প্রতিবেদন : ভারতীয় ফুটবলে ইন্দ্রপতন! প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার তথা কোচ সুভাষ ভৌমিক। শনিবার সকাল ৭.৪০ নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৭৩। বুকে সংক্রমণ নিয়ে দু’সপ্তাহ ধরে সেখানে ভর্তি ছিলেন। কোভিড রিপোর্টও পজিটিভ ছিল। শুক্রবারই অসুস্থ সুভাষের ভাল চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পাশে ছিল তিন প্রধান ও আইএফএ-ও। কিন্তু কাউকে কিছু করার সুযোগই দিলেন না। না ফেরার দেশে চলে গেলেন সুভাষ (Subhas Bhowmick)।
আরও পড়ুন – প্রয়াত বিশিষ্ট ফুটবলার সুভাষ ভৌমিক, শোকবার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
জানা গিয়েছে, শনিবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তার পর চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেননি। এর পর দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন বিশিষ্ট এই প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ। কিডনি ও সুগারের অসুখে সাড়ে তিন মাস ধরে নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হচ্ছিল। বছর তিনেক আগে হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারি হয়েছিল।
অসুস্থতার মধ্যেও ময়দানের ‘ভোম্বল’ বলতেন, বলতেন, ‘‘আমার জীবনটা লড়াইয়ে পরিপূর্ণ। আমি হেরে পিছিয়ে আসার লোক নই।” সেই মানুষটাই জীবনের শেষ লড়াই হেরে গেলেন। ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তাঁর পায়ের শটের জোরে কেঁপে যেত জাল। তাই কলকাতা ময়দান ভালবেসে তাঁর নাম দিয়েছিল ‘বুলডোজার’। তাঁর সময়ে ফুটবলের ময়দানে নিজস্ব মেজাজে ফুল ফুটিয়েছিলেন।
ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের হয়ে দাপিয়ে খেলে একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন। ভারতের হয়ে জিতেছেন এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক। খেলোয়াড় হিসেবে সুভাষের অধ্যায়টা যতটা রঙিন ছিল তার থেকে তিনি বেশি সাফল্য পেয়েছেন কোচ হিসেবে। প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গুরু মেনে কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তার পর বাকিটা ইতিহাস। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান, চার্চিল ব্রাদার্স-সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন ক্লাবে সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করিয়েছেন। তিনবার জাতীয় লিগ জিতেছেন। তবে কোচ হিসেবে সুভাষের (Subhas Bhowmick) সেরা সাফল্য ২০০৩ সালে ইস্টবেঙ্গলের আশিয়ান কাপ জয়।
এমন এক বর্ণময় ফুটবল চরিত্রের আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ভারতীয় ফুটবলমহল। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফে শোকবার্তায় সভাপতি প্রফুল প্যাটেল বলেছেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবল আজ দরিদ্র হল। এ দেশের ফুটবলে সুভাষ ভৌমিকের বিশাল অবদান কোনও কিছু দিয়ে মাপা যাবে না।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিকের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ক্রীড়াগুরু সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।’ জনপ্রিয় চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও করোনার কারণে সুভাষের মরদেহ ময়দানের কোনও ক্লাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। নিমতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হল।