ধর্মতলার একুশের মঞ্চে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুধুই বাংলার নেতৃত্ব নয়, গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব যারা করেছেন, তাঁরাই বাংলার রাজনৈতিক লড়াই থেকে বাংলার অস্মিতাকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন জাতীয় প্রেক্ষাপটে। কারণ এই বাংলা থেকেই যে স্বাধীনতার লড়াই হয়েছিল তারই ঐতিহ্য বহন করে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। সোমবার একুশের মঞ্চ থেকে সেই ইতিহাস স্মরণ করালেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন যে বাঙালিদের রাজ্যে রাজ্যে অপমানের পথে নেমেছে বিজেপি, সেই বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই।
লোকসভা থেকে পঞ্চায়েত – প্রতি নির্বাচনে মেরুকরণের যে খেলা বিজেপি খেলে চলেছে তা যে বাংলায় কোনওভাবে সফল হবে না তা স্পষ্ট করে এদিন মঞ্চ থেকে ফিরহাদ হাকিম জানান, বিজেপি যেদিন থেকে এসেছে সেদিন থেকে আমাদের এক পল্টু চাচা হঠাৎ করে সাম্প্রদায়িক হয়ে গিয়েছে। ভাবছে সাম্প্রদায়িকতা উস্কানি দিয়ে ভোট ভাগ করা যায়। ভুলে গেছে এটা রামকৃষ্ণের বাংলা। যে বাংলায় রবীন্দ্রনাথ রাস্তায় নেমে হিন্দু মুসলিম ভাই বোনেদের এক করিয়েছিলেন।
বাংলার মাটি যে বিজেপির জন্য দুর্জয় ঘাঁটি ২০২৬ নির্বাচনের আগে একুশের মঞ্চই সেই পথ প্রশস্ত করবে। মঞ্চ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে ফিরহাদের (Firhad Hakim) বার্তা, আমরা লড়াই করেছি সিপিআইএমের বিরুদ্ধে। আমাদের ৫০ হাজার ভাই। আমার ডানদিক, বাম দিকে যাঁরা ছিলেন তাঁরা মারা গিয়েছেন। আমি ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বেঁচে গিয়েছেন। সেই শহিদের রক্তে আজ সিপিএমমুক্ত বাংলা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ২০২৬-এ শূন্য হবে বিজেপি, জয় বাংলা বলিয়ে ছাড়ব: চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন অভিষেক
শুধুমাত্র বাংলা নয়, বাংলার মানুষের জন্য বাংলার বাইরেও যে লড়াইতে প্রস্তুত তৃণমূল, সেই বার্তা দিয়ে ফিরহাদ বলেন, লড়াই যেখানেই অন্যায় হবে, সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গর্জে উঠবেন। আজকের লড়াই বাংলার অবমাননার লড়াই। ওড়িশায় এতদিন হয়নি। যেদিন থেকে বিজেপি এসেছে সেদিন থেকে বেঙ্গলি হেটরেড। আমি এই মাটিতে জন্মেছি। যখন মারা যাব এই মাটির ছয় ফুট জায়গা আমি পাব। আমার এই অধিকার কে কলার ধরে কেড়ে নিতে আসে দেখি। মুখ বুজে থাকবেন না। যাঁরা বাংলার বাইরে অপমানিত তাঁরা গর্জে উঠুন।
দেশের মানুষকে সম্মান কীভাবে করতে হয় সেটা বাংলা থেকেই শিখতে হবে বিজেপিকে, বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। একুশের মঞ্চ থেকে সেই বার্তা স্মরণ করালেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, অন্যের রাজ্যেরও দেড় কোটি মানুষ আছেন এখানে। তাঁরা আমাদের ভাই। যারা অসম, দিল্লি, মহারাষ্ট্রের আছেন তাঁরা আমাদের ভাই। অনেক বছর ধরে রাজস্থান, পঞ্জাব থেকে এসেছেন তাঁরাও আমাদের ভাই। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা যে অবদান রেখেছে তেমন আর কারো নেই। বাঙালি ছিল বলেই স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই সম্ভব হয়েছিল। আন্দামান জেলে যারা ছিলেন তাঁদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাঙালি ছিলেন।
স্বাধীন বাংলা গড়ার কারিগর বাঙালিরাই বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে স্পষ্ট করে ফিরহাদের হুংকার, আপনাকে সংসদ থেকে তুলে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতাও এই বাংলার আছে। এখানে যারা আছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা করেন। তাঁদের কিছু বলতে চাই না। ছাগলের তিনটি বাচ্চা দেখা যায় গ্রাম বাংলায়। এই বাংলার বিজেপি ছাগলের তৃতীয় সন্তান। এখানে যত লোক আছে তার তিন গুণ লোক কলকাতায় আছে। আর তার কয়েক গুণ লোক গোটা বাংলায় আছে। এটা শুধু ট্রেলার। প্রত্যেক জায়গায় বাংলার অপমান। সেই বিজেপিকে স্পষ্ট বলতে চাই – বাংলা গড়েছি, ভারত গড়তে চাই।