সবার প্রিয় অভিনেতা অসিতবরণ

স্বর্ণযুগের শিল্পীদের মধ্যে অনন্য এক শিল্পী হলেন অসিতবরণ মুখোপাধ্যায়। আগামী ১৯ নভেম্বর তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে কিংবদন্তি শিল্পীর অভিনয় জীবনের ওপর আলোকপাত করলেন শঙ্কর ঘোষ

Must read

প্রাক্কথা
বীরভূম জেলার অন্তর্গত নান্নুর গ্রামে নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ দুর্গাদাস বাগচীর ঘরে যে শিশুটির জন্ম হল তিনি হয়ে উঠলেন বৈষ্ণব পদকর্তা। ইষ্টদেবী ছিলেন বাসুলি। রামি নামের এক রজক কন্যাকে সাধনসঙ্গিনী রূপে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পদাবলির সহজ সরল সুরে মানব জীবনের আনন্দ বেদনা হাসি কান্নার সুর ধ্বনিত হয়েছে। তাঁর পদে আকৃষ্ট হল বাঙালির অন্তর :
‘সই কেবা শুনাইলো শ্যাম নাম
গানের ভিতর দিয়া
মরমে পশিল গো
আকুল করিল মোর প্রাণ।’
সেই পদকর্তার নাম চণ্ডীদাস। চৈতন্য-পূর্ববর্তী পদকর্তা। মানবতার একনিষ্ঠ পূজারি। তাই তিনি মানুষকে দিয়েছেন সবার উপরে স্থান। জাতি-ধর্ম-বৃত্তি-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষই তাঁর কাছে প্রধান।
‘শুনহ মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
সেই চণ্ডীদাসের জীবন নিয়ে একাধিকবার চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তবে রামি সাধনসঙ্গিনীর সঙ্গে চণ্ডীদাসের জীবনকথা মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘রামী চণ্ডীদাস’ ছবি (১৯৫৩)। প্রখ্যাত পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্ত তাঁর নিজের চিত্রনাট্যে এই ছবি তৈরি করলেন। চণ্ডীদাসের চরিত্রে অভিনয় করলেন অসিতবরণ। তাঁর অপরূপ লাবণ্য চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। চণ্ডীদাসের বিখ্যাত পদগুলি তাঁর লিপে। সঙ্গে রামি হিসেবে ছিলেন সন্ধ্যারানি জুটি। বাঙালি দর্শকদের এক সময় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। সেই জুটিই টেনে নিয়ে গেল ‘রামী চণ্ডীদাস’ ছবিটি।

আরও পড়ুন-পুরুলিয়ায় শুরু খাদ্য দফতরের সরকারি মূল্যে ধান কেনা, ১১০ ক্রয়কেন্দ্র কিনবে ৩ লক্ষ টন

জন্মকথা
অসিতবরণ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৩ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতায়। বাবার নাম তারাপদ মুখোপাধ্যায়। মায়ের নাম বীণাপাণি দেবী। ডাকনাম কালো। খুবই নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ছিলেন তিনি। বাবা সামান্য কাজ করতেন টেলিগ্রাফ অফিসে। বাল্যকালে মাকে হারান। আর্থিক অবস্থা ও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা মিলে পড়াশোনাতে বিঘ্ন ঘটাল। ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন কিন্তু পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। আলিপুর টেলিগ্রাফ কারখানায় কিছুদিন কাজও করেছিলেন। সার্পেন্টাইন লেনে একটি ক্লাব ছিল, নাম অরফিক ক্লাব। সেই ক্লাবে নিত্য যাতায়াত ছিল। তবলা বাজাতে শেখেন তখন থেকেই। এই সময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় ঘটে প্রখ্যাত তবলা শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সঙ্গে। তাঁর সাহায্যেই সেই সময় তবলা বাজিয়ে মোটামুটি রোজগার করতে শুরু করলেন অসিতবরণ। আশৈশব গান-বাজনার প্রতি আগ্রহ ছিল। তবে গানের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন তবলা। তবলায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের চেষ্টায় তবলা শিল্পীর চাকরি পেয়ে যান কলকাতা বেতার কেন্দ্রে। পরে গ্রামাফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। এর বাইরে গানের আসরেও ডাক পড়ত তাঁর তবলা বাজানোর জন্য।
চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ
নিখিল ভারত সঙ্গীত সম্মেলনে তবলা বাজাতে গিয়ে বিখ্যাত নট পাহাড়ি সান্যালের নজরে পড়লেন। পাহাড়ি সান্যাল অসিতবরণকে দেখা করতে বললেন পরিচালক হেমচন্দ্র চন্দ্রের সঙ্গে। নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতে গিয়ে দেখা করলেন কর্ণধার বীরেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে। হেমচন্দ্র চন্দ্রের সঙ্গে পরিচয় হল। সবার সমর্থন থাকায় ‘প্রতিশ্রুতি’ ছবিতে পাহাড়ি সান্যালের ভাইয়ের চরিত্রে নির্বাচিত হলেন তিনি। সেই প্রথম কাজ। তাঁর বিপরীতে অভিনেত্রী ভারতী দেবী। এছাড়া চন্দ্রাবতী দেবী, সুপ্রভা মুখোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাস, জহর গঙ্গোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তী ছিলেন। ভাল গান গাইতে জানতেন। সেই কথা সুরকার রাইচাঁদ বড়াল জানতে পেরে তাঁর কাছে গান শুনতে চাইলেন। তিনি শোনালেন গান। তাঁর খুব ভাল লাগল। ফলে প্রতিশ্রুতি ছবিতে তাঁর গানগুলি তিনি স্বকণ্ঠে গেয়েছিলেন। গানগুলি লিখেছিলেন প্রণব রায়। ছবি হিট। গানগুলোও হিট। ফলে এমন হল পরের দুটি ছবি ‘কাশীনাথ’ এবং ‘নার্স সিসি’তে তিনি অভিনয় করলেন। আবার নিজের গান নিজেই গাইলেন। এটা একটা রেকর্ডও বটে। গায়ক নায়ক বাংলা ছবিতে তেমনভাবে আসেননি। কিন্তু অসিতবরণ নিঃসন্দেহে সেই বিরলদের মধ্যেই অন্যতম।
স্মরণীয় চিত্রায়ণ
গান-বাজনা-অভিনয় এই তিনটি বিষয় দক্ষতা অর্জন করা সহজসাধ্য নয়। কিন্তু অসিতবরণ পেরেছিলেন বলেই তিনি বৈশিষ্ট্যের দাবি করতেই পারেন। অভিনয়ের পাশাপাশি গান-বাজনা চলেছে সমানতালে। তবে কালক্রমে গান-বাজনার তুলনায় অভিনয়-প্রধান হয়ে ওঠেন। বাংলার প্রায় সব বিখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে তিনি চুটিয়ে কাজ করেছেন। কখনও নায়ক চরিত্রে কখনও-বা চরিত্রাভিনয়ে। সেই তালিকার দিকে একবার নজর দেওয়া যাক।
নীতিন বসু (কাশীনাথ, দৃষ্টিদান, যোগাযোগ)। সুশীল মজুমদার (দানের মর্যাদা)। সুবোধ মিত্র (নার্স সিসি)। কালীপ্রসাদ ঘোষ (কার পাপে, রানী রাসমণি)। অর্ধেন্দু চট্টোপাধ্যায় (হরিলক্ষ্মী)। চিত্ত বসু (তাপসী, বন্ধু, মা)। ফণি বর্মা (জয়দেব)। শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (কথা কও)। অর্ধেন্দু সেন (প্রশ্ন)। কমল গঙ্গোপাধ্যায় (ব্রতচারিণী)। মধু বসু (মহাকবি গিরিশচন্দ্র)। অগ্রদূত (সূর্যতোরণ, প্রত্যাবর্তন, বাদশা)। তপন সিংহ (কালামাটি, হারমোনিয়াম)। অগ্রগামী (শিল্পী, বিলম্বিত লয়)। নীরেন লাহিড়ী (পৃথিবী আমারে চায়)। মৃণাল সেন (অবশেষে)। তরুণ মজুমদার (পলাতক, আলোর পিপাসা)। মঙ্গল চক্রবর্তী (ন্যায়দণ্ড, আমি সে ও সখা)। সুধীর মুখোপাধ্যায় (ত্রিধারা)। শ্যাম চক্রবর্তী (শ্রেয়সী)। ভূপেন রায় (তীর্থ কালীঘাট, নিশাচর)। সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় (এন্টনি ফিরঙ্গি)। অজিত লাহিড়ী (জোড়া দিঘির চৌধুরী পরিবার), অজয় কর (খেলাঘর)। যাত্রিক (স্মৃতিটুকু থাক, ছিন্নপত্র, কাচের স্বর্গ)। অসিত সেন (চলাচল, পঞ্চতপা)। কার্তিক চট্টোপাধ্যায় (গুলমোহর)। বিজয় বসু (ভগিনী নিবেদিতা, রাজা রামমোহন)। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় (অগ্নিশ্বর, নায়িকার ভূমিকায়)। কনক মুখোপাধ্যায় (আশায় বাঁধিনু ঘর, মায়ার সংসার, দাবি)। অশোক চট্টোপাধ্যায় (লব কুশ)। রবি বসু (বিলে নরেন)। সলিল দত্ত (সূর্যশিখা) প্রমুখ স্বনামধন্য পরিচালকেরা।
বিপরীতে যাঁরা নায়িকা
ছবির কাজে যখন তিনি নায়ক তখন তাঁর বিপরীতে তিনি পেয়েছিলেন সেই সময়ের স্বনামধন্য নায়িকাদের। যাঁর মধ্যে রয়েছেন ভারতী দেবী (কাশীনাথ), সন্ধ্যা রানি (মায়ার সংসার), সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (অবশেষে), সুচিত্রা সেন (স্মৃতিটুকু থাক), অরুন্ধতী দেবী (চলাচল), সুপ্রিয়া দেবী (আম্রপালি), সবিতা বসু (ন্যায়দণ্ড), সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় (দৃষ্টিদান), মঞ্জু দে (কার পাপে)।

আরও পড়ুন-গাড়িচালকদের নিখরচায় চক্ষুপরীক্ষা পুলিশের

নানান ধরনের চরিত্রে অভিনয়
দৃষ্টিদান ছবিতে তিনি নায়ক। তাঁর ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অরুণ কুমার (যিনি পরবর্তীকালে হয়েছিলেন সকলের প্রিয় উত্তম কুমার)। বন্ধু এবং কেদার রাজা এই দুটি ছবিতে তাঁকে আমরা তবলাবাদক হিসেবে দেখেছি। তাঁর সৌম্যকান্তি চেহারা নিয়ে ভিলেনের মতো চরিত্র করেছেন সূর্যতোরণ ছবিতে, এমনকী নায়িকার ভূমিকায় ছবিতেও। এন্টনি ফিরিঙ্গি ছবিতে তিনি এন্টনির প্রতিপক্ষ ভোলা ময়রা। মায়ার সংসার ছবিতে তিনি মায়ার স্বামী অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় যাঁর সঙ্গী একটি বেহালা। রানী রাসমণি ছবিতে তিনি মথুরবাবু। বাদশা ছবিতে তিনি ব্যারিস্টার অবনী মিত্র, গঙ্গাসাগরে পুত্র মিন্টুকে হারিয়ে স্ত্রীর মতো দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। পলাতক ছবিতে তিনি আংটি চাটুজ্যে। বিকাশ রায় এবং উত্তম কুমার দু’জনই কাছের মানুষ ছিলেন বলেই তাঁদের পরিচালিত ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন প্রাণের টানে। বিকাশ রায় পরিচালিত অর্ধাঙ্গিনী এবং নতুন প্রভাত ছবি দুটিতে তিনি অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমার পরিচালিত কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী ছবিতে তিনি কঙ্কাবতীর (শর্মিলা ঠাকুর) সঙ্গীতগুরু হয়েছিলেন।
হিন্দি ছবিতে অভিনয়
নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে যখন তিনি যুক্ত ছিলেন তখন যেসব ছবিগুলো তিনি বাংলায় অভিনয় করেছিলেন তার হিন্দি ভার্সনেও তাঁকে অভিনয় করতে হয়েছিল।
সেইসব ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ওয়াসিয়াতনামা, মঞ্জুর, রূপ কি কাহানি প্রভৃতি। এছাড়া পরিণীতা ছবিতে তিনি যে হিন্দিতেও নায়কের অভিনয় করলেন সেখানে তার লিপের একটি গান (হাম কোচোয়ান হাম কোচোয়ান) অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। গানটি তাঁকে রাতারাতি বিখ্যাত করে দেয়।
বসু পরিবার ছবিকে কেন্দ্র করে ফ্ল্যাশব্যাক
যখন মুরলিধর চট্টোপাধ্যায়ের নিমন্ত্রণে নির্মল দে বসু পরিবার ছবি করবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তখন মূল চরিত্র বড়দার (সুখেনের) ভূমিকায় তিনি চেয়েছিলেন অভি ভট্টাচার্যকে। কিন্তু বোম্বের ঠিকানায় টেলিগ্রাম যাওয়ার পরেও কোনও হদিশ না পাওয়ায় অভি ভট্টাচার্য প্রসঙ্গটা তুলে রাখতে হয়েছিল। তখন ডাক পড়েছিল অসিতবরণের। তখন অনেকগুলি ছবিতে কাজ করছেন বলে সময় বার করতে পারেননি অসিতবরণ বসু পরিবারের জন্য। অতঃপর উত্তম কুমারের ডাক পড়ল। এই বসু পরিবার ছবির মাধ্যমে উত্তম কুমারের ভাগ্যটাও খুলে গেল। এতদিন ধরে তিনি যে ফ্লপ মাস্টার জেনারেল হিসেবে খ্যাত ছিলেন কিন্তু এই বসু পরিবার ছবিতে বড়দা সুখেনের ভূমিকায় তিনি যে অসাধারণ দাপটের সঙ্গে অভিনয় করলেন, তা দর্শকমনে দাগ কেটে গেল। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি উত্তম কুমারকে।
শিল্পীর সঙ্গে পরিচয়
আমার প্রথম ছবি ‘বাদশা’তেই তিনি আমার বাবা ব্যারিস্টার অবনী মিত্রের ভূমিকায় ছিলেন এবং মা মমতা দেবীর চরিত্রে সন্ধ্যা রানি। সেখানে বেশ কয়েকদিন রাধা ফিল্মস স্টুডিওতে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। যা এতদিন বাদেও মনের গভীরে দাগ কেটে রয়েছে। দ্বিতীয় যে ছবিতে তাঁর সঙ্গে কাজ করলাম সেটি স্বামী বিবেকানন্দের বাল্যকালের জীবন নিয়ে তৈরি ‘বিলে নরেন’। সেখানে আমি বিলের ভূমিকায় আর আমার বাবা বিশ্বনাথ দত্তের চরিত্রে অভিনয় করলেন অসিতবরণ। সেখানেও তাঁর সান্নিধ্য, তাঁর স্নেহ-ভালবাসা পেয়েছিলাম। তৃতীয় যে ছবিটিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পেলাম সেটি হচ্ছে ‘লব কুশ’। সেখানে আমি লব এবং তিনি হয়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। সীতার ভূমিকায় অভিনয় করতে বোম্বে থেকে এসেছিলেন পৌরাণিক ছবির অপরিহার্য নায়িকা অনিতা গুহ। বেশ কয়েকদিন কাজ ছিল ‘লব কুশ’ ছবিতে। সেখানেও তাঁর ভালবাসা অঢেলভাবে পেয়েছিলাম।

আরও পড়ুন-গানকেও যে বিভেদের অস্ত্র করা যায় দেখিয়ে দিল বিজেপি

রঙ্গমঞ্চের ডাক
পেশাদারি রঙ্গমঞ্চের ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি অসিতবরণ। মিনার্ভা থিয়েটারে অভিনয় করলেন মহানায়ক শশাঙ্ক, ডাঃ শুভঙ্কর নাটকগুলিতে। স্টার থিয়েটারে পরিণীতা নাটকে তিনি অভিনয় করলেন। বিশ্বরূপা থিয়েটারে ক্ষুধা, সেতু, লগ্ন প্রভৃতি নাটকের তিনি অভিনেতা। রঙমহল থিয়েটারে তিনি অভিনয় করলেন কথা কও নাটকে। নেতাজি মঞ্চে বিবর নাটকে। এর মধ্যে মিনার্ভায় ডাঃ শুভঙ্কর নাটকের নাম ভূমিকায় এবং স্টারে পরিণীতায় শেখর চরিত্রে অসিতবরণের অভিনয় সর্বসাধারণের সমাদর লাভ করেছিল। শেষ জীবনে শোভাবাজারের বি কে পাল ঠাকুরবাড়িতে নুটু মুখোপাধ্যায়ের সংযোগে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে অসিতবরণ ‘রসরঙ্গ’ নামে এক ভক্তিমূলক গীতি আলেখ্যের আসর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রধানত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পুণ্যজীবন তুলে ধরা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠান একাধিকবার দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু যাওয়া হয়নি। সেই আফসোস এখনও আমার মধ্যে রয়েছে।
নিয়মানুবর্তিতা
লবকুশের শ্যুটিং যখন হচ্ছে তখন একদিন আমার বাবা অসিতবরণকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আপনি কখন এলেন?’’ সেই একরাশ হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আধঘণ্টা আগে।’’ বাবা বললেন, ‘‘আপনার কলটাইম তো ছিল দশটায়।’’ অসিতবরণ সুন্দর করে বললেন, ‘‘যখনই কল টাইম থাকুক না কেন তার থেকে আধঘণ্টা, একঘণ্টা আগেই পৌঁছে যাই। কোথায় কোন জ্যামে আটকে যাব তাই।’’ আজকালকার শিল্পীরা যেখানে দেরি করে আসাটাই তাঁদের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে অসিতবরণের এই নিয়মানুবর্তিতার কথা ভাবলে শ্রদ্ধায় মাথা অবনত হয়।
শেষ কথা
দুই পুত্র এক কন্যার জনক ছিলেন অসিতবরণ। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান ১৯৮৪ সালের ২৭ নভেম্বর। বাংলা স্বর্ণযুগের ছবির শিল্পী হিসেবে অসিতবরণ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন দর্শকদের কাছে। তাঁর উদ্দেশে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

Latest article