নবনীতা মণ্ডল নয়াদিল্লি: আতঙ্কের দেবভূমি। আর এবার জোশীমঠের সঙ্গে যোগ হল কর্ণপ্রয়াগ, নৈনিতাল, উত্তরকাশীর মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যে কোনও সময়ে ব্যাপক ভূমিধস হতে পারে এই জায়গাগুলিতেও। বিশেষজ্ঞদের সাবধানবাণী উড়িয়ে যেভাবে পাহাড় কেটে বাড়ি তৈরি হয়েছে তার জেরে ভুগতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবিদদের দাবি, বিজেপি সরকারের উন্নয়নের নামে পরিকল্পনার অভাবেই আজ ডুবতে বসেছে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
আরও পড়ুন-বিমানবন্দরে ফের অশালীন আচরণ যাত্রীর
২০২০ থেকেই আলগা হচ্ছিল জোশীমঠের মাটি। সম্প্রতি তিন বছর আগের একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২০ সালে সমীক্ষাটি করেছে দেরাদুনের সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং। তারা জানিয়েছে, উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে জোশীমঠ ও আশপাশের এলাকার পাহাড়ে অনেক ফাটল দেখা গিয়েছিল। সমীক্ষা অনুযায়ী, বছরে প্রায় আড়াই ইঞ্চি বা সাড়ে ৬ সেন্টিমিটার করে বসে যাচ্ছে জোশীমঠ ও আশপাশের এলাকার পাহাড়। এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ২০২১-এর রিপোর্টেও বলা হয়েছিল সমগ্র উত্তরাখণ্ডের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতির উপর যথাযথ নজর রাখা উচিত। প্রশ্ন উঠছে, মোদি সরকার কেন তখনই কোনও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি? বিশেষজ্ঞদের দাবি, সরকার ওই সমীক্ষা দেখে তৎপর হলে আজ এই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হত না।
আরও পড়ুন-লখিমপুর খেরিতে বিচার শেষ হতে ৫ বছর লাগবে!
প্রশ্ন রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের চারধাম যাত্রা রেলওয়ে প্রোজেক্ট নিয়েও। কারণ এই ট্রেনলাইন প্রায় ৭০ শতাংশই টানেলের মধ্যে দিয়ে যাবে। আর এই সমস্ত উচ্চ সিসমিক জোনে নির্মাণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক, যার ফলে আরও ভূমিধস হয় এবং ভূগর্ভস্থ জলের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
আরও পড়ুন-হুমকি দিয়ে বাংলাকে বশে আনতে পারবে না বিজেপি
এ বিষয়ে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা জানান, ‘‘শুধু জোশীমঠই নয়, হিমালয়ের অনেক শহর এবং গ্রামই আগামী বছরগুলিতে ডুবে যাবে। সরকারই সবচেয়ে বেশি দায়ী এর জন্য। অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বেসরকারি কোম্পানিকে প্রদান করছে সরকার। বিভিন্ন পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জোশীমঠের বর্তমান অবস্থার জন্য ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)-এর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে দায়ী করেছেন। অভিযোগ, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য করা সু়ড়ঙ্গের মধ্যে বিস্ফোরণের ফলেই সমগ্র অঞ্চল অস্থির হয়ে উঠেছে। জোশীমঠের মতোই বিপদঘণ্টি বাজছে উত্তরাখণ্ডের কর্ণপ্রয়াগ, নৈনিতালে। আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ‘সেন্টার ফর ইকোলজি ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ডিরেক্টর বিশাল সিংহ।
আরও পড়ুন-বিজেপি নেতার মিথ্যাচারের জবাব দিল কোতুলপুর
জোশীমঠ সহ সমগ্র উত্তরাখণ্ড জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে সে প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা আরও বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল যে ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে, বিশেষজ্ঞরা সরকারকে সতর্ক করেছেন, ধীর গতিতে চলুন। হিমালয়ের মানচিত্র একইভাবে আঁকবেন না যেমন আপনি দিল্লি বা সমভূমিতে করেন। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। তার ফল আজ ভুগছেন দেবভূমির বাসিন্দারা।