ব্রাসিলিয়া: তাঁর বন্ধু তথা ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে ২৭ বছর ৩ মাস জেলের সাজা শুনিয়েছে সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট। সাজা ঘোষণার আগে বন্ধুকে বাঁচাতে চাপ তৈরি উদ্দেশ্যে হুমকিও দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তারপরেও শীর্ষ আদালতের কড়া শাস্তির মুখে ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। দেশে নির্বাচনে পালাবদলের পর ট্রাম্পের কায়দাতেই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বোলসোনারো। এই অভিযোগে ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। সেই মামলাতেই নজিরবিহীনভাবে কড়া রায় শোনালো সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট। ২০২২ সালে ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচনে বামপন্থী নেতা লুলার কাছে হেরে যান চরম দক্ষিণপন্থী নেতা বোলসোনারো। ভোটে হেরে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আরও পড়ুন-নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি
তাঁর সমর্থকরা ব্রাজিলের সংসদ ভবন আক্রমণ করার চেষ্টা করেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে মামলা করে পরবর্তী সরকার। ট্রাম্পের ঘোষিত বন্ধু বোলসোনারোকে দোষী সাব্যস্ত করে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, ২৭ বছর তিন মাস জেলের ভিতরেই থাকতে হবে তাঁকে। অভ্যুত্থান ঘটানোয় অভিযুক্ত বোলসোনারো এতদিন গৃহবন্দি ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে বন্ধু বোলসোনারো বেকায়দায় পড়তেই এই বিষয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশ করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই ঘটনা ব্রাজ়িলের জন্য ভাল হল না। পাশাপাশি আরও এক ধাপ এগিয়ে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স জানান, এই অন্যায় রায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে আমেরিকা। কিন্তু একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় ও অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কীভাবে পদক্ষেপের কথা বলতে পারেন শীর্ষ মার্কিন পদাধিকারী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বোলসোনারো ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের অতি-সক্রিয়তায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে ব্রাজিলেও। বোলসোনারোর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক বরাবরই অতি-ঘনিষ্ঠ। একাধিকবার প্রাক্তন ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে চলা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ‘বন্ধু’ ট্রাম্প। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের উপর ৫০ শতাংশ শুল্কও চাপিয়েছে আমেরিকা। যদিও ব্রাজিলের উপর ট্রাম্পের ক্রোধের আসল কারণ যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বোলসোনারোর বিরুদ্ধে চলা বিচারপ্রক্রিয়া, তা নিয়ে বিশেষ লুকোছাপা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই পরিস্থিতিতে পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে ব্রাজিলের উপর আমেরিকা আরও বেশি শুল্ক চাপিয়ে অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বোলসোনারো তাঁর দেশে অভ্যুত্থানের চেষ্টার যে গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত, তাতে সর্বোচ্চ সাজা ৪৩ বছরের জেল। তবে প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বয়স এবং স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সাজার মেয়াদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। চার বিচারপতির মধ্যে তিন বিচারপতিই ওই সাজার পক্ষে রায় দিয়েছেন। ইতিমধ্যে বোলসোনারোর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তম বেঞ্চের কাছে আবেদন জানাবেন।