মহালয়ার অনুষ্ঠান প্রথম শোনানো হয় আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক, বাণীকুমার— ত্রয়ীর সেই অনুষ্ঠান পেয়েছিল দারুণ জনপ্রিয়তা। অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং প্রতিবছর মহালয়ার ভোরে সম্প্রচারিত হয়। মহানায়ক উত্তমকুমারও একবার অংশ নিয়েছিলেন বেতারের মহালয়া অনুষ্ঠানে। সেই অনুষ্ঠানটিও দুর্গাপুজোর সময় কোনও কোনও বছর সম্প্রচারিত হয়।
আরও পড়ুন-মাত্র দুটি সংসদীয় কমিটির শীর্ষে মহিলা কেন? প্রশ্ন ডেরেকের
ছোট পর্দায় প্রথম মহালয়ার অনুষ্ঠান উপস্থাপন করে কলকাতা দূরদর্শন। নরম ভোরে রেডিওর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর-পরই শুরু হয় সেই অনুষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলেও মহালয়ার অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হতে থাকে। দেবীপক্ষের সূচনায় কোন অভিনেত্রী হবেন দেবী দুর্গা, এই নিয়ে প্রতিবারই চ্যানেলগুলির মধ্যে একটা চাপা প্রতিযোগিতা চলে। একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে।
বদলেছে যুগ। বদলেছে সময়। উন্নতি ঘটেছে প্রযুক্তির। এসেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। সেখানে সম্প্রচারিত হয় ওয়েব সিরিজ, রিয়েলিটি শো ইত্যাদি। কখনও কখনও মুক্তি পায় নতুন সিনেমাও। এবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসছে মহালয়ার অনুষ্ঠান। মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে প্রথমবার ওয়েব সিরিজে দেখা যাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। দুর্গা বা মহামায়ার রূপে আসছেন অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল। ২ অক্টোবর অর্থাৎ মহালয়ার সকালেই হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ওয়েব সিরিজটি। পরিচালকের ভূমিকায় রয়েছেন সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-গ্রাহক স্বার্থে বিজ্ঞপ্তি পরিবহণ দফতরের আরটিও, এআরটিওতে এবার পুজোয় চালু ওয়ার্ক ফ্রম হোম
আদ্যাশক্তি মহামায়ার আদি ও অনন্ত পৌরাণিক গল্প তুলে ধরা হবে ওয়েব সিরিজের মোড়কে। নারীশক্তির যে উদযাপন মা দুর্গার মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত করে থাকে জনগণ, সেই গল্পকেই ফুটিয়ে তোলা হবে ওটিটিতে। কেবল মহিষাসুরমর্দিনী নয়, এই সিরিজে তুলে ধরা হবে সতীর পৌরাণিক গল্প ও অন্যান্য একাধিক পৌরাণিক গল্প ও চরিত্রকে, যা আদি ও অনন্ত কাল ধরে মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গে যুক্ত।
নতুন প্রজন্ম ওয়েব সিরিজ দেখতে পছন্দ করে। তা সে রহস্য রোমাঞ্চই হোক বা সামাজিক গল্প, ওয়েব সিরিজের মোড়কে অনেক রকম গল্প দেখে তারা সময় কাটায়। আনন্দ পায়। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই টেলিভিশন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ওয়েব সিরিজে মহিষাসুরমর্দিনীর গল্পকে নিয়ে আসা একটা অভিনব ভাবনা, এমনটাই মনে করছেন অনুষ্ঠানের নির্মাতারা এবং দর্শকরা। অনেকের মতেই মোবাইলে, হাতের মুঠোয় মহালয়া পৌঁছে গেলে এই পৌরাণিক কাহিনি দেখার দর্শক কয়েক গুণ বাড়বে।
বিভিন্ন সময়ে দুর্গা রূপে পর্দায় দেখা গিয়েছে হেমা মালিনী, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দেবশ্রী রায়, ইন্দ্রাণী হালদার, কোয়েল মল্লিক, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের। সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ধ্রুপদী নাচে পটীয়সী শিল্পী এখনও দুর্গা রূপে সকলের মনে জায়গা করে রেখেছেন। টলিপাড়ার পাশাপাশি, বর্তমানে টেলিপাড়ার শিল্পীদেরও দুর্গা রূপে দেখা যাচ্ছে। সিরিজের মোড়কে মহালয়া কতটা পছন্দ করে দর্শকরা, সেই সঙ্গে দুর্গারূপী রাজনন্দিনী পালকে দর্শকরা কতটা গ্রহণ করেন সেটাই দেখার। তবে এটুকু বলা যায়, রাজনন্দিনীকে ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে দর্শকদের মধ্যে।
অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যাবে মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠান। এবার স্টার জলসার মহালয়ার অনুষ্ঠান ‘রণং দেহি’তে দেবী দুর্গা রূপে দেখা যাবে অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিককে। সেই সঙ্গে রয়েছেন আরও কয়েকজন অভিনেত্রী। সামনে এসেছে প্রোমো। পঞ্জিকা মতে দেবীর আগমন হচ্ছে দোলায়। তাই প্রোমোর একেবারে শুরুতে দেখা গিয়েছে, পার্বতী রূপে দেবী কার্তিক, গণেশ-সহ সপরিবারে দোলায় চড়ে বাপের বাড়ি আসছেন। পার্বতী রূপে স্নিগ্ধ সাজে ধরা দিয়েছেন সন্দীপ্তা সেন। এ-ছাড়াও নানা রূপের দেবীর ছবি ফুটে উঠেছে। কখনও দেখা গিয়েছে সোনামণি সাহাকে, আবার কখনও ভয়ঙ্কর চামুণ্ডার রূপে নজর কেড়েছেন স্বস্তিকা ঘোষ। দেবীর শান্ত শীতল রূপে মন ভরিয়ে দিয়েছেন সুস্মিতা দে। এছাড়াও রণরঙ্গিনী মূর্তিতে এসেছেন মধুমিতা সরকার এবং হিয়া মুখোপাধ্যায়। মহিষাসুরমর্দিনী রূপে ধরা দিয়েছেন কোয়েল মল্লিক। অনুষ্ঠানটি দেখা যাবে ২ অক্টোবর ভোর পাঁচটায়।
অন্যদিকে, আবারও জি বাংলার দুর্গা সাজছেন অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের নাম ‘নবরূপে দেবী দুর্গা’। শুভশ্রী ছাড়াও জি বাংলার অন্যান্য নায়িকাদেরও দেখা যাবে দেবীর অন্যান্য রূপে। এখানে দুর্গার ন’টি রূপ তুলে ধরা হবে। সামনে এসেছে প্রোমো।
তবে একেবারে অন্য ধারায় হাঁটছে সান বাংলা। কোনও টলি বা টেলি নায়িকার পরিবর্তে একজন নৃত্যশিল্পীকে তারা বেছে নিয়েছে দুর্গা রূপে। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার তথা নৃত্যশিল্পী পায়েল বসাককে এবার টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে মহালয়ার মহাযুদ্ধে কোন চ্যানেল শেষ হাসি হাসে, সেটাই এখন দেখার।