সোশ্যাল মিডিয়ার সোনার দিন

চোখে চোখে কথা বলার দিন গেছে। গেছে পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ডের যুগ। টেলিগ্রামের হা-পিত্যেশের সময়ও অতীত। কিংবা গেছে ট্রাঙ্ককলের ঘন্টি শোনার উদগ্রীব ক্ষণও। এবং অস্তমিত টেলিফোনের স্বর্ণযুগও। মুঠোফোন এবং ইন্টারনেটের যুগলবন্দিতে মাতোয়ারা বিশ্ব এর পরেও থেমে না থেকে দৌড়চ্ছে রোজ। ক্যাচলাইন একটাই, জীবন চাইছে আরও বেশি, আরও বেশি কিছু! আর এরই ফলশ্রুতি সোশ্যাল মিডিয়ার নিত্যনতুন বিস্ফোরণ। এ নেশা কী যে নেশা তার বিশ্লেষণে অমিতকুমার মহলী

Must read

আমরা প্রত্যেকেই এখন ভার্চুয়াল নাগরিক, এ-বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর এই নাগরিকত্ব ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি আমাদের প্রদান করে। ডিজিটাল যুগে যোগাযোগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম যে সোশ্যাল মিডিয়া তা কারও অজানা নয়। ঘরে বসেই সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে অসীম দূরে বসে থাকা মনের মানুষের সঙ্গে অতি-সহজেই মনের ভাব বিনিময় করে নিতে পারছি কখনও বা একটা এসএমএস, কখনও একটা মেল পাঠিয়ে। আবার কখনও ভিডিও বা অডিও কলের মাধ্যমে। এরও কয়েক ধাপ এগিয়ে ভার্চুয়াল নাগরিকত্ব নিয়ে আমরা প্রবেশ করছি মেটাভার্সে। সেখানে নাকি হুবহু আপনার-আমার চেহারার মতো থ্রি-ডি মডেল থাকবে। তার নিজস্ব এলাকা থাকবে, ঘর-বাড়ি হবে। শপিং করতে যাবে। আপনার ওপরে কোন পোশাক কেমন মানাচ্ছে তা আপনার থ্রি-ডি মডেলের ওপর পরেই দেখতে পারবেন এবং অনলাইনে কিনে নিতে পারবেন। তার পর সেটি আপনার বাস্তব জীবনে উপভোগ করবেন। ভারতীয় পাঞ্জাবি গায়ক দালের মেহেন্দি সম্প্রতি মেটাভার্সে জমিও কিনে নিয়েছেন। যার নাম ‘বাল্লে বাল্লে ল্যান্ড’।

আরও পড়ুন-মোদিবাবু এবার তুমি ভোকাট্টা হবে, দুর্যোধন-দুঃশাসনের থেকেও ভয়ঙ্কর এই বিজেপি : মুখ্যমন্ত্রী

দৈনন্দিন জীবনে রোটি, কাপড়া ও মকানের পাশাপাশি অন্য আরেক চাহিদার রূপ নিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, পেশা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিনোদনের অংশ হয়ে উঠেছে। সকলের ভাব, মত, দুঃখ, কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার অন্যতম চাবিকাঠি এই প্ল্যাটফর্মগুলি। বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া আজ আমরা অচল। প্রতিদিনের জীবনে আমরা একচেটিয়া ব্যবহার করে যাচ্ছি মাধ্যমগুলো। কমবেশি পারদর্শী সকলে। আমাদের দাদু-ঠাকুরমার আমলে এসবের কোনও চল না থাকলেও আজ চুটিয়ে ব্যবহার করছেন তাঁরাও। হয়তো বিনোদনের জন্য, নিজের সময় কাটানোর জন্য। তবে শুধু বিনোদন নয়, আপনার কাজের জন্যই জানতে হবে। বরং না জানলে আপনার ক্ষতি। সংবাদমাধ্যমে কাজ করতে গেলে তো ব্যবহার করতেই হবে। আগে কোনও সংবাদ কভার করতে গেলে সংবাদ গ্রহণ করে অফিসে এসে তারপর লিখতে হত। ছবি অ্যানালগ ক্যামেরাতে তুলে অফিসে ফিরে নেগেটিভ থেকে ছবি ডেভেলপ করে তারপর কাগজে ছাপানো হত। ব্যয় হত অনেক সময়। কিন্তু এখন তা প্রয়োজন পড়ে না। লোকেশনে দাঁড়িয়েই সংবাদ লেখা হয়ে যায়। আর মোবাইলে ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপ করাটাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। অন্যদিকে আবার আদালতের শুনানিও হচ্ছে জুম-গুগল মিটের মতো লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে। এতকিছু আমরা জেনে নিয়েছি তবুও অনেক কিছুই আমাদের অজানা। বরং জানলে চমকাবেন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির ইতিহাস-ভূগোল।

আরও পড়ুন-বোসের পাশে বসাও পাপ, ডাকলেও রাজভবনে যাব না, ইস্তফা দিন রাজ্যপাল

ইতিহাস—
সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিহাস খুবই আকর্ষণীয়। এটি এমন এক যাত্রা যা কয়েক দশক ধরে চলছে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, ডিজিটাল যোগাযোগের বিবর্তন দিয়ে৷ ১৯৭০-এর দশকে বুলেটিন বোর্ড সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইন যোগাযোগের ধারণাটির আবির্ভাব হয়। এই সিস্টেমে মডেম ব্যবহার করে অতি সহজে মেসেজ, ফাইল পাঠানো যেত। এরপর ১৯৮৫ সালে দ্য হোল আর্থ লেক্ট্রনিক লিঙ্ক সংক্ষেপে ‘দ্য ওয়েল’ নামে এমন একটি প্ল্যাটফর্মের খোঁজ পাওয়া গেল যেখানে বিভিন্ন বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা শুরু হয়। এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া জগতে একের পর এক মাইলস্টোন পার হয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার ধারণাটি আরও পরিষ্কার হয় যখন ১৯৯৭ সালে ‘সিক্স ডিগ্রি’ নামে এক প্ল্যাটফর্ম বাজারে আসে। সম্ভবত এটি প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেখানে প্রতিটি ইউজারের নিজস্ব প্রোফাইল তৈরি করা ও অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ধারণাটি আসে। এরপর ফ্রেন্ডস্টার, লিঙ্কডইন, মাইস্পেসের মতো একাধিক প্ল্যাটফর্মের দেখা মেলে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে সবথেকে বড় বিপ্লবটি ঘটে ২০০৪ সালে মার্ক জুকারবার্গের হাত ধরে। জুকারবার্গ এবং তাঁর কলেজের রুমমেটরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেসবুক চালু করেন। প্রথমদিকে ফেসবুক শুধুমাত্র কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও জনপ্রিয়তা বাড়লে ফেসবুক ইউনিভার্সিটির বাইরেও ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে এবং তাতে নিউজ ফিড, ফটো শেয়ারিংয়ের মতো আরও অনেক বৈশিষ্ট্য যোগ হয়। এরপর ট্যুইটার (বর্তমানে এক্স), হোয়াটস্অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টিকটক বাজারে আসে।
শীর্ষ প্ল্যাটফর্মগুলি—
স্টাটিস্টা (Statista) পরিসংখ্যান অনুসারে জানুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত গোটা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কগুলির মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে যেখানে—

আরও পড়ুন-ভাষা-­সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের হোতা বিজেপিকে একটিও ভোট নয়

ফেসবুক : এখনও বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। যার ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটিরও বেশি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। ভারতেই সবথেকে বেশি। কী মজার বিষয় তাই না! ফেসবুক— যা ভারতেরই সৃষ্টি না, আমেরিকার ইউনিভার্সিটির একদল পড়ুয়ার গল্প। সেই আবিষ্কারের আজ সব থেকে বেশি লাভ ওঠাচ্ছে আমাদের দেশ। ফেসবুকে কেউ বন্ধত্বের অনুরোধ বা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালে এবং অন্যজন গ্রহণ করলে ভার্চুয়ালি সেই দুটি মানুষ একে অপরের বন্ধু হয়।
বন্ধুত্বের বাইরেও এখানে রয়েছে পেজ, গ্রুপ। ফেসবুক পেজে আমরা প্রতিনিয়ত কোনও ব্যক্তি বা কোম্পানির সুবিধা বিষয়ে আরও জানতে পারি। মূলত পেজে কোনও ব্যক্তি বা কোম্পানি ব্র্যান্ড হিসাবে পরিচয় পায় এবং সেখান থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে চায় তখন পেজ-এ আরও বেশি করে জোর দেয়। তবে সকল পেজ ব্যবহারকারীরাই আর্থিক সুবিধার কথা ভাবে না। আরেকটি মজাদার বিষয়, প্রথমদিকে যখন আমরা ফেসবুক ব্যবহার করতাম, মা-বাবা বকতেন কিন্তু আজ তাঁদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়াতে তাঁরাও সেখানে মগ্ন। বাবা ফেসবুকে এতই ব্যস্ত যে খাবার টেবিলে দশ-মিনিট পর আসছেন!

আরও পড়ুন-ভারী বৃষ্টিতে হড়পা বান আফগানিস্তানে, মৃত্যু তিনশোরও বেশি!

ইউটিউব : মূলত ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। বর্তমানে গুগলের মালিকাধীন। ২.৪৯ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা রয়েছে। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করলে এবং নির্দিষ্ট সংখ্যা ভিউজ (দর্শকের পরিমাণ) পার করলেই তা থেকে বেশ টাকাও রোজগার করা যায়। ইউটিউবে শুধু ভিডিও আপলোড করেই বহু মানুষ সংসার চালাচ্ছে। শুধু সংসার বললে ভুল হবে, অনেকেই এখান থেকে টাকা রোজগার করে এলাহি জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত পরিচয় হচ্ছে, ফ্যান-ফলোয়ার বাড়ছে। সেলিব্রিটি হয়ে উঠছে। বিভিন্ন কোম্পানিগুলো তাদের জনসংযোগ বাড়াতে ইউটিউবের মতো মাধ্যমগুলিকে বিরাট ব্যবহার করছে। কিছু কিছু কোম্পানির একটা ভাল পরিমাণ আয় হচ্ছে। তারাও তাই ইউটিউবে কাজ করানোর লোক নিয়োগ করছে।

হোয়াটসঅ্যাপ : ২ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। মূলত গোপনীয়তার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম। খুবই দ্রুত এসএমএস পাঠাতে সক্ষম। ভিডিও-অডিও কল (ফোন) হোয়াটসঅ্যাপের অন্যতম সুবিধা। এন্ড-টু-এন্ডক্রিপটেড— সহজে বললে ফোনের দুই প্রান্তে থাকা দু’টি মানুষের কাছেই এই মাধ্যমে বলা কথোপকথন সীমাবদ্ধ থাকবে। সাধারণ ফোন কলে যেমন কল-রেকর্ডিংয়ের সুবিধা আছে হোয়াটসঅ্যাপে তা নেই, ফলে রাজনীতিকদের প্রিয় মাধ্যম এটি। কর্মক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এটি। অফিসের সমস্ত নোটিশ, কাজের আপডেট পাওয়ার আদর্শ জায়গা। কর্মক্ষেত্রের বাইরে রয়েছে পরিবারের গ্রুপ, হাউসিং সোসাইটির গ্রুপ, বন্ধুদের গ্রুপ। গ্রুপগুলিতে না থাকলে আপনি নিজেই বরং আলাদা হয়ে যাবেন। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে পেমেন্টের সুবিধাও চালু হয়েছে।

আরও পড়ুন-রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে তৃণমূল

ইনস্টাগ্রাম : ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম, ২ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সঙ্গে তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷ ছবি আপলোডিং করা দিয়েই যাত্রা শুরু করে পরে ভিডিও আপলোডের সুবিধাও আসে এবং সম্প্রতি রিল (ছোট আকারের ভিডিও)। রিল-ইনস্টাগ্রামে বিরাট জনপ্রিয়। ফেসবুক, ইউটিউবের যে পরিমাণ ব্যবহার কোনও প্রতিষ্ঠান করে সে তুলনায় এখানে অনেক কম। ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবহার এখানে বেশি। ইনস্টাগ্রাম বাকি সামাজিক মাধ্যমগুলির তুলনায় আরও ঝকঝকে।

টিকটক : বারবার বিবাদে থাকা টিকটক যদিও ভারতে বাতিল করা হয়েছে তবুও গোটা বিশ্বে এর ব্যবহার কম নয়, ছোট আকারের ভিডিও বা রিল ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকের ১.৫৬ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।
উপরের মাধ্যমগুলি ছাড়াও রয়েছে— এক্স (আগে ট্যুইটার), পিন্টারেস, ডিসকর্ড, রেডিট, টাম্বলার। এক্স-এ কোনও বন্ধুত্ব বা মেসেজিং সিস্টেম না থাকলেও এখানে ফলো এবং সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম আছে। এক্স-এ ছোট আকারের বার্তা পোস্ট করা হয়। সেগুলো আবার রি-পোস্ট, লাইক, শেয়ার করা যায়। এক্স মূলত কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কোনও বিভাগের ঘোষণামূলক মাধ্যম হিসাবে বেশি ব্যবহার হয়।
এক্স, যা আগে ট্যুইটার হিসেবে পরিচিত ছিল, এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহারকারীদেরকে সর্বোচ্চ ২৮০ অক্ষরের ‘পোস্ট’ লেখা এবং পড়ার সুযোগ দেয়। ব্যবহারকারীরা তাঁদের প্রোফাইলে ছবি, ভিডিও, লিঙ্ক এবং টেক্সট পোস্ট করতে পারেন তাঁদের ফলোয়ারদের উদ্দেশ্যে। এলন মাস্ক অক্টোবর ২০২২-তে ট্যুইটার কিনে নেন এবং ২০২৩ জুলাইয়ে এটির নাম পরিবর্তন করে ‘এক্স’ হিসেবে পুনর্নয়ন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ২০২৩ জুলাইয়ে, ট্যুইটার তার নীল পাখির লোগোকে বদলে স্টাইলাইজড ‘এক্স’ লোগো করেন। বর্তমানে এক্সে আবার পেইড সাবস্ক্রিপশনের ব্যবস্থা এসেছে যা তিনটি লেভেলে পাওয়া যায় : বেসিক, প্রিমিয়াম, এবং প্রিমিয়াম+।

আরও পড়ুন-জ্যোতির্বেত্তা

অন্যদিকে, পিনটারেস্ট এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেটি পিনবোর্ডের মতো কাজ করে। সেখানে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বিষয়ে ইমেজ, ভিডিও এবং লিঙ্ক সংরক্ষণ এবং তাদের নিজের পিনবোর্ডে সাজিয়ে রাখতে পারেন। এবং ফলোয়ারেরা সেই ছবি বা ভিডিওগুলোকে অতি সহজেই দেখতে পারেন। তবে কোন ছবি বা ভিডিওগুলো ফলোয়ারেরা দেখতে পাবেন তা নিশ্চিত করবে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের ব্যবহারকারী।
এ-ছাড়া ডিসকর্ড গোপনীয়তা সংরক্ষণ করা একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত ভয়েস চ্যাট, টেক্সট, ভিডিও চ্যাট এবং ফাইল ভাগাভাগির সুযোগ দেয়। এটি খুব বিশাল সম্প্রদায়করণ এবং গেমারদের মধ্যে অনেকটা জনপ্রিয়। ডিসকর্ডে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন থেকে সার্ভারে যুক্ত হতে পারেন, যেখানে তাঁরা আলাপ করতে এবং বিভিন্ন সামগ্রী শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি রেডিটও ইমেজ, ভিডিও শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি সংবাদ শেয়ারিংয়ের প্রতি বেশি জোর দেয়। সেখানে অতি সহজেই আমাদের চারপাশে ঘটে চলা নানান সংবাদের দ্রুত অ্যাক্সেস পাওয়া যায়। এছাড়া টাম্বলার ব্লগিংয়ের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়।
গ্রহণযোগ্যতা—
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের মাধ্যম হয়ে উঠলেও বেশ কিছু বিতর্ক রয়েছে। যার অন্যতম টিকটক। ২০২০ সালের জুন মাসে ভারতে টিকটক-সহ আরও কয়েকটি চিনা অ্যাপ বাতিল করে। তথ্যের গোপনীয়তা, জাতীয় নিরাপত্তার অপব্যবহারের উল্লেখ করে ভারত সরকার এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে। গত জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখেই ফেসবুক প্রধান মার্ক জুকারবার্গ ও টিকটক প্রধান শৌ জি চিউ আমেরিকি বিচার বিভাগের প্রশ্নের সম্মুখীন হন শিশু ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে। যেখানে বলা হয় ফেসবুক শিশু সুরক্ষা নিয়ে একদমই ওয়াকিবহাল নয় এবং টিকটক তথ্য সুরক্ষা নিয়ে। অন্যদিকে, চিন আবার গোটা বিশ্বের জনপ্রিয় মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে বাদ দিয়ে নিজস্ব কিছু প্ল্যাটফর্ম যেমন উই-চ্যাট, ওয়েইবো, লিটিল রেড বুকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। এ-সবই নাকি জাতির নিরাপত্তা আর গোপনীয়তার স্বার্থে।

আরও পড়ুন-প্রকাশ্যে ছবি, নির্যাতিতা বললেন বেআইনি কাজ করেছেন বোস

সমস্ত বিবাদের মাঝেই খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস্অ্যাপের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি। নিত্যনতুন সুবিধা নিয়ে হাজির হচ্ছে মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি। হচ্ছে রোজগারও। হোয়াটস্অ্যাপ তার সিস্টেমে চ্যানেল, পেমেন্ট মেথড বা স্টোরির মতো প্রযুক্তি লাগিয়ে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে চলছে। ফেসবুক ছবি, স্টোরি পোস্টের পাশাপাশি ফেসবুক বিজনেস বা মেটাভার্সের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া অধিক ব্যবহারের ফলে আমরা কোথাও আন-সোশ্যাল বা পারিপার্শ্বিক সমাজে অসামাজিক হয়ে উঠছি কি না সে-বিষয়েও আমাদের ভাবতে হবে।

Latest article