গান্ধীজির আসার দিন মনে রেখে আজও মেলা হয় এক্তারপুরে

স্থানীয় মানুষজন ও প্রশাসন কর্তাদের নিয়ে তৈরি হয়েছে গান্ধীমেলা উদযাপন কমিটি।

Must read

তুহিনশুভ্র আগুয়ান, মহিষাদল: সালটা ১৯৪৫। তখন কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে মতাদর্শ নিয়ে চরমে মতপার্থক্য। গান্ধীজির কানে এ কথা পৌঁছতেই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সে বছর ২৫ ডিসেম্বর ডায়মন্ড হারবার থেকে ‘ন্যান্সি’ লঞ্চে চেপে তিনি মহিষাদলের এক্তারপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে ন্যান্সির আকার বৃহৎ হওয়ায় গেঁওখালি থেকে ছোট নৌকায় করে মহিষাদলের এক্তারপুর গ্রামে আসতে হয় গান্ধীজিকে। সেখানেই অবস্থিত শিশু সদনের সম্পাদিকা ছিলেন ড. মৈত্রী বসু। গান্ধীজির বসবাসের জন্য পাশে খড়ের তৈরি কুটিরের বন্দোবস্ত করা হয়। সেখানে পাঁচ দিন ছিলেন গান্ধীজি। সেই স্মৃতি আজও আগলে রেখেছেন মহিষাদলের এই প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন। স্বাধীনতার পর থেকে এই গ্রামে গান্ধীজির নামে হয়ে আসছে গান্ধীমেলা। আজও সেই মেলা সমান আবেগে হয়ে আসছে।

আরও পড়ুন-প্রকৃতি-নির্ভর সুস্থায়ী চাষে রাজ্যে আসবে সবুজ বিপ্লব

স্থানীয় মানুষজন ও প্রশাসন কর্তাদের নিয়ে তৈরি হয়েছে গান্ধীমেলা উদযাপন কমিটি। সেই কমিটি ও গ্রামবাসীদের উদ্যোগে গান্ধীজির এই গ্রামে থাকার পাঁচ দিন মেলা হত। কিন্তু মেলাকে নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ-উন্মাদনা তুঙ্গে থাকায় এ বছর থেকে আরও দুদিন বেড়েছে মেলা। গান্ধীজি যেখানে রোজ সন্ধ্যায় প্রার্থনায় বসতেন এবং যাবতীয় কাজকর্ম করতেন সেখানে করা হয়েছে বেদি। তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে গান্ধীজির বসবাস করা কুটিরের নাম দেওয়া হয়েছে গান্ধী কুটির। মেলার দিনগুলি রঙিন আলোয় সাজিয়ে তোলা হয় গান্ধী কুটির। এছাড়াও মেলায় প্রতিদিন থাকে গান্ধী বিষয়ক বিশেষ আলোচনা, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা হয়। হস্তশিল্প থেকে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন উপাদানের প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি স্টল রয়েছে মেলায়। গান্ধীজি যে ক’দিন এই গ্রামে বসবাস করেছিলেন প্রত্যেকদিন বিকেলে স্থানীয় পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে চরকায় সুতো কাটা শেখাতেন। এখান থেকেই তিনি সতীশচন্দ্র সামন্ত, এমনকী কুমারচন্দ্র জানার মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে দেখা করেন। এবছর এই মেলার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী, বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্র ও তিলক চক্রবর্তী। এই ঐতিহ্যবাহী মেলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তাঁরা। গান্ধী মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানসকুমার পন্ডা জানান, রোজ মেলায় থাকছে গান্ধী-বিষয়ক আলোচনা, কৃষি সেমিনার, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা। নবীনদের মধ্যেও গান্ধীজিকে নিয়ে উন্মাদনা লক্ষ্য করা গিয়েছে।

Latest article