সাহিত্যে বৈশাখী হাওয়া

বৈশাখ বর্ষবরণের মাস। রবীন্দ্র-মাস। উৎসবমুখর এই মাসে প্রকাশিত হয়েছে ‘কথাসাহিত্য’ এবং ‘অনুভূতি’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। সংখ্যা দুটির উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য পত্রিকা ‘কথাসাহিত্য’। প্রকাশিত হয় প্রতি মাসে মাসে। সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের সম্পাদনায়। বাংলা বছরের শুরুতে বেরিয়েছে বৈশাখী সাহিত্য সংখ্যা। এই বিশেষ সংখ্যায় আছে দুটি উপন্যাস। ‘স্বর্ণপদক ১৯৭৪’ লিখেছেন হর্ষ দত্ত। সম্রাটকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে কাহিনি। তাকে ঘিরে রয়েছে আরও কয়েকটি চরিত্র। বিশুদ্ধ সামাজিক উপন্যাসটি মূলত সম্পর্কের। ছাত্রশিক্ষকের রসায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। কোথাও ছাত্রের প্রতি জাগে স্নেহ, কোথাও তাচ্ছিল্য, প্রতিহিংসা। চরিত্রগুলো যেন বড় বেশি চেনা, রক্তমাংসের। সবমিলিয়ে ভাল লাগে উপন্যাসটি। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘কিউনিফর্মলিপি রহস্য’। অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্যর লেখা। একটি বাঙালি যৌথ পরিবারের ছবি আঁকা হয়েছে। মূল চরিত্র টুপ্সি। আশেপাশে আছে বেশকিছু চরিত্র। উপন্যাসটি ঘটনাবহুল। রহস্যময়। অদ্ভুত টান রয়েছে। এক দমে পড়ে ফেলা যায়।

আরও পড়ুন-ভুয়ো উন্নয়ন দাবি প্রধান শিক্ষকের, পূর্ণ তদন্ত চাইল তৃণমূল, সাংসদ তহবিলের টাকা তছরুপ শান্তনুর

আছে নানা রঙের সাতটি গল্প। প্রচেত গুপ্তর ‘একটি হলুদ প্রজাপতি’, সাত্যকি হালদারের ‘ট্যুর গাইড’, সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দুই পারের মা’, অদিতি বসুরায়ের ‘মর্জিনা বিবির গল্প’, ইন্দ্রনীল সান্যালের ‘সুমেধ ও শ্রমণা’, রাজা ভট্টাচার্যর ‘ভয়’, সায়ন্তনী ভট্টাচার্যর ‘যথেষ্ট’। লেখকরা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।
প্রবন্ধ আছে ছটি। সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের লেখার শিরোনাম ‘প্রসঙ্গ : রবীন্দ্রনাথ’। লোকমুখে শোনা একটি কথা দিয়ে বৈঠকি চালে প্রাবন্ধিক রচনাটি শুরু করেছেন। কেন্দ্রে দুটি চরিত্র, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শ্রীরামকৃষ্ণ। তারপর উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ। লেখক প্রশ্ন তুলেছেন— ‘রবীন্দ্রনাথ কি আমাদের কাছে শুধু কবি হিসেবেই বড়? না সংগীত-সাধক সংগীত-গায়ক হিসেবে? কিন্তু শুধু তাই নয়। তিনি শান্তিনিকেতনে যে অপূর্ব বঙ্গীয়-কলা সমন্বয় সৃষ্টি করেছিলেন, তাই-বা ক-জন বাঙালি পেরেছেন, ক-জন ভারতীয়ই বা পেরেছেন?’ সত্যিই তো, পারেননি কেউ। পারা সম্ভবও নয়। তাই তো তিনি রবীন্দ্রনাথ। প্রবন্ধের শেষে লেখক বলেছেন— ‘যে গতিমুখ রবীন্দ্রনাথ ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন, সে গতিমুখ থেকে সরবার আর উপায় ছিল না।’

আরও পড়ুন-ভারী বৃষ্টিতে হড়পা বান আফগানিস্তানে, মৃত্যু তিনশোরও বেশি!

অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যর প্রবন্ধের শিরোনাম ‘বৈশাখী কবি’। লেখাটি পড়ে জানা যায়, গ্রীষ্মের প্রতি রবীন্দ্রনাথের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। বালক বয়স থেকেই। প্রাবন্ধিকের কথায়— ‘বৈশাখ মাসটা কবির কাছে জাগরণের মাস, নববর্ষে উৎসবের মাস।’
পীতম সেনগুপ্ত, বিনোদ ঘোষাল, রাজর্ষি বিশ্বাস, স্বাতী গুহ-র প্রবন্ধগুলোও যথেষ্ট উৎকৃষ্ট মানের। নন্দিতা ভট্টাচার্যর ভ্রমণ ‘কাশ্মীরের ক্যারিশ্মা’, চন্দন সেনের নাটক ‘এবং ললিতা…’ সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। আছে সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পদ্মনাভ দাশগুপ্তর ধারাবাহিক।
সযত্নে সাজানো হয়েছে কবিতার ডালি। লিখেছেন সুবোধ সরকার, সেবন্তী ঘোষ, পঙ্কজ সাহা, সুদীপ্ত মাজি, অগ্নি রায়, নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য, অরিন্দম দাস, রাজশ্রী মৌনীরুদ্র, সুদীপা দেব। সবমিলিয়ে আন্তরিক আয়োজন। প্রচ্ছদ ও অলংকরণে শুভ্রনীল ঘোষ। দাম ১০০ টাকা।
নতুন পত্রিকা ‘অনুভূতি’। প্রকাশিত হয়েছে বর্ষবরণ সংখ্যা। অমর মিশ্রর সম্পাদনায়। বঙ্গে সেকালের নববর্ষ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কয়েকটি লেখা। অয়ন চৌধুরীর লেখার শিরোনাম ‘ইতিহাস অনুসন্ধান : প্রসঙ্গ বাঙালির নববর্ষ’। তিনি লিখেছেন— ‘নববর্ষ পালন বাঙালিদের প্রাচীন ঐতিহ্য হলেও, নববর্ষ উৎসব প্রায় চার হাজার বছরের প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৫০০ অব্দ পর্যন্ত প্রায় সব ক’টি প্রাচীন সভ্যতাতেই নববর্ষ পালিত হত।’ তাঁর লেখাটি পড়ে আরও জানা যায়— ‘মেসোপটেমিয়ায় নববর্ষ শুরু হত এই নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনীয় নববর্ষ পালিত হত মহাবিষুব এবং আসিরিয়ায় পালিত হত জলবিষুব-এর দিন।’ লেখাটি শুধুমাত্র বাঙালির নববর্ষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, তুলে ধরেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নববর্ষ পালনের ইতিহাস।

আরও পড়ুন-শাহরুখই সেরা মালিক, বিতর্কের আবহে গম্ভীর

অপূর্ব চক্রবর্তীর লেখার শিরোনাম ‘সেকালের বর্ষবরণ’। তাঁর মতে— ‘বর্ষ শেষের উৎসব পালনেই বাঙালি অভ্যস্ত ছিল বহুকাল।’ কলকাতা শহরের চড়কের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। মূলত উত্তর কলকাতার। এও জানিয়েছেন— ‘আসলে পয়লা বৈশাখ তো ছিল ওই খাতাওয়ালা অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের পরব। প্রধানত হালখাতা অনুষ্ঠান।’ সেকালের পাশাপাশি একালের ছবিও ফুটে উঠেছে লেখায়।
বৈষ্ণব পদাবলীর উপর একটি চমৎকার গদ্য উপহার দিয়েছেন সম্পূর্ণা চক্রবর্তী। শিরোনাম ‘বৈষ্ণব পদাবলীর পঞ্চ রস’। শুরু করেছেন শান্ত রস দিয়ে। পর্যায়ক্রমে এসেছে বাকি রসগুলো। গুরুগম্ভীর বিষয়, স্বল্প পরিসরে সহজ সরল ভাষায় বিশ্লেষণ করেছেন।
গল্প লিখেছেন অর্ঘ্য ঘোষ, অভীক দাস, মিঠুন মুখার্জি, জ্যোতির্ময়ী সাহা দাস, অদিতি ঘোষ, অংশুমান রায়। রম্য রচনা উপহার দিয়েছেন সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও আছে তৈমুর খান, সৈয়দ হাসমত জালাল, প্রদীপ আচার্য, সৌরভ বিশাই প্রমুখের কবিতা এবং কয়েকটি অণুগল্প। পত্রিকাটি নবীন। সম্ভাবনা আছে। তবে বানানের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। প্রচ্ছদশিল্পী বৃষ্টি। দাম ১৮০ টাকা।

Latest article