প্রতিবেদন : মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের দিন মোহনবাগান ক্লাবের স্পোর্টস লাইব্রেরির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল। ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে কিংবদন্তি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ফিতে কেটে শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবের স্পোর্টস লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন। সেই মঞ্চ থেকেই বাংলার ক্রিকেট ও ফুটবল প্রশাসক এবং ম্যানেজমেন্টকে বিঁধে বিস্ফোরক রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী।
আরও পড়ুন-তিরুপতি মন্দিরে সস্ত্রীক সূর্যকুমার
রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল এবং সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার শোচনীয় ব্যর্থতা নিয়ে হতাশা, ক্ষোভ উগরে দিয়ে অরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘আমি বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরকার সবকিছু করছে। যে দফতরের বাজেট ছিল ৮০ কোটি টাকা। সেই দফতরের বাজেট এখন ৮০০ কোটি টাকা। যেখানে যা পরিকাঠামো দরকার, এই সরকার তৈরি করে দিচ্ছে। যার যেখানে সমস্যা, সরকার এগিয়ে আসছে। ভারতবর্ষে প্রথম সরকারি স্পোর্টস মেডিসিনের পরিকাঠামো, সেটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করে দিচ্ছে। কিন্তু সরকার তো মাঠে নেমে খেলবে না, সরকার পরিকাঠামো করে দিতে পারে, আর্থিক সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু মাঠে নেমে যারা খেলছে, তারা কী করছে! ৩৩ বছর পর আমরা রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হব, আশায় বুক বাঁধলাম। মাঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বললাম, উদ্বুদ্ধ করলাম, ভাবলাম এবার আমরা জিতব। সেই কবে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা একবার রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল। কিন্তু কোথায় কী! ফের সেই ব্যর্থতা।’’
আরও পড়ুন-যাঁরা ব্যঙ্গ করেন, একলাইন লিখে দেখান
না থেমে ক্রীড়ামন্ত্রী একরাশ ক্ষোভ, বিরক্তি নিয়ে বলে চললেন, ‘‘রঞ্জি ফাইনালের পর শুনলাম, একটা মরশুমে শুধু সাতজন ওপেনার বদল করা হয়েছে। এ কোন দেশ, কোন বাংলা! শুনলাম, ফাইনালে যে ছেলেটা ওপেন করেছে সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও ভাল করে খেলেনি। সব নাকি কোটা। ফুটবলে দেখুন না, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। বাংলা আমাদের গর্ব, বাংলা আমাদের মা। এখানের মানুষের রক্তে ফুটবল। কিন্তু সন্তোষ ট্রফিতে সবার শেষে বাংলা। এখানেও সেই কোটা। প্রকৃত প্রতিভাবান ফুটবলার যে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করবে, কেন বাংলা দলে সুযোগ পাবে না? আগের বছর একজন কোচ যিনি বাংলাকে সন্তোষের ফাইনালে নিয়ে গেলেন, তিনি এবার বাদ কেন? এ কোন বাংলা? কোন প্রশাসক? যারা বছরের পর বছর ধরে ক্রীড়া সংস্থাগুলোকে আঁকড়ে পড়ে থাকবে আর প্রকৃত প্রতিভাবানরা খেলার সুযোগ পাবে না? মোহনবাগান ক্লাব ভাল কাজ করছে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলা কোথায়? মানুষ যখন জানতে চায় তখন ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে আমার লজ্জায় মাথা হেঁট হয় না? আজ বাংলার ছেলেদের সুযোগ নেই, শুধু বাইরের ছেলেরা এসে খেলবে? তাহলে কীভাবে আসবে আন্তরিকতা, জেদ, জেতার ইচ্ছা? সরকার ক্রীড়া বাজেট ৮০০ কোটি থেকে ৮ হাজার কোটিতে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এই কর্মকর্তারা, যারা ফুটবল, ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলাকে শেষ করে দিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠার সময় এসেছে।’’
আরও পড়ুন-কঠিন সময়ে নিজের উপর আস্থা রাখতে হয়, কে এল রাহুলের অফ ফর্ম নিয়ে দ্রাবিড়
বাংলার খেলাধুলা নিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী বিস্ফোরক মেজাজে থাকলেও মোহনবাগানের এদিনের স্পোর্টস লাইব্রেরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আন্তরিকতার সঙ্গে পালিত হয়। স্পোর্টস লাইব্রেরি উদ্বোধনের পর মঞ্চে হয় মূল অনুষ্ঠান। সেখানে বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সচিব দেবাশিস দত্ত, তিন সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ, শমিক বোস এবং অসিত চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ-সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং স্পোর্টস লাইব্রেরি তৈরির সঙ্গে যুক্ত দীপ প্রকাশনের দীপ্তাংশু মণ্ডল। অতিথিদের স্মারক, সবুজ-মেরুন উত্তরীয়, মিষ্টিতে বরণ করে নেয় ক্লাব। বিশিষ্ট তিন সাংবাদিক রূপক সাহা, জয়ন্ত চক্রবর্তী এবং রাতুল ঘোষকেও বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়। স্পোর্টস লাইব্রেরিতে বিভিন্ন খেলাধুলা এবং খেলোয়াড়দের উপর বই রয়েছে। মোহনবাগান ক্লাবের ইতিহাস সংক্রান্ত বইও শোভা পাবে লাইব্রেরিতে।
আরও পড়ুন-প্রচার পেতেই ভারতীয় ক্রিকেটারদের ছোট করে, পাক প্রাক্তনদের খোঁচা সানির
স্পোর্টস লাইব্রেরি যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত সেই সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ বললেন, ‘‘আগামী দিনে আরও বৃহত্তরভাবে এই স্পোর্টস লাইব্রেরি আত্মপ্রকাশ করবে।’’ মোহনবাগান নামের আগে থেকে ‘এটিকে’ শব্দ যে খুব তাড়াতাড়ি উঠে যাবে তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন কুণাল। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেবাশিস-সৃঞ্জয় বোসকে এক ফ্রেমে বেশ খোশমেজাজে দেখা গিয়েছে এদিন। মঞ্চ থেকে দেবাশিস বলেছেন, ‘‘অনেকে অনেক কিছু বলবেন, কিন্তু সৃঞ্জয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ছিল, আছে এবং থাকবে।’’