বিশ্বের প্রাচীনতম চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ুর্বেদ। যা অনেক রোগ এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তিবৃদ্ধিতে সাহায্য করে আয়ুর্বেদ। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী ঠিকমতো রান্না করা খাবারই সহজে হজমযোগ্য হয়। আসলে খাবারের কারণেই যত গোলমাল। রান্না করা খাবার পর্যাপ্ত নরম এবং চিবানোর যোগ্য না হলে সমস্যার শুরু।
পুজোগন্ডার দিনে আমাদের খাবারের গুনমান কিন্তু বজায় থাকেনা। সুসিদ্ধ খাবারের চেয়ে ভাজা, পোড়া বেশি খাওয়া হয়। তাই এখন থেকে খাবারের গুনমাণটা আবার বজায় রাখা শুরু করুন।
আরও পড়ুন-লক্ষ্মীর সরায় পুজো এখনও টিকে, আশায় শিল্পীরা
ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ পরিমাণে একটু বেশি
এখন থেকে নিশ্চই চাইবেন ওজনটা কমুক। তাহলে দুপুরের খাবারটাই হোক আপনার দিনের মধ্যে প্রধান খাবার। কারণ এই সময়টাই খাদ্য সবচেয়ে ভাল হজম হয় বাদবাকি সময় খাবারগুলো সাপোর্টিভ মিল হিসেবেই কাজ করে।
তাই দুপুরে পরিপূর্ণ মিল নিন অথবা একেবারে দিনের শুরুতে অর্থাৎ জলখাবারে। এই দুটোর একটা যেন ভারী হয়।
টক্সিন মুক্ত হোক শরীর
এখন শরীরে সবচেয়ে বেশি যার ঘোরাফেরা তা হল টক্সিন। বেড়েছে ভুঁড়ি, জমেছে মেদ সেই সঙ্গে টক্সিনভয় শরীর। তাই ওজন কমাবেন তো বটেই সঙ্গে ডিটক্সিফিকেশন মাস্ট। সেই সঙ্গে জরুরি শরীরকে একটু রেস্টিং টাইমে রাখা। রোল, বিরিয়ানি, মাটন, লুচি-পরোটা, সফ্ট ড্রিঙ্কস, অ্যালকোহল সব নিয়ে ভারী শরীরটাকে বেঁধে দিন নিয়মে।ডিটক্সিফিকেশন মানে রক্ত পরিশোধন করা। এটি লিভারের মাধ্যমেও হয় আবার কিডনি, অন্ত্র, ফুসফুস, লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম এবং ত্বকের মাধ্যমেও বিষাক্ত পদার্থ নির্মূল করে শরীর। কিন্তু এগুলো যখন কাজ করতে পারে না তখন তখন সমস্যা তৈরি হয়। তাই তখন বাইরে থেকেও ডিটক্সিফিকেশন জরুরি। এর পাশাপাশি এখন হয়তো পেটটা একটু গোলমেলে হয়ে আছে, হজম হচ্ছে না খাবার। আসলে এত কিছু খাওয়া হয়েছে যে পেট মোটামুটি বিদ্রোহ করেছে। গ্যাস, অম্বলের সমস্যাও রয়েছে।
একটু-আধটু উপোস মন্দ নয়
অবশ্যই এখন থেকে আবার বেশ কিছুদিন শরীরটাকে হালকা রাখার চেষ্টা করুন। যদিও উপোসকে ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত করা হয় কিন্তু এটি আসলে আমাদের ক্যালোরির পরিমাণ কমিয়ে আনতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই নিজেকে হালকা পাতলা করে রাখতে উপোস থাকুন দুটো মিল। তবে দীর্ঘ উপোসের মাধ্যমে ক্যালোরি কমাতে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। মিল স্কিপ করতেই পারেন, যেমন, এখন থেকে একমাস সকালে একটু ভারী জলখাবার খেয়ে দুপুরে শুধু লিক্যুইড খেয়ে থাকতে পারেন। স্যুপ চলতেই পারে। সন্ধ্যাবেলা একটা বড় বোল চিকেন, এগ, ভেজিটেবল স্প্রাউট স্যালাড খেয়ে নিন। রাতে আবার স্যুপ জাতীয় কিছু খেয়ে শুয়ে পড়ুন। অর্থাৎ জলখাবারের বদলে দুপুরে পূর্ণ মিল নিতে পারেন। বাকী খাবারগুলো যেন পরিমাণে কম হয়।
আরও পড়ুন-লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকায় লক্ষ্মী আরাধনা দুরামারি গ্রামে
জল খান পর্যাপ্ত
রোজ খালি পেটে কুসুম গরম জল খান। এই জল টিস্যুর গভীরে যায় এবং দ্রুত চর্বি গলাতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ মতে, এটি আমাদের পাচক অগ্নি অর্থাৎ মেটাবলিজমকে উন্নত করে, টক্সিন বের করে, ওজন কমতে শুরু করে। এছাড়াও সারাদিনে পর্যাপ্ত জল খান। জল খেলে বারবার ইউরিন হলে টক্সিন আপনা হতেই বেরিয়ে যাবে।
গোটা আমলকী রোজ
যাঁরা দুপুরে ভাতটাই পছন্দ করেন অবশ্যই খান কিন্তু পরিমাণটা কমিয়ে ফেলুন। এই একমাস এক কাপ ভাত মেপে খান। সঙ্গে রোজ একটা গোটা আমলকী সেদ্ধ খান। রোজ করুন তাহলে ওজন তো কমবেই সেই সঙ্গে থাইরয়েড থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ভাল কাজ দেবে। এতদিনের ভালমন্দ খাওয়া-দাওয়ার পর মুখটা ছেড়ে যাবে আমলকীতে।
ডিটক্স জল
অনেকেই খালি পেটে মধুর সঙ্গে গরম জল খান। তবে, আয়ুর্বেদ মতে মধু গরম জলে নয় বরং
হালকা গরম জলে পান করা উচিত। এটাও খুব
ভাল ডিটক্সিফিকেশন।
তাজা ফলের রস বা ডিটক্সিফাইং ওয়াটার খান। বাড়িতে তৈরি করা যায় এই ডিটক্স ওয়াটার।
হজমের গোলমাল
হজমশক্তি বাড়াতে
পুজোয় দেদার খেয়ে অগ্নিমান্দ্য হয়েছে। তাই এখন দুর্বল হজমশক্তি ফেরাতে হাতের কাছেই রয়েছে দাওয়াই।দারচিনি খুব ভাল হজম করায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়। কোলেস্টেরল কমাতে এবং ফ্যাট বার্ন করতেও সাহায্য করে। খালি পেটে দারচিনির সঙ্গে ১ চা চামচ মধু খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। দারচিনি সারারাত ভিজিয়ে সেই জলটাও খেতে পারেন।
সকালে গোটা গোলমরিচ ভেজানো জল খেতে পারেন, এতে ওজন যেমন কমবে, শরীরের জমে থাকা এতদিনের টক্সিনও বেরিয়ে যাবে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করবে।
দিনে দু’বার ভেষজ চা বা আদা দিয়ে চা খান। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী আদা শরীরে পেশি শিথিল করে। গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম থেকে মুক্তি দেয়।
ত্রিফলা খুব ভাল এক্ষেত্রে। বিভিটকি, হরিতকি এবং আমলা হল তিনটি ফল যেগুলি ত্রিফলা নামে পরিচিত। এটা খুব শক্তিশালী পাচক টনিক। ত্রিফলা ভেজানো জল খান সকালে।
আয়ুর্বেদিক ওষুধে, মৌরি বীজ প্রায়শই হজমশক্তি বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। গ্যাস, ফোলাভাব এবং পেটে ব্যথা কমাতে পারে। তাই মৌরি ভেজানো জল খেতে পারেন নিয়মিত।
পরিপাক ঠিক রাখতে চিরতার রস খান। ওজন কমাতে সজনে পাতা খান নিয়মিত। এগুলো আয়ুর্বেদের। অব্যর্থ দাওয়াই।
আরও পড়ুন-ধর্ষণের অভিযোগে বিদ্ধ এমবাপে, ওড়ালেন ফরাসি তারকা
নিয়মে ফিরুক ত্বকও
অনিয়মে ত্বকের জেল্লা বেশ কমেছে। রাত জেগে, তেলা খাবার খেয়ে চোখের তলায় এক পরত কালি পড়েছে। নিমপাতা বাটা আর গুঁড়ো চন্দনের একটা প্যাক লাগান এখন থেকে সপ্তাহে তিনবার। প্যাক লাগিয়ে চোখের ওপরটা শুধু দুটো শসার টুকরো অথবা আলুর গোল স্লাইস কেটে বসিয়ে দিন। শসার বা আলুর রসটা চোখে শোষিত হবে, দেখবেন ধীরে ধীরে ছোপ উঠে যাচ্ছে। চোখের ক্লান্তি কমছে।
বাদাম ত্বকের হারানো পুষ্টি ফিরিয়ে আনে, ত্বক আবার স্বাস্থ্যকর দেখায়। তাই বাদামের গুঁড়ো, তাজা ক্রিম বা দুধে ভিজিয়ে ওটা মুখে লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে তিনদিন করা যেতে পারে।
হলুদ আর চন্দনের জুড়ি নেই আয়ুর্বেদে। হলুদ, চন্দনের প্যাক টোনারেরও কাজ করবে। ত্বকে এতদিন যে ক্ষতি হয়েছে তা রিপেয়ার করবে। ত্বক আবার ঝরঝরে দেখাবে।