অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে চলতি কৃষক আন্দোলন নিয়ে ঘরে-বাইরে তীব্র চাপের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি সরকার। আন্দোলনরত কৃষকরা নতুন করে আরও বড় পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে কৃষক আন্দোলন সমর্থন করে নিজেদের দলের সরকারের উপরেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। এর মধ্যে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার (এসকেএম) অন্যতম নেতা রাকেশ টিকায়েত কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে, ২৭ নভেম্বর থেকে আমরা আন্দোলন আরও ব্যাপক করব। আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল ব্যাখ্যা করতে গিয়ে টিকায়েত বলেছেন, ২৭ নভেম্বর থেকে কৃষকরা আবার গ্রাম থেকে ট্রাক্টর নিয়ে আন্দোলনের জায়গায় আসবেন। রাজধানী দিল্লিতেও পৌঁছে যাবেন। একই সঙ্গে সড়কে থাকা তাঁবুগুলোকে কংক্রিটের দুর্গ দিয়ে আরও মজবুত করা হবে।
টিকায়েত ছাড়াও এসকেএম নেতা গুরনাম সিং চাদুনিও মোদি সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, সরকার কয়েকদিন ধরে সীমান্ত খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। আলোচনা চলছে দীপাবলির আগেই রাস্তা পরিষ্কার করার। আমরা সরকারকে সতর্ক করতে চাই, যেন এই ভুল না করে। সরকার যদি রাস্তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করে, তবে এবার মোদির দোরগোড়ায় দীপাবলি উদযাপন করা হবে। কৃষকনেতা আরও বলেন, সবাই হেঁটে যাবে, প্রধানমন্ত্রী মোদির বাড়ির সামনে ক্যাম্প করবে। আমরা শান্তিতে বসে আছি। কেউ দাঙ্গা করছে না, ঝগড়া করছে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার যদি কৃষকদের শ্লীলতাহানি করে, জোর করে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়, তবে আমরা আবার দিল্লির দিকে যাত্রা করব। সারা দেশের কৃষকরা দিল্লির দিকে মিছিল করবেন। তাই সকল বন্ধুদের সতর্ক থাকতে হবে। রাতে বার্তা পেলেও রাতেই দিল্লির দিকে হেঁটে যাব আমরা।
উল্লেখ্য, সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ব্যারিকেড অপসারণ ও রাস্তা খোলার প্রক্রিয়া চলছে। তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ১১ মাস ধরে দিল্লি সীমান্তে ধরনায় বসেছেন কৃষকরা। সরকার ও কৃষকদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে, কিন্তু এখনও কোনও সমাধান পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী কৃষকদের ইস্যুতে প্রতিনিয়ত সক্রিয়। তিনি বলেন, মানুষের কষ্ট বুঝতে হলে তাদের কথা শোনা দরকার। তাঁর ট্যুইটে বরুণ গান্ধী এই কথোপকথনের ছবি শেয়ার করেছেন এবং লিখেছেন, ফসলের ক্রমবর্ধমান খরচ, ন্যায্যমূল্য বা এমএসপি না পাওয়া, দেশে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। মানুষের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে হলে কথা বলার চেয়ে তাদের কথা শোনা বেশি জরুরি।
আরও পড়ুন : ধনতেরাসের সন্ধানে
এদিকে বিজেপি ‘র মন্ত্রী বলেছেন,পেট্রোল-ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। এই অবস্থায় শীর্ষ নেতৃত্ব চুপ থাকলেও ‘যুক্তি’ সাজাতে শুরু করলেন গেরুয়া শিবিরের নিচুতলার নেতারা। সম্প্রতি এক বিজেপি নেতার দাবি ছিল ‘‘গাড়ি ধনীরা চালায়, ফলে তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না।’’ এবার মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রী দাবি করলেন, ‘‘মানুষের আয় অনেক বেড়েছে ফলে মূল্যবৃদ্ধি সামান্য বেশি হলে তা মেনে নেওয়া উচিত।” যদিও তাঁর এই যুক্তিকে অযৌক্তিকর হিসেবে দেখছে বিরোধীরা।
লাগাতার পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়নমন্ত্রী মহেন্দ্র সিং সিসোদিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে এটা বুঝতে হবে যদি আমাদের আয় বাড়ে তাহলে মূল্যবৃদ্ধিও মেনে নিতে হবে। এটাই বাস্তব, সরকার নিখরচায় সাধারণ মানুষকে কিছু দিতে পারে না। ওই টাকা জনস্বার্থমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। বিগত কয়েক বছরে সমাজের সব স্তরের মানুষের আয় বেড়েছে। আগে যেখানে বাড়িতে একটি মোটরসাইকেল থাকত এখন সেখানে গাড়ি থাকে।” যদিও বিজেপি মন্ত্রীর এই যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়েছে বিরোধীরা। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান নিচের দিকে। ফলে মানুষের আয় বেড়েছে বলে যে যুক্তি মন্ত্রী দিচ্ছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই।
পাশাপাশি আরও দামি হল বাণিজ্যিক গ্যাস, এক ধাক্কায় ২৬৬ টাকা বাড়ল বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। লাগামছাড়া পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমার কোনও লক্ষণ নেই, বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে পেট্রোল-ডিজেল ও গ্যাসের দাম। মূল্যবৃদ্ধির অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সোমবার বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম এক ধাক্কায় বাড়ল ২৬৬ টাকা। সোমবার থেকেই কার্যকর করা হচ্ছে নতুন এই বর্ধিত দাম। পাশাপাশি, ফের দাম বাড়ল পেট্রোল-ডিজেলের। জানা গিয়েছে, কলকাতায় একটি ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম হবে ২,০৭৩.৫০ টাকা। যদিও আশার কথা এটাই যে, পেট্রোলিয়াম সংস্থাগুলি ভরতুকিযুক্ত এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়ায়নি। তবে শুধু গ্যাস নয়, এদিন বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের দামও। এই নিয়ে লাগাতার ৬ দিন পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ল। সোমবার ফের প্রতি লিটার পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৫ পয়সা করে। সোমবার কলকাতায় ১ লিটার পেট্রোলের দাম বেড়ে হয় ১১০.১৫ টাকা। ডিজেল লিটার প্রতি ১০১.৫৬ টাকা। পেট্রোপণ্যের লাগাতার দাম বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। যা সাধারণ মানুষকে দীপাবলির আগে নিশ্চিতভাবেই আরও বিপাকে ফেলেছে।