পুজোর আয়োজনকে সফল করতে এগিয়ে এসেছিলেন পাহাড়ে সপরিবারে বেড়াতে আসা বর্ধমানের মহারাজও। মহারাজা নৃপেন্দ্রর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই এই পুজোর নাম দেওয়া শ্রী মন্দির নৃপেন্দ্রনারায়ণ বাঙালি পুজো। রাজা নেই। নেই রাজার রাজত্ব।
আরও পড়ুন-সাইবার অপরাধ দমনে নেতৃত্ব দিতে সিআইডিতে নতুন পদ, সিবিআই নয়, সিআইডিতে আস্থা হাইকোর্টের
তবু ১০৯ বছরেও রাজ আমলের রীতি মেনে এখনও দেবীদুর্গা মৃন্ময়ী রূপে পূজিত হন। তখনকার দার্জিলিং আর এখনকার দার্জিলিং, বিস্তর ফারাক। প্রথম কয়েক বছর কাঠের মন্দিরে পুজো হয়েছিল। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় ওই মন্দির আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গিয়ে ছিল। পরে অবশ্য মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রায় উদ্যোগ নিয়ে পাকাপোক্তভাবে গড়ে তুলেছিলেন নতুন মন্দির। যার নাম দিয়েছিলেন শ্রী মন্দির। দার্জিলিং চকবাজার থেকে খুব কাছেই চাঁদমারি রোড। গেলেই দেখা যাবে সাদা রঙের বিশালাকৃতির মন্দির। আজও এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা দার্জিলিংয়ের কয়েকটি বাঙালি পরিবার।
আরও পড়ুন-পাথরপ্রতিমায় আরও নতুন ৪টি জেটির শিলান্যাস করলেন মন্ত্রী
পুজো কমিটির পক্ষ থেকে প্রতাপাদিত্য গুহ জানিয়েছেন, আমাদের পুজো পাহাড়ের প্রথম দুর্গাপুজো। বাবা-কাকাদের কাছে শুনেছি ব্রিটিশ আমলে পুজো শুরু হয়েছিল। সে-সময় বর্ধমান রাজা সপরিবারে পুজোতে অংশগ্রহণ করতেন। দার্জিলিংয়ের মাটিতে বর্ধমান রাজার রাজবাড়ি রয়েছে। তাঁদের কিছু রীতি মেনেই মায়ের পুজো শুরু হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সবই পরিবর্তন হয়েছে। পুজোর উদ্যোক্তা বাঙালি হলেও এখন কিন্তু পুজোতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পাহাড়ের নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষও সামিল হন। অঞ্জলি দেওয়া থেকে ভোগ খাওয়া, বিসর্জনে সিঁদুরখেলা— সবেতেই পাহাড়বাসী এখানে একত্রিত। আগে প্রতিমা কলকাতার কুমোরটুলি থেকে আনা হত। আর এখন শিলিগুড়ির কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আসে।