মইনুল হাসান : ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন তাতে বাংলার মানুষের কোনো সংশয় ছিল না। তবুও সারাদেশের মানুষের নজর ছিল ফলাফলের দিকে। প্রচুর কেন্দ্রীয় পুলিশ নামানো হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছে এবং হাইকোর্টের কাছে বি জে পি’র পক্ষ থেকে প্রচুর নালিশ করা হয়েছিল। এমনকি নির্বাচনের স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক এমন আবদারও করা হয়েছিল। কোনো কিছুতেই কাজ হলোনা। নির্বাচন হলো। বাংলায় ইতিহাস রচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতলেন। যেমনটি দেশের মানুষ চেয়েছিলেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে চরম শিক্ষা পেয়েছে বি জে পি। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন (অপ) প্রচারের কান্ডারী। বাংলায় মানুষ থাকে শুধু ফিরিয়ে দেননি। একটা কড়া বার্তা দিয়েছেন। তার পরেও তাদের শিক্ষাই কিছুটা ঘাটতি থেকে গেছি। ভবানীপুর সহ অন্যান্য নির্বাচনগুলো সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারলো কিনা ভবিষ্যতই বলবে। আমরা এখন অন্য কথা বলি।
বি জে পি’র অপশাসনে সারাদেশ ত্রাহি ত্রাহি রব করছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্ত ক্ষেত্রে বি জে পি ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রী নিত্যনতুন পোশাক আশাকে সজ্জিত হয়ে যেন ফ্যাশান প্যারেডের মহড়া দিচ্ছেন। তার সঙ্গী সাথীদের অবস্থাও তাই। এমন সময়ে একটা লড়াইয়ে।মুখ চায়। মানুষের মনের মধ্যে সেই মুখটি আঁকা হচ্ছে বহুদিন ধরে। যিনি মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে সবকিছু ত্যাগ করতে পারেন। যিনি সামনে দাঁড়িয়ে মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। অযথা কালক্ষেপ অথবা বিশ্রাম যার কাছে বিষতু্ল্য। যিনি কোমল ও কঠোর। যিনি যেকোনো বিপদে ছুটে যান গরিবের পর্ণ-কুটিরে। যিনি সদা ব্যস্ত থাকেন শান্তির আর সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি রাখতে। কোন জনবিরোধী শক্তি যাকে কোনদিন ভিত করতে পারেনি। চিরদিন যিনি অপরের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। আবার স্বাভাবিক সৌজন্যের প্রতিমূর্তি। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ নয়। একদিন বাংলাতে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল ” বাংলা তার নিজের মেয়েকে চায়”। এখন স্লোগান পাল্টে গেছে ” দেশ তার নিজের মেয়েকে চায়”। সারাদেশের মানুষ চাইছে, বি জে পি’র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে একটা সংগ্রামী মুখ। যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। পশ্চিমবাংলা একটি বড় রাজ্য। অন্যান্য বড় রাজ্যগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তি কম অস্বীকার করার কোন হেতু নেই। রাজনীতির রঙ প্রতিমুহূর্তে পাল্টে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : লখিমপুরকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ সুপ্রিম কোর্টের, স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ যোগী সরকারকে
মানুষ বুঝে নিতে চাইছে বি জে পি-র বিরুদ্ধে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কে লড়বে? শুধু গোয়ার দিকে এসে গেলেন ফেলেইরো সাহেব। দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেসের বিধায়ক। সব ত্যাগ করে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিলেন। একটাই কারণ যে, বি জে পি’র বিরুদ্ধে একজন বিশ্বস্ত নেত্রীর পেছন থেকে লড়াই করবেন। গোয়া ছোট রাজ্য। কিন্তু ঘটনাটি গভীরতা ও গুণের দিক দিয়ে ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে ত্রিপুরা তো আছেই। ত্রিপুরাতে এমনই এক অর্বাচীন মুখ্যমন্ত্রী আছেন। এখন তাদের জনসমর্থন তলানিতে। সেখানে বাম ও কংগ্রেস এখনো কিছুটা আছে। কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রী কে। বি জে পি এত ভয় পেয়েছে যে, পার্টির সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মহা মিছিল করার অনুমতি দিতে সাহস পায়নি কিন্তু তাতেও মানুষের ঢল তৃণমূলের দিকে বাধ মানছে না। আক্রান্ত হচ্ছে তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু প্রতি রক্তফোঁটায় গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। গড়ে উঠছে আগামী জয়ের বিশ্বাস। গড়ে উঠছে নতুন দিনের স্বপ্ন।
আসামের নিপীড়িত মানুষের পাশে বরাবর তৃণমূল কংগ্রেস থেকেছে। সেখানকার বি জে পি সরকার পার্টির সাংসদদের বিমানবন্দরে আটকে রেখেছে। গুয়াহাটি যেতে দেয়নি। লড়াই থামেনি। এন আর সি তে আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ তৃণমূল মুখী। সারা দেশজুড়ে আন্দোলনের রাস্তায় আছে তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর অগণিত মানুষ। এখন প্রাচীন সর্বভারতীয় দলগুলির অবস্থা ম্যাড়মেড়ে। মানুষ তাদের বিশ্বাস করছে না শুধু তাই না- তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পর্যন্ত তাদের বিশ্বাস হারিয়েছেন। তাই তারা পতাকা ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগ্রামী পতাকার তলে এসে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। এ আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বা দলের নয়। এ আন্দোলন দেশ বাঁচানোর। এই আন্দোলনের প্রধান মুখটি ভারতের মানচিত্রের বুকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে- তার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন : ‘অচ্ছে দিন’ কোথায়? সবই তো জুমলা
আমার মনে হয়, কংগ্রেস বা অন্যান্য নেতারা টুইট করতে এবং সামাজিক প্রচার মাধ্যমে খুব মুন্সিয়ানা দেখাচ্ছেন। কিন্তু যত সময় তাতে ব্যয় করছেন যদি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে, রাস্তায় নেমে মানুষকে নিয়ে বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হতেন তাহলে বিরোধী ঐক্য আরো সুদৃঢ হতো। হাতে একটা মোবাইল থাকলে একের পর এক টুইট করা যায়- কিন্তু এক হাঁটু জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষের দুঃখের শামিল হওয়া, সমস্যার সমাধান করা ও সমস্যার উৎস জানানো নেত্রী সারাদেশে একজনই- তিনি মমতা বন্দোপাধ্যায়।
কংগ্রেস একজন সভাপতি ঠিক করতে পারছে না বহুদিন। বড় বড় নেতারা দল নয় যেন হট্টমেলার মধ্য দিয়ে চলছে। মনোনীত রাজ্য সভাপতি দু’মাসের মধ্যে পদত্যাগ করছে। পোড়-খাওয়া রাজনীতিবিদ ও মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেই বিজেপি’র ঘরে। সেই দল মানুষের আস্থা পেতে পারে না। সারাদেশের দৃষ্টি তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে নিবদ্ধ। এবার দেশের মেয়ের হাতে তেরঙ্গা পতাকা লালকেল্লায় তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। দেশ তৈরি।