কৃষিঘাতী বিদ্যাঘাতী বিজেপি দূর হটো

দেশে মরছে কৃষক, সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ডবল ইঞ্জিন রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেননি। দেশে এক লক্ষেরও বেশি স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। সর্বাধিক বেহাল দশা বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে। নারী নির্যাতনেও উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে, আর গোটা দেশে এক লাফে নিগ্রহ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। ওরা আবার বড় বড় কথা বলে কোন মুখে? প্রশ্ন তুলছেন দেবু পণ্ডিত

Must read

দুটি তথ্য। পুজোর রেশ মিলিয়ে যেতে না যেতেই। আর এই দুটি তথ্যের সৌজন্যে বেআব্রু মোদির ভারত। দেশের উলঙ্গ চিত্র।
প্রথম চিত্র কৃষি সংক্রান্ত
ক’দিন আগেই চলে গেল কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। আসছে দ্বীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজো। ধান্যে বসতে লক্ষ্মী। সেই ধানের জোগানদাতা কৃষক। অর্থাৎ, দেশের কৃষকরাই লক্ষ্মীর প্রকৃত উপাসক। আর সেই কৃষকদের কী অবস্থা মোদির ভারতে!
মাত্র এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন বিজেপি শাসিত দেশের ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক ও কৃষিশ্রমিক— যা দেশের মোট আত্মহত্যার ৬ শতাংশ! এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। পিছিয়ে নেই কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশও। কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যার নিরিখে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে এই দুই রাজ্য।

আরও পড়ুন-পাড়ায় সমাধানে আবেদনের ৭২ দিনের মাথাতেই নয়া রাস্তা

কোত্থেকে পাওয়া গেল এই তথ্য?
অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’ (এনসিআরবি)-র ২০২৩ সালের অপরাধমূলক বার্ষিক পরিসংখ্যান সংক্রান্ত রিপোর্টে এবার এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এনসিআরবির রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে দেশে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত মোট ১০,৭৮৬ জন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ৪,৬৯০ জন কৃষক এবং ৬,০৯৬ জন কৃষিশ্রমিক। যা দেশের মোট আত্মহত্যার সংখ্যা (১,৭১,৪১৮)-র ৬.৩ শতাংশ। এই ৪,৬৯০ জন কৃষকের মধ্যে ৪,৫৫৩ জন পুরুষ, ১৩৭ জন মহিলা। আর নিহত ৬,০৯৬ জন কৃষিশ্রমিকের মধ্যে ৫,৪৩৩ জন পুরুষ এবং ৬৬৩ জন মহিলা আত্মহত্যা করেছেন।
দেশের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে (৪,১৫১), যা কৃষিক্ষেত্রে মোট আত্মহত্যার ৩৮ শতাংশেরও বেশি। তৃতীয় স্থানে আর একটি বিজেপি শাসিত রাজ্য, মধ্যপ্রদেশ (৭৭৭)। সাধারণত, কৃষিক্ষেত্রে আত্মহত্যাকে দু’টি পৃথক শ্রেণিতে ভাগ করে থাকে এনসিআরবি। এর মধ্যে একটি হল কৃষক আত্মহত্যা, যাঁরা কৃষিশ্রমিকদের সাহায্যে কিংবা তাঁদের সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব জমিতে চাষ করেন। দ্বিতীয়টি হল, কৃষিশ্রমিক আত্মহত্যা, অর্থাৎ যাঁরা মূলত অন্যের জমিতে কাজ করেন এবং যাঁদের আয়ের প্রধান উৎস কৃষিশ্রম। এই দুই মিলিয়েই ২০২৩ সালের তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করেছে ডবল ইঞ্জিন শাসিত মহারাষ্ট্র। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালেও দেশে কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের আত্মহত্যার নিরিখে এগিয়ে ছিল এই রাজ্য। মোদি সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?
এখনও এলাকার মহাজনদের উপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। মাথায় চাপে ঋণের বোঝা, সঙ্গে চড়া সুদের হার। এত করেও শেষমেশ ফলন না হলে প্রায়শই চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হন কৃষকরা। সুলভে শস্যঋণ, কৃষক আয় সহায়তা (পিএম-কিসান) প্রকল্প এবং সাশ্রয়ী মূল্যের শস্য বিমায় কৃষকদের ছবিটা যে মোটেই বদলায়নি, সেটা তথ্য-উপাত্তই বলে দিচ্ছে।
এবং এই প্রসঙ্গে কথায় কথায় রাজ্যের দোষ দেখানো কুচুটে কুভেন্দু, হাফ প্যান্ট মন্ত্রী অবলাকান্ত প্রমুখ গেরুয়া জীবরা জেনে রাখুন, দেশের কিছু কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০২৩ সালে কৃষিক্ষেত্রে কোনও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে এনসিআরবি-র রিপোর্ট। এই রাজ্যগুলির তালিকায় জ্বলজ্বল করছে পশ্চিমবঙ্গের নাম।
লক্ষ্মী আরাধনার আদর্শ ভূমি এখনও এই পশ্চিমবঙ্গ।

আরও পড়ুন-পাড়ায় সমাধানে আবেদনের ৭২ দিনে নতুন রাস্তা পেলেন সন্দেশখালিবাসী

দ্বিতীয় চিত্র শিক্ষা সংক্রান্ত
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে দেশে এক লক্ষেরও বেশি স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। ওই স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করে সাড়ে ৩৩ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া। এই ধরনের স্কুলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের হিসাবে দেশে মোট ১,০৪,১২৫টি স্কুলে একজন করে শিক্ষক রয়েছেন। ওই স্কুলগুলিতে ৩৩,৭৬,৭৬৯ জন পড়ুয়া ভর্তি রয়েছে। অর্থাৎ, এই ধরনের প্রতিটি স্কুলে গড়ে ৩৪ জন করে পড়ুয়া পড়াশোনা করে।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুসারে, মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন, ডবল ইঞ্জিন শাসিত উত্তরপ্রদেশে এমন ধরনের স্কুল আছে ৯,৫০৮টি। যে যোগীরাজ্যের নিরন্তর প্রশংসায় পঞ্চমুখ কাঁথির মেজ খোকা কুভেন্দু গদ্দারী সেই ডবল ইঞ্জিন শাসিত যোগীরাজ্যে একজন শিক্ষক নিয়ে চলা এই স্কুলগুলিতে রয়েছে ৬,২৪,৩২৭ জন পড়ুয়া। একজন শিক্ষক থাকা স্কুলগুলিতে গড় পড়ুয়ার নিরিখে সকলের আগে রয়েছে চণ্ডীগড়। সেখানে এই ধরনের স্কুলগুলিতে গড়ে ১,২২২ পড়ুয়া ভর্তি রয়েছে। তার পরেই রয়েছে দিল্লি। সেখানে একজন শিক্ষকে চলা স্কুলগুলিতে গড় পড়ুয়া সংখ্যা ৮০৮।
সুতরাং, কেবল লক্ষ্মী আরাধনার যোগ্যতা হারায়নি ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যগুলো, সরস্বতী পুজোর অধিকারও হারিয়েছে তারা।
এদের আবার বড় বড় জ্ঞানের বুকনি!
পরিশেষে কিঞ্চিৎ ভিন্ন প্রসঙ্গ। নারী নিরাপত্তার অনুজ্জ্বল ছবি ডবল ইঞ্জিন শাসিত রাজ্যে-রাজ্যে। নারী নির্যাতনে উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে, দেশে এক লাফে নিগ্রহ বেড়েছে ১৫ শতাংশ, বলছে জাতীয় সমীক্ষা। এরপর পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের দিকে আঙুল তোলা দূর অস্ত, নারী সুরক্ষার অছিলায় ওদের নাটক করাও সাজে না।
যোগী শাসিত রাজ্যজুড়ে মহিলাদের জন্য বিশেষ ‘পিঙ্ক বুথ’ স্থাপন, মহিলা বিট কনস্টেবলের সক্রিয়তা, উইমেন হেল্পলাইন ১০৯০ নম্বর, ইভটিজিং রোখার জন্য অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড, রাস্তাঘাটে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারি বৃদ্ধি প্রভৃতি সব পদক্ষেপই তো বিফলে যাচ্ছে। নানা ছুতোয় লঙ্কা গুঁড়ো এ-রাজ্যে যাঁরা বিতরণ করছেন তাঁরা বরং বড়বাজার থেকে গুঁড়ো লঙ্কা ভর্তি ট্রাক উত্তরপ্রদেশে পাঠান। কাজে দেবে।

Latest article