আইওয়াশ, নাকি চাপে পড়ে সাসপেন্ড ৬ আধিকারিককে?

লক্ষণীয়, যে ৬ পদস্থ সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে তার মধ্যে আছেন সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলার এসডিএম।

Must read

প্রতিবেদন : নিছকই আইওয়াশ, নাকি অন্যকিছু? হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে মর্মান্তিক ঘটনার জন্য যোগীর প্রশাসনকেই দায়ী করল যোগীরই নিযুক্ত সিট বা বিশেষ তদন্তকারী দল। তবে একইসঙ্গে দায়ী করা হয়েছে স্বঘোষিত ভোলেবাবার সৎসঙ্গের আয়োজকদেরও। মঙ্গলবার ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে সিট। ১২৮ জনের বক্তব্যের ভিত্তিতে ৮৫০ পাতার রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনা। নেপথ্যে যে প্রশাসনিক গাফিলতি তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যরা। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এই বিশাল ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য মাত্র ৭০ জন পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হল কোন যুক্তিতে? এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই প্রবল চাপে পড়ে মঙ্গলবারই তড়িঘড়ি করে জেলা প্রশাসনের ৬ পদস্থ আধিকারিককে সাসপেন্ড করল উত্তরপ্রদেশের গেরুয়া সরকার। অর্থাৎ যোগীর সরকার স্বীকার করে নিল, সেদিনের পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর ঘটনার জন্য দায়ী জেলা প্রশাসনও।

আরও পড়ুন-রামদেবের সংস্থাকে মুছতে হবে বাতিল পণ্যের বিজ্ঞাপন, সুপ্রিম নির্দেশ

তবে প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকতেই কি বলির পাঁঠা করা হল জেলার আধিকারিকদের? নাকি সিবিআই তদন্তের আর্জি নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ায় চাপে পড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি করে ৬ আধিকারিককে সাসপেন্ড করল যোগীর সরকার? লক্ষণীয়, সুপ্রিম কোর্টেও একটি রিট পিটিশন জমা পড়েছে হাথরসের ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবিতে। সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নজরদারিতে ৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দিয়ে তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে শীর্ষ আদালতে। ১২ জুলাই সেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা। এছাড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে পাটনা হাইকোর্টেও। সবমিলিয়ে দিশাহারা যোগী প্রশাসন। কিন্তু আশ্চর্জজনক বিষয়, নাটের গুরু ভোলেবাবা এখনও অধরা কেন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়নি সিটের রিপোর্টে। তাহলে কি ভোটের অঙ্কের কথা ভেবে ভোলেবাবার অনুগামীদের চটাতে চাইছেন না যোগী এবং তাঁর দল বিজেপি?
লক্ষণীয়, যে ৬ পদস্থ সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়েছে তার মধ্যে আছেন সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট এবং জেলার এসডিএম। রিপোর্ট বলছে, এই সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটই অনুমতি দিয়েছিলেন সেদিনের সৎসঙ্গ আয়োজনের। আর এসডিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শনও করেননি। সিনিয়র অফিসারদের ঘটনার রিপোর্টও করেননি। সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল তাঁদের। ফলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল পরিস্থিতি। তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার জন্য প্রধানত দায়ী করা হয়েছে অবশ্য অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদেরই অর্থাৎ ভোলেবাবার সেবাদারদেরই। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ভিড় হলে দুর্ঘটনার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে জেনেও বিষয়টাকে হয় তাঁরা গুরুত্ব দেননি অথবা গোপন করেছিলেন প্রশাসনের কাছে। ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ জমায়েতের কথা বলে অনুমতি আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, লোকসমাগম হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সভাস্থলে ঢোকা এবং বের হওয়ার জন্য মাত্র দু’টি দরজা কেন? দুটি পথও ছিল অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য আয়োজকরাও কোনও ব্যবস্থা রাখেননি কেন, প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নিয়েও। তবে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সিট। সবমিলিয়ে সিটের তদন্ত রিপোর্টের যথার্থতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

Latest article