দিল্লিতে ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ম্যানেজারই এবার ডিজিটাল প্রতারণার শিকার!

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী দিল্লিতে। প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচতে ভয়ে দফায় দফায় টাকার জোগান দিয়ে গিয়েছেন ওই প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী।

Must read

নয়াদিল্লি: খোদ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ম্যানেজারই ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব খোয়ালেন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী দিল্লিতে। প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচতে ভয়ে দফায় দফায় টাকার জোগান দিয়ে গিয়েছেন ওই প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী। এই ঘটনা দেশে ডিজিটাল অ্যারেস্টের মতো প্রতারণা চক্রের বাড়বাড়ন্ত এবং জনসচেতনতার অভাবকেই ফের বেআব্রু করে দিল। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিল্লির গুলমোহর পার্কের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার নরেশ মালহোত্রা (৭৮) এক ভয়ঙ্কর ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হয়েছেন। গত ছয় সপ্তাহ ধরে ভয়ে তিনি ২১টি লেনদেনের মাধ্যমে মোট ২২.৯২ কোটি টাকা ১৬টি ভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেছেন। প্রতারকরা নিজেদের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং মুম্বই পুলিশের অফিসার পরিচয় দিয়ে তাঁকে ‍‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর ভয় দেখায় এবং ব্ল্যাকমেইল করে এই বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। নরেশ মালহোত্রার পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীরা বলছেন, গত ছয় সপ্তাহ ধরে ওই ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে আপাতদৃষ্টিতে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি নিয়মিত কলোনির পার্কে হাঁটতে যেতেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন এবং ক্লাবেও যেতেন। কিন্তু এই সাধারণ জীবনের আড়ালে তিনি প্রতারকদের ভয়ে, তাদের নির্দেশমতো একের পর এক লেনদেন করে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে, তিনি যেন প্রতারকদের সম্পূর্ণ সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন। ওই প্রতারকরা তাঁকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল এবং কাউকে কিছু জানাতে বারণ করেছিল। প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী আরও স্বীকার করেন, তাঁর স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণভাবে প্রতারকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল বলে তিনি তাদের ফাঁদে পড়ে যান।

আরও পড়ুন-ল্যান্ডিং গিয়ার আঁকড়ে বিমানযাত্রা কিশোরের

সংবাদমাধ্যমকে মালহোত্রা জানিয়েছেন, গত ১ অগাস্ট থেকে এই আর্থিক প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। প্রথমে একটি ফোন কলে তাঁকে জানানো হয় যে তাঁর পরিচয় সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর তাঁকে গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয় এবং বলা হয় যে, কেবল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এবং সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই আশ্বাসে এবং গ্রেফতারের ভয়ে তিনি প্রতারকদের নির্দেশ মতো কাজ করতে শুরু করেন। ৪ অগাস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালহোত্রা তিনটি ভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায় ২১ বার গিয়ে ২১টি আরটিজিএস ট্রান্সফার করেন। তাঁর টাকা যেসব ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্ক, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক উল্লেখযোগ্য। এই ব্যাঙ্ক শাখাগুলি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, যেমন উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। দিল্লিতে কোনো অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়নি। দিল্লি পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ফিউশন অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অপারেশন্স শাখার যুগ্ম কমিশনার রজনীশ গুপ্ত বলেন, এই ধরনের ‍‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ মামলায় অর্থ স্থানান্তরের পর্যায়গুলি খুবই সাধারণ। মালহোত্রার ২২.৯২ কোটি টাকা ১৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪,২৩৬টি লেনদেনের মাধ্যমে সাতটি স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে প্রতারকদের ধরা এবং টাকা ফ্রিজ করা কঠিন হয়ে যায়। তবে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২.৬৭ কোটি টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে ফ্রিজ করা সম্ভব হয়েছে। নরেশ মালহোত্রা প্রায় পাঁচ দশক ধরে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে উচ্চপদে কাজ করেছেন। তিনি ২০২০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর বাড়ির কাছেই তিনটি ব্যাঙ্কের শাখা ছিল, যেখান থেকে তিনি লেনদেনগুলি করেছিলেন। প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে ছয় সপ্তাহ পর, গত ১৯ সেপ্টেম্বর মালহোত্রা সাহস করে পুলিশের কাছে ২২.৯২ কোটি টাকা হারানোর অভিযোগ দায়ের করেন এবং সেদিনই এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। প্রতারকরা সেদিন আরও ৫ কোটি টাকা দাবি করলে মালহোত্রা রুখে দাঁড়ান। তিনি বলেন যে, তিনি কোনও ব্যক্তিগত সংস্থার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবেন না, বরং সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেবেন। এই কথা শুনে প্রতারকরা ফোন কেটে দেয়। এই ঘটনাটি ডিজিটাল প্রতারণার ভয়াবহতা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবের দিকে নতুন করে আলোকপাত করেছে। পুলিশ এই মামলার তদন্ত করছে এবং চেষ্টা করছে বাকি টাকা উদ্ধার করতে ও প্রতারকদের ধরতে। প্রশ্ন উঠছে, একজন অভিজ্ঞ ব্যাঙ্ক অফিসারের যদি এই হাল হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা কোথায়?

Latest article