ফুলের সাজে ঝুলনযাত্রা, লীলা বা আনন্দ খেলা

শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকে বলরাম পূর্ণিমা পর্যন্ত পালিত হয় ঝুলন। দোলনায় দোল খান রাধাকৃষ্ণ। পুরাণ ও নানা প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে রয়েছে এই উৎসবের উল্লেখ। শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলার দুই পীঠস্থান মথুরা-বৃন্দাবনে পালিত হয় ধুমধামের সঙ্গে। বাংলার ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্যও সুপ্রাচীন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

শ্রাবণ মাস শ্রীকৃষ্ণের মাস। সচরাচর এই মাসেই পালিত হয় ঝুলন উৎসব। জন্মাষ্টমীতে এসে শেষ হয়। এ বড় বিচিত্র এক সময়পঞ্জি। কৃষ্ণের লীলাখেলার উদযাপন শুরু হয়ে যায় আগে, জন্মদিনটি আসে পরে। অবশ্য জুতসই ব্যাখ্যাও আছে। ভগবান নাকি ভক্তদের মধ্যে আগে আসেন, তারপর যান মাতৃগর্ভে।
প্রশ্ন ওঠে, ঝুলন কী? ঝুলন মানে দোলা বা দোলনা। কৃষ্ণের জীবনে দোলনা বা ঝুলনের গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম। যখন তিনি শিশু ছিলেন, তাঁকে দোলায় দোলাতেন মা যশোদা। পরে গোকুল-বৃন্দাবনেও গরু চরাতে গিয়ে দোলনায় দুলে-দুলে গোপিনীদের উত্ত্যক্ত করতেন তিনি। আবার এই দোলনাতেই রাধার সঙ্গে দুলে ভালবাসায় বিভোরও হতেন।

আরও পড়ুন-ছাত্ররাই সুস্থ রাজনীতির ভবিষ্যৎ পুরুলিয়ার প্রস্তুতি সভায় তৃণাঙ্কুর

বছরে তিনটি পূর্ণিমা কৃষ্ণপ্রেমীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই তিনটি দিনে শ্রীকৃষ্ণের তিনরকম লীলা বা আনন্দ খেলা দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলো হল— দোলপূর্ণিমা, ঝুলন পূর্ণিমা ও রাসপূর্ণিমা। এর মধ্যে দোলের সময় প্রভু আবিরে নিজেকে ও ভক্তদের রাঙিয়ে তোলেন, রাসপূর্ণিমায় নৃত্য করেন এবং ঝুলনে দোলনায় দুলে ভক্তদের আদর খান। ঝুলন উৎসব পালিত হয় শ্রাবণ মাসের একাদশী থেকে বলরাম পূর্ণিমা পর্যন্ত। মোট পাঁচদিন ধরে। প্রসঙ্গত, ঝুলন উৎসব পালনের উল্লেখ রয়েছে পুরাণ ও নানা প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রেও। ভাগবত পুরাণ, হরিবংশ এবং গীতগোবিন্দতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিমুখর ঠান্ডা পরিবেশে দোলনায় শ্রীকৃষ্ণকে দুলিয়ে উৎসব পালন করেন বৈষ্ণবরা। ভারতে অন্যতম জনপ্রিয় কৃষ্ণশাস্ত্র হরিভক্তি বিলাস-এ এই উৎসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আছে।
লোকায়ত প্রেমের গল্প
ঝুলন যাত্রার তাৎপর্য কিন্তু বেশ গভীর। এই উৎসবের সময় কৃষ্ণ কিন্তু একা দোলনায় দোল খান না, বরং রাধার সঙ্গে দোলনা ভাগ করে নেন। প্রসঙ্গত, কৃষ্ণ-রাধার প্রেমকাহিনির নাকি কোনও ঐতিহাসিক মান্যতা নেই। অন্তত সেরকমটাই দাবি ঐতিহাসিকদের। এই প্রেমের গল্প আসলে লোকায়ত, মানে লোকমুখে তৈরি হওয়া কিংবদন্তি বিশেষ। এটা এমন এক প্রেমের গল্প, যেখানে প্রেমিক-প্রেমিকার কোনওদিন মিলন হয়নি, কিন্তু তা-ও তাঁদের একসঙ্গে দোলনায় বসিয়ে দোলানো হয়। অনেকেই বলেন, কৃষ্ণের সব লীলার সঙ্গেই প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের এক আশ্চর্য যোগাযোগ লক্ষ্য করা যায়।
মঠ-মন্দিরে সূচনা
দোলনায় দুলবেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর সঙ্গী হবেন শ্রীরাধা। শুনতে এটুকু লাগলেও, ঝুলন উৎসবেরও কিছু নিয়মকানুন আছে। নিষ্ঠাভরে এই উৎসব পালন করতে চাইলে সেগুলো মেনে চলতে হবে। এককালে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে। মন্দিরে দেবতাকে দোলনায় বসিয়ে দোলানো হত। সেটা দেখতে হত বিপুল ভক্ত সমাগম। পরবর্তীকালে ঘরে ঘরে শ্রীকৃষ্ণ পূজিত হতে শুরু করেন। তারই সঙ্গে নানাবিধ নিয়ম সহযোগে ঝুলন উৎসবও শুরু হয়। একাদশীর প্রাতঃকালে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধাকে প্রথমে স্নান করানো হয় দুধ কিংবা গঙ্গাজলে। তারপর পরানো হয় রাজবেশ। আগে থেকেই তৈরি থাকে কাঠের, পিতলের কিংবা রুপোর দোলনা। স্নান সেরে, রাজবেশ পরে তাতে যুগলে বসেন কৃষ্ণ-রাধা। দোলনা ও তার চারপাশ সাজানো হয় ফুলের সাজে। সেই সঙ্গে কৃষ্ণের মন্দির ও মন্দিরপ্রাঙ্গণ বা জায়গাবিশেষে মন্দির ঘরটিও সাজানো হয় ফুল দিয়ে। প্রতিদিন দু’বার রান্না ভোগ, নানারকম ফল ও নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। দোলনায় বসার পর ভক্তরা একে-একে ফুলের দড়ি টেনে দোলাতে থাকেন রাধাকৃষ্ণকে। সঙ্গে চলে কীর্তন। এই উৎসবে প্রতিদিন আলাদা-আলাদা সাজে সকাল-সন্ধে সাজেন ভগবান। তবে সব সাজেই রাখতে হয় সবুজের আধিক্য। কারণ, সময়টা বর্ষাকাল। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষ্ণও সতেজ হয়ে ওঠেন।

আরও পড়ুন-২ জেলার কোর কমিটি ও চেয়ারপার্সনের নাম ঘোষণা

স্নান ও অঙ্গমার্জনা
ফুলই ঝুলনের সাজের মুখ্য উপাদান। তবে আজকাল নানা ধরনের সাজে সাজানো হয়ে থাকে ঠাকুরের আসন ও মন্দির প্রাঙ্গণ। দোলনা হতে পারে কাঠের কিংবা ধাতুর। তা সম্পূর্ণরূপে ঢেকে দিতে হবে ফুলে। কুসুম দোলায় দোলেন শ্যাম-রাই। এই উৎসবের সময় অনেক মন্দিরে বা বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের জীবনকাল ছোট-ছোট পুতুলের মাধ্যমেও সাজিয়ে তোলা হয়।
কৃষ্ণের অঙ্গরাগ ও মন্দির সজ্জা তো বটেই, প্রতিদিনের কাজের মধ্যে থাকবে তাঁর স্নান ও অঙ্গমার্জনা, বেশভূষা পরানো, ভোগ রান্না, নৈবেদ্য সাজানো, দিনে দু’বার আরতি ও তারপরে দোলনায় দোল দেওয়া, নামসংকীর্তন গাওয়া, কৃষ্ণকে শয়ান দেওয়া ইত্যাদি। অনেক মন্দিরের চারপাশে এই সময় মেলা বসে। বাড়িতে হয় অতিথি সমাগম। উৎসবের পাঁচদিন নিরামিষ খাওয়াদাওয়া হয়। আর বলদেবের জন্মদিনে তাঁর জন্য বিশেষ বেশ, ভোগ ও দোলনারও ব্যবস্থা করা হয়।
ভক্তের মাঝে মন্দিরের দেবতা
ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে বেশ ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় ঝুলন উৎসব। তালিকায় সবার উপরে রয়েছে মথুরা, বৃন্দাবনের নাম। শ্রীকৃষ্ণের লীলাখেলার দুই পীঠস্থানে এই উৎসব পালিত হয় ১৩ দিন ধরে। রাধাকৃষ্ণের মূল বিগ্রহ মন্দির থেকে বাইরে বের করে আনা হয় ও দোলনায় বসিয়ে তাঁদের দোলানো হয়। বৃন্দাবনের শ্রীরূপ-সনাতন গৌড়ীয় মঠ, বাঁকেবিহারীর মন্দির, রাধারমণ মন্দির বা মথুরার দ্বারকাধীশ মন্দির, সর্বত্রই মন্দিরের দেবতা নেমে আসেন ভক্তের মাঝে। একই রীতি প্রচলিত মায়াপুর ও নবদ্বীপেও। এ ছাড়াও আজকাল ইসকনের বিভিন্ন শাখায়ও ঘটা করে পালিত হয় এই উৎসব
নবদ্বীপ-মায়াপুরের উৎসব
মথুরা-বৃন্দাবনের মতোই বাংলার ঝুলন উৎসবের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। শুধুমাত্র রাধাকৃষ্ণের যুগলবিগ্রহ দোলনায় স্থাপন করে হরেক আচার অনুষ্ঠান উৎসব হয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য। এই উৎসব হয় মূলত বনেদিবাড়ি এবং মঠ-মন্দিরে। তবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছোটদের ঝুলন সাজানোর আকর্ষণ হারিয়ে যায়নি। আজও অমলিন নানা ধরনের মাটির পুতুল, কাঠের দোলনা আর গাছপালা দিয়ে ঝুলন সাজানোর আকর্ষণ।
নদীয়ার নবদ্বীপের ঝুলনের আলাদা আকর্ষণ বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে। এক দিকে যেমন কিছু পাড়ায় দেখা যায় সর্বজনীন ঝুলন উৎসব, অন্যদিকে পুরনো মঠে কিংবা মন্দিরে চোখে পড়ে ঐতিহ্যশালী ঝুলন উৎসব। বেশ কিছু সর্বজনীন রাস উৎসবে দেখা যায় থিমের প্রাধান্য। নবদ্বীপের পুরনো মঠে-মন্দিরে আজও মেলে সাবেক ঝুলনের আমেজ। যেমন মহাপ্রভু মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের ঝুলন নয়, হয় শ্রীচৈতন্যের ঝুলন উৎসব। উৎসব চলে এক পক্ষকাল, প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত। তেমনই সমাজবাড়িতে বৃন্দাবনের গোস্বামী মতে তেরো দিন ধরে ঝুলন হয়। এ ছাড়াও মোহন্তবাড়ি, রাধা মদনমোহন মন্দির, গোবিন্দবাড়ি, গোরাচাঁদের আখড়া, বলদেববাড়ি ইত্যাদি মঠ-মন্দিরে উৎসবের ভিন্ন ভিন্ন মেজাজ দেখা যায়।
সকল নিয়মরীতি এবং আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মহাসমারোহে পালিত হয় ইসকন মায়াপুরের ঝুলন উৎসব। পাঁচদিনের ঝুলন যাত্রায় প্রতিদিন রাধাকৃষ্ণের আরাধনার পাশাপাশি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ চন্দ্রোদয় মন্দির থেকে নাম সংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে ইসকনের গোয়ালের পাশে ঝুলন যাত্রার মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয় রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ৷ হয় প্রচুর ভক্ত সমাগম।

আরও পড়ুন-তালিকায় নেই তেজস্বী, কমিশনকে তুলোধনা

রাধারমণ জিউয়ের ঝুলনযাত্রা
নদিয়ার শান্তিপুরের বড়গোস্বামী বাড়িতে কয়েকশো বছর ধরে সাড়ম্বরে হয়ে আসছে রাধারমণ জিউয়ের ঝুলনযাত্রা। উৎসব চলে তিনদিন ধরে। দেবতাকে পরানো হয় এক-এক ধরনের বেশ। মূল পুজোটি হয় পূর্ণিমার দিনে। সেই দিন উদয়াস্ত ভাগবত পাঠ হয়। এই উপলক্ষে হয় অসংখ্য ভক্ত সমাগম। ঝুলন উপলক্ষে নিবেদিত হয় বিশেষ অন্নভোগ। বড়গোস্বামী ছাড়াও শ্যামচাঁদ মন্দির, গোকুলচাঁদ মন্দিরে এবং অন্যান্য বিগ্রহবাড়িতে এই উৎসব হয়ে থাকে। কিছু কিছু জায়গায় হয় পুতুল ঝুলন। এখানে নানা ধরনের পুতুল দিয়ে সাজানো হয়। কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে সাড়ম্বরে পালিত হয় ঝুলন উৎসব।
খড়দহের শ্যামসুন্দরের ঝুলন উৎসব এবং ইছাপুরের নবাবগঞ্জের ঝুলনের মেলাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আজও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর ও লালবাগেও সাড়ম্বরে ঝুলন উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে। বিক্রি হয় দেশীয় পুতুল। হাওড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হয় ঝুলন উৎসব। কোথাও বাড়িতে, কোথাও মন্দিরে।
রাধাবল্লভ জিউয়ের ঝুলন
কলকাতার ঝুলনের কথা উঠলে, প্রথমেই ‘ঝুলনবাড়ি’-র নাম আসে। এই নামেই পরিচিত বউবাজারের রামকানাই অধিকারীর বাড়ি। প্রায় ২০০ বছর আগে এই পরিবারের আদিপুরুষ কৃষ্ণমোহন অধিকারী ঝুলন উৎসবের প্রচলন করেন। পরে তাঁর পৌত্র রামকানাই অধিকারী সাড়ম্বরে এই উৎসবের প্রচলন করেছিলেন। এই বাড়ির রাধাবল্লভ জিউয়ের ঝুলন উৎসব আজও বহু মানুষকে আকৃষ্ট করে। এখানে ঝুলন উৎসব হয় পাঁচদিন ধরে। এই পাঁচদিনে শ্রীকৃষ্ণকে বিভিন্ন বেশে সাজানো হয়। প্রথম দিন রাখাল বেশ, দ্বিতীয় দিন যোগী বেশ, তৃতীয় দিনে সুবল বেশ, চতুর্থ দিনে হয় কোটাল বেশ এবং শেষ দিনে রাজবেশ। প্রথম দিনে হোম করে ঝুলন উৎসবের সূচনা করা হয়। এর পরে দেবতাকে এক-এক দিন এক-এক রকমের ভোগ নিবেদন করা হয়। পুরনো ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও পাঁচদিনের এই উৎসবে আত্মীয় সমাগম হয়। এই পরিবারে ঝুলন উৎসবের আরও এক আকর্ষণ ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর। রামকানাই নিজে ভাল পাখোয়াজ বাজাতেন। তিনি যদুভট্টের সঙ্গে সঙ্গত করতেন। যদুভট্ট ছাড়াও আসরে এককালে আসতেন অঘোরনাথ চক্রবর্তী, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী প্রমুখ শিল্পী। পরবর্তীকালে আসতেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, ভি জি যোগ, মালবিকা কানন, এটি কানন, হীরু গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পী। অতীতের মতো আজও বসে সঙ্গীতের আসর। এখনও বিভিন্ন শিল্পী এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
কৃষ্ণলীলা ও মহাভারতের ঘটনা
চালতাবাগান অঞ্চলে বিনোদ সাহা লেনে বঙ্কুবিহারী সাহা প্রতিষ্ঠিত রাধাকৃষ্ণের ঝুলন মন্দিরে ঝুলনযাত্রা উপলক্ষে বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। এই উপলক্ষে বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়। মন্দির চত্বরে ছোট ছোট ঘরগুলির মধ্যে কৃষ্ণলীলা ও মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি মাটির পুতুল দিয়ে সাজানো হয়। ওই একই রাস্তায় মণ্ডল পরিবারের রাধাকৃষ্ণ জিউয়ের মন্দিরে ঝুলন হয়। একাদশী থেকে দ্বিতীয়া পর্যন্ত মোট সাতদিন ধরে চলে এই ঝুলন উৎসব। প্রথম দিন রাধাকৃষ্ণের যুগল বেশ, দ্বিতীয় দিনে অনন্ত দর্শন, তৃতীয় দিনে রাসলীলা, চতুর্থ দিনে নৌকাবিলাস, পঞ্চম দিনে চন্দ্রাবলীকুঞ্জ, ষষ্ঠ দিনে রাইরাজা এবং সপ্তম দিনে মিলন বেশ। ঝুলন উপলক্ষে প্রতিদিন নিবেদন করা হয় লুচি, মালপোয়া, সুজি ইত্যাদি। ঝুলন উপলক্ষে ওই এলাকার আর এক আকর্ষণ জমজমাট মেলা। এই মেলা বসে বিনোদ সাহা লেনে এবং বিবেকানন্দ রোডের ফুটপাথের কিছুটা অংশ জুড়ে।
কুমোরটুলি অঞ্চলে গোকুলচন্দ্র মিত্র প্রতিষ্ঠিত রাধামদনমোহন জিউয়ের মন্দিরে সাড়ম্বরে পালিত হয় ঝুলন উৎসব। এই উপলক্ষে বহু ভক্ত সমাগম হয়।
দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ রোডে বাওয়ালির মণ্ডল পরিবারের উদয়নারায়ণ মণ্ডল প্রতিষ্ঠিত মদনমোহন জিউয়ের মন্দিরে, যা বড় রাসবাড়ি বলে পরিচিত, আজও পালিত হয় ঝুলন উৎসব। এখানে ঝুলন হয় তিনদিনব্যাপী। এই সময় প্রতিদিন ভোরে দেবতাকে ডাবের জলে স্নান করানো হয় এবং প্রতিদিন নতুনভাবে সাজানো হয়। ঝুলন উপলক্ষে বসে নাম সংকীর্তনের আসর। প্রতিদিন ২৫-৩০ রকমের ফলের নৈবেদ্য, লুচি, সুজি নিবেদন করা হয়।

Latest article