বিকাশ ভবনে আটকে থাকা দুই মহিলা কর্মীর বিস্ফোরক পোস্ট

হিংস্র, বর্বর, অকথ্য গালিগালাজের এমন আন্দোলন দেখিনি

Must read

প্রতিবেদন : আন্দোলনের নামে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনকে (Bikash Bhavan) ঘিরে যে হিংস্রতা, বর্বরতা, অসভ্যতা এবং ভাঙচুর-হামলার ঘটনা ঘটেছে তা দেখেছেন বাংলার মানুষ৷ আর যে সমস্ত কর্মীরা সেদিন বিকাশ ভবনের মধ্যে আটকে গিয়েছিলেন তাঁরা নিজেদের চোখে দেখেছেন, প্রতিবাদ বা আন্দোলন নয়, আসল উদ্দেশ্য ছিল ভাঙচুর করা, আক্রমণ করা৷ টিভির ফুটেজে আসা৷ সবচেয়ে বড় কথা, যাঁরা আন্দোলন করছিলেন তাঁদের কতজন শিক্ষক ছিলেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে৷ তার কারণ, শিক্ষকরা এমন হিংস্র হতে পারেন, অকথ্য গালিগালাজ করতে পারেন কিংবা লাঠি নিয়ে মহিলাদের মারতে তাড়া করতে পারেন—এমনটা বিশ্বাস করছেন না সেদিন স্বচক্ষে দেখা বিকাশ ভবনের কর্মীরা৷ প্রবল আতঙ্ক তাঁদের ঘিরে ধরছে৷ চিন্তায় তাঁদের পরিবারও৷ শিক্ষকদের আন্দোলনের পিছনে যে রাম-বামের গুন্ডামি ছিল, তা স্পষ্ট হয়েছে প্রত্যেকটি ভিডিওতে, প্রত্যেকটি ছবিতে৷

বৃহস্পতিবার রাতের অভিজ্ঞতার কথা বিকাশ ভবনের (Bikash Bhavan) অনেক কর্মী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন৷ শনিবার যাঁরা ক্যামেরার সামনে বড় মুখ করে বলছিলেন, অন্তঃসত্ত্বাকে আটকে রাখা, মহিলাদের জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়ে লাঠি হাতে তাড়া করার ঘটনা ঘটেনি, তাঁরা এই সমস্ত লেখাগুলি দেখলে নিজেরাও লজ্জা পাবেন৷ সঞ্জনা বালা নামে বিকাশ ভবনের এক মহিলা কর্মী৷ বয়স অল্প৷ সদ্য চাকরি পেয়েছেন৷ সেদিনের কথা লিখতে গিয়ে প্রতি পদক্ষেপে আতঙ্কের পরিবেশ ধরা পড়েছে৷ তিনি লিখছেন, আমাদের অনেক সহকর্মীদের এমন মারা হয়েছে যে তাঁদের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়েছে৷ সঞ্জনা জানাচ্ছেন, প্রয়োজনে চিকিৎসার সমস্ত তথ্য হাজির করতে পারেন৷ কর্মীরা বাইরে বেরতে গেলেই তথাকথিত শিক্ষকরা ইট ছুঁড়েছেন, বোতল ছুঁড়েছেন, এমনকী হাতের কাছে যা পেয়েছেন তাই ছুঁড়ে মেরেছেন৷ বেশ কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, অসুস্থ কর্মীও ছিলেন৷ তাঁদের বেরতে দেওয়া হয়নি৷

রাত সাড়ে ৯টার পর বেরতে গেলে লাঠি নিয়ে তাড়া করা হয়েছে৷ জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে৷ অকথ্য গালিগালাজ করা হয়েছে৷ সেই অবস্থাতেই সকলে মেট্রোয় নেমে বাঁচতে চেয়েছেন৷ শিক্ষকদের হাতে লাঠি-জুতো, ভাবাই যায় না! বিকাশ ভবনের কর্মীদের দোষ কী? তাঁদের বিরুদ্ধে আন্দোলন কেন? প্রশ্ন সর্বত্র৷ এটাই কি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন? গেট ভেঙে ইট-পাটকেল ছোঁড়া কীসের লক্ষণ? এদের হাতে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা? প্রশ্ন অনেকের৷ সঞ্জনার বক্তব্য, আন্দোলনকারীরা মানসিকভাবে বিকাশ ভবনের কর্মীদের হেনস্থা করছেন, সেটাও নয় মেনে নেওয়া গেল৷ কিন্তু শারীরিক হেনস্থার কী উত্তর আছে? কিছুতেই বলতে পারব না— এই লড়াইয়ে সমর্থন রয়েছে৷ কিল, চড়, ঘুসি খাওয়ার পর আন্দোলকারীদের কাছে প্রশ্ন, আমরা কী দোষ করেছিলাম?
বছর দুয়েক আগে বিকাশ ভবনে চাকরি পেয়েছেন দেবলীনা ঘোষ৷ রীতিমতো তিনধাপ পরীক্ষা দিয়ে নির্বাচিত হয়ে চাকরি করছেন৷ তারপরও তাঁকে চোর স্লোগান শুনতে হয়েছে৷ তাঁর প্রশ্ন, আমাদের কেন এই অপবাদ দেওয়া হবে৷ পাল্টা আমরা যদি প্রশ্ন করি? বৃহস্পতিবার অফিসে এসেছিলেন এটা জেনেই যে বিকাশ ভবন ঘেরাও হবে৷ কিন্তু তা যে এমন হিংস্র হয়ে উঠবে কল্পনাতে ভাবতে পারেননি৷ চোখের সামনে দেখেছেন, ভাঙা হয়েছে বিকাশ ভবনের মেইন গেট৷ তারপর পিছনের গেটও৷ পরিষ্কার বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টা আটকে থাকতে হবে৷ অথচ কারও বাড়িতে অসুস্থ বাবা-মা৷ কারও বাচ্চার বয়স পাঁচ মাস, তার ব্রেস্টফিড দরকার৷ অনেকে প্রেগন্যান্ট৷ অনেকের পিরিয়ডস চলছে৷ অতিরিক্ত স্যানিটরি প্যাড পাবেন কোথায়? চিন্তা-আতঙ্ক বাড়ছে৷ পাঁচতলার বারান্দায় সকলে জড়ো হয়েছেন৷ পা ফেলার জায়গা নেই৷ সকলে দৌড়চ্ছেন, যে কোনও সময় স্ট্যাম্পেড হওয়ার সম্ভাবনা৷ কোর্ট কিংবা প্রশাসনের উপর রাগের কারণ না হয় বোঝা গেল৷ কিন্তু বিকাশ ভবনের কর্মীদের দোষ কোথায়? প্রশ্ন দেবলীনার৷ মিডিয়া কারও পা কেটে যাওয়া, মাথা ফেটে যাওয়া দেখাচ্ছে৷ আর আমাদের কথা একবারেরও জন্য নয়৷ বিকাশ ভবন থেকে বেরতে সকলে উপর-নিচ করছে৷ কোনওরকমে যখন বেরনো গেল, তখন একজনের জুতো খুলে চলে গেল৷ একজন ব্যাগ হারাল৷ এক কর্মীর জামা ছিঁড়ে দেওয়া হল৷ স্যান্ডো গেঞ্জি পরে সে ছুটছে৷ এরপর মেট্রোর দিকে দেবলীনারা ছুটছেন৷ পিছনে লাঠি উঁচিয়ে আন্দোলনকারীরা৷ এইসময় পুলিশ এসে দেবলীনাদের প্রাণে বাঁচালেন৷ তথাকথিত শিক্ষকদের এমন দানবিক রূপ সত্যিই ভাবা যায় না৷

আরও পড়ুন- সেনাসম্মান-শহিদতর্পণ: রাজ্য রাজ্যে চলছে তৃণমূলের টানা দু’দিনের কর্মসূচি

শুধু দেবলীনা নয়, আরও অনেকেই লিখছেন৷ আন্দোলনের বৃহস্পতিবার রাতে গুন্ডামি কী চরমে পৌঁছেছিল তাঁরা স্বচক্ষে দেখেছেন৷ কেউ কেউ বলছেন, পুলিশকে অপদার্থ ভাবতাম৷ উপলব্ধি করলাম, তাঁরা ছিলেন বলেই বিকাশ ভবন থেকে বেরতে পেরেছিলাম৷ পুলিশের প্রতি ধারণা বদলে গেল৷ এই মানুষগুলোও তাঁদের ডিউটি করছেন, মারও খাচ্ছেন৷ কিছু মানুষের উপর শ্রদ্ধা বেড়েছে৷ যেমন ডেপুটি সেক্রেটারি৷ সকলে বেরিয়ে যাওয়ার পর, খোঁজখবর নেওয়ার পর তিনি বেরিয়েছেন৷ আন্দোলনকারীরা ভুলে গিয়েছিল সেদিন বিকাশ ভবনের মধ্যে বিভিন্ন কাজে আসা বাইরের লোকও আটকে গিয়েছিলেন৷ মাথায় রাখতে হবে, দশতলার বিকাশ ভবনের পাঁচতলাটিতেই স্কুল এডুকেশনের অফিস৷ বাকিদের সঙ্গে এই নিয়োগের কোনও যোগই নেই৷ তাঁদের কেন আটকে রাখা হল? বহু কর্মীর প্রশ্ন, আমরা চাকরি দিইনি, কাড়িনি, টাকা দিইনি, টাকা নিইনি— তাহলে এই আক্রমণ, হামলা, অসভ্যতা, বর্বরতা কেন আমাদের সহ্য করতে হবে?

প্রশ্ন, বৃহস্পতিবার রাতে এ কোন দানবিক রূপ দেখা গেল শিক্ষক আন্দোলনের মোড়কে৷ যা যা ঘটালেন তা কি সঠিক? যাঁরা ছিলেন তাঁরা কি সত্যিই সকলে শিক্ষক? বিভিন্ন মাধ্যমে এই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ আর যাঁরা ঘটনা ঘটিয়ে শনিবারও মিথ্যাচারের ভাষণ দিচ্ছেন মিডিয়ার কাছে, তাঁরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পারলে জবাবগুলো দেবেন৷

Latest article