প্রতিবেদন: নজিরবিহীন ঘটনা রাজধানীর আদালতে। আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে মহিলা বিচারককে প্রাণনাশের হুমকি ও অশ্রাব্য গালিগালাজ করল চেক বাউন্স মামলায় দোষীসাব্যস্ত এক ব্যক্তি ও তার আইনজীবী। বিচারককে আক্রমণেরও চেষ্টা করে তারা। তাঁকে চাপ দেওয়া হয় পদত্যাগের জন্য। এই ঘটনায় বিচারক জাতীয় মহিলা কমিশন এবং দিল্লি হাইকোর্টকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটা?
আরও পড়ুন-রেশন গ্রাহকদের পরিষেবায় আরও উন্নতি করতে বৈঠকে সাংসদ বাপি
আদালতের নথি অনুযায়ী, ২ এপ্রিল বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এনআই অ্যাক্ট) শিবাঙ্গী মংলা ওই অভিযুক্তকে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন। রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত উত্তেজিত হয়ে বিচারকের উদ্দেশে বলে, তুই হলিটা কী? বাইরে আয়, দেখা যাবে কেমন করে জ্যান্ত বাড়ি ফিরিস। বিচারক তাঁর অর্ডারে উল্লেখ করেছেন, অভিযুক্ত তার হাতে থাকা বস্তু দিয়ে তাঁকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দোষীসাব্যস্ত ব্যক্তি বিচারকের উদ্দেশে অশ্লীল হিন্দি ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিচারকের মায়ের বিরুদ্ধেও অবমাননাকর মন্তব্য করে। এছাড়া অভিযুক্ত ও তার আইনজীবী অতুল কুমার বিচারককে মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্থা করে চাপ দিতে থাকে, যাতে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন ও অভিযুক্তকে খালাস দেন। বিচারকের অভিযোগ, তারা হুমকি দেয়, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হবে এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। বিচারক মংলা তাঁর আদেশে উল্লেখ করেন, এই ঘটনায় জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপ জরুরি। অভিযুক্তের আইনজীবী অতুল কুমারের বিরুদ্ধে তার আচরণের লিখিত ব্যাখ্যা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার সুপারিশ হাইকোর্টে করা হবে না। পরের শুনানিতে, ৫ এপ্রিল, অভিযুক্তকে ২২ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ৬.৬৫ লক্ষ টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়। অভিযুক্তের পক্ষে তার আইনজীবীর বক্তব্য, তার মক্কেল ৬৩ বছর বয়সি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষক এবং তার তিনজন বেকার সন্তান রয়েছে। এই মর্মে লঘু শাস্তির আবেদন জানানো হয়। তবে বিচারক তাঁর ৫ এপ্রিলের রায়ে উল্লেখ করেন, ২ এপ্রিল আদালতে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিম জেলার প্রধান জেলা ও দায়রা বিচারকের মাধ্যমে দিল্লি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে।