শুনানির নামে চরম হয়রানি

Must read

দেবস্মিত মুখোপাধ্যায়
বিজেপির নির্দেশে বাংলার ওপর জোর করে এসআইআর চাপিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ECI_SIR)। বাংলার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল। মোট ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোটারের নামে নাকি অসঙ্গতি মিলেছে। তাঁদের ডাকা হচ্ছে শুনানিতে। শুনানির নামে চলছে বয়স্ক ও বৈধ ভোটারদের হেনস্থা। শুনানির দ্বিতীয় দিনেও শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে ধরা পড়ল সেই ছবি। বেলগাছিয়া উর্দু হাইস্কুলে শুনানির ডাক পড়েছে ৬১ বছরের অমিতাভ খাসনবিশের। কাশীপুর বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বীরপাড়া লেনের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। ২০০২-এর লিস্টেও নাম আছে। তাও ডাক পড়েছে শুনানিতে। বাড়ি থেকে ২ কিমি দূরে শুনানি কেন্দ্র। বলছেন, খুব অসুবিধে হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। ৪০ বছর ধরে ভোট দিচ্ছি, তারপরও কেন এই হেনস্থা? শ্যামপুকুর কেন্দ্রের বাসিন্দা বৃদ্ধা রেখা দাস ও তাঁর স্বামীর ডাক পড়েছে বাগবাজার মাল্টিপারপাস হাইস্কুলে। তাঁরও নাম রয়েছে ২০০২-এর লিস্টে। তারপরও শুনানিতে তলব! বাগবাজার মাল্টিপারপাস হাইস্কুলের শুনানি কেন্দ্রে এসেছেন সীমা গুপ্তা। বাগবাজার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এর আগেও ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বাবার নামে কিছু সমস্যা থাকায় ডাকা হয়েছে। সব কাজ ফেলে এই নিয়েই এখন দৌড়োদৌড়ি করছেন। হয়রানির চূড়ান্ত। প্রেমনাথ সাউ। শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার। রামকৃষ্ণ লেন বাগবাজারের আদি বাসিন্দা, ২০০২-এর লিস্টে নাম রয়েছে। তাঁকেও ডাকা হয়েছে। সকাল থেকে এসে বাগবাজার মাল্টিপারপাস স্কুলে লাইন দিয়েছেন প্রমাণপত্র হাতে। কারণ, বলা হয়েছে ওঁর নাম বর্তমান তালিকায় নেই, কিন্তু সেখানে আবার তাঁর স্ত্রীর নাম রয়েছে। কিছুই বুঝতে পারছেন না। কী হবে বুঝতে পারছেন না।
৯৬ বছর বয়সে এসেও কমিশনকে নাগরিকত্বের প্রমাণ এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকার জন্য কাগজ দেখাতে হবে এটা ভাবতেই পারছেন না দিনহাটা ১ ব্লকের বড় আটিয়াবাড়ি পঞ্চায়েতের নিখিলচন্দ্র সরকার। বয়স ৯৬ পেরিয়েছে। ইতিমধ্যে দু’বার স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। একদিকে বয়সের ভার, অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে হাঁটতেও পারেন না। তাঁর নামেই এসেছে নোটিশ। রবিবার স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে অসুস্থ শরীরে ভোটার কার্ড, শুনানির নোটিশ নিয়ে বিডিও অফিসে হাজির হয়েছেন নিখিল সরকার। বাঁকুড়া থেকে তারকেশ্বরে শুনানিতে এসে হয়রানির শিকার হলেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা আরতি রাহা। তারকেশ্বরের মুক্তারপুরের বাসিন্দা আরতি রাহা। ভোটার কার্ডে তাঁর বয়স ৮১ বছর। স্বামী ভগবানচন্দ্র রাহা ছিলেন কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠের অধ্যাপক। আরামবাগ ও গোঘাট বিধানসভা এলাকার পুরনো বাসিন্দা। শনিবার সকালে দীর্ঘ ১৩০ কিলোমিটার পথ গাড়িতে তারকেশ্বরে আসেন বৃদ্ধা। মেয়ের দাবি, মায়ের একাধিক শারীরিক সমস্যা আছে। মনে রাখতে পারেন না। ২০০২ সালের কোন জায়গায় ভোট দিয়েছেন মনে নেই। সেই কারণে ফর্মে ২০০২ সালের তথ্য দেওয়া যায়নি। তাই পেয়েছেন কমিশনের নোটিশ। তাই হাজার কষ্ট করেও এসেছেন

আরও পড়ুন-‘আমার কাছে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে সাধারণ মানুষের দাম অনেক’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ব্লক ২ বিডিও অফিসে শুনানিতে এসেছেন ২৭ বছরের তরুণী বন্দনা মণ্ডল। বাড়ি চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরে। তিনি আবার অন্তঃসত্ত্বা। সঙ্গে ছিলেন স্বামী পেশায় কৃষক শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল। এই অবস্থায় তাঁর কথা জানতে পেরে শুনানি চলাকালীন বিএলও, এইআরও-রা এসে তাড়াতাড়ি তাঁর কাগজপত্র দেখে ছেড়ে দেন। কিন্তু ওই অবস্থায় কেন তাঁকে এভাবে ছুটে আসতে হল, সেটাই প্রশ্ন। এভাবে হয়রানির কী জবাব দেবে কমিশন। রবিবার শুনানির দ্বিতীয় দিন বেলুড়ে শুনানিতে এসে নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক প্রবীণ ভোটার। বেলুড় শ্রমিক মঙ্গল কেন্দ্রে শুনানিতে এসেছিলেন তিনি। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে পাশে থাকার বার্তা দেন স্থানীয় বিধায়ক ডাঃ রানা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ওই ব্যক্তি বেলুড় বাজার এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। বহু বছর ধরে ভোট দিচ্ছেন। তবুও তাঁকে শুনানির (ECI_SIR) জন্য তলব করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি।

Latest article