বোসের ভাষণে কন্যাশ্রী-লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রশংসা, সঙ্গে কেন্দ্রের বঞ্চনার কথাও

Must read

প্রতিবেদন : বাণিজ্য সম্মেলনের সাফল্য থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বাজেট অধিবেশনের সূচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose)। একইসঙ্গে তিনি এদিন সরব হন কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েও।

প্রথামাফিক রাজ্যপালের ভাষণ দিয়ে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সূচনা হয় সোমবার। রাজ্যপাল নিজের দীর্ঘ ভাষণের বেশ কিছুটা বাংলায় পাঠ করেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন তিনি। রাজ্যপাল জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বিগত ১৩ বছরে রাজ্যে অর্থনৈতিক বিকাশ ও অন্যান্য আর্থিক মাপকাঠির নিরিখে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০১০-’১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের জিএসডিপি ছিল ৪.৬১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৪-’২৫ সালে তা ১৮.১৫ লক্ষ কোটি টাকার সুবিশাল অঙ্ক স্পর্শ করেছে। রাজ্যের নিজস্ব কর সংগ্রহের পরিমাণ ২১,১২৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮৯,৯৮৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের কথা তুলে ধরে রাজ্যপাল (Governor CV Ananda Bose) জানান, ওই সম্মেলন অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০টি দেশের অংশগ্রহণ ছাড়াও দেশের ও বিদেশের শিল্প ও বাণিজ্য জগতের বহু রথী-মহারথী এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। সম্মেলনে আসার প্রস্তাব রূপায়িত হলে রাজ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও বাংলার যুবসম্প্রদায়ের জন্য অনেক বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রের সহায়তা না পাওয়ার ফলে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া আবাস যোজনা ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজে সবার প্রথমে থাকার বিষয়টিকে উল্লেখ করে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক অনুদানের বিষয়টি ও বঞ্চনার কথাও উল্লেখ করেন। রাজ্যপাল বলেন, দুয়ারে সরকার সারা বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী প্রকল্প। কৃষিক্ষেত্রে বাংলা শস্য ফলনের ঘনত্বে দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা। দেশের প্রধান রাজ্যগুলোর মধ্যে এই রাজ্য দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। রাজ্য সরকারের কাছে সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল নারী ক্ষমতায়ন। তাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো বিভিন্ন কর্মপ্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করে রাজ্যপাল জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার দরিদ্র ব্যক্তি, মা-শিশু, বৃদ্ধ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে উচ্চমানের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনে রাজ্যপাল তাঁর ভাষণে বলেন, বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন শিখর স্পর্শ করছে রাজ্য। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের বিষয়টিকে উল্লেখ করে তাঁর উক্তি, বর্তমানে রাজ্যের নয় কোটি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন এবং সূচনার পর থেকে মোট ৮৫.৭৫ লক্ষ উপকারভোগী এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১,০৯৮.৪৬ কোটি টাকা মূল্যের পরিষেবা লাভ করেছেন।

আরও পড়ুন- সাংগঠনিক পদের পরিবর্তনে ৩টি করে নাম দিন অরূপকে, বিধায়কদের নির্দেশ দিলেন নেত্রী

সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ইঙ্গিত নামে একটি উদ্ভাবনী টেলি মেডিসিন পরিষেবায়। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ১৩ বছরে ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা ১২ থেকে বেড়ে ৪২ হয়েছে, কলেজের সংখ্যা মোট ৫১৮টি এবং রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পে সমস্ত ছাত্রীর জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের শিল্পোদ্যোগের এবং উপযুক্ত বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

রাজ্যপাল জানিয়েছেন দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে মহিলা উদ্যোগপতিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাজ্যপাল এদিন বলেন, আর্থিক অপ্রতুলতা এবং কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পাওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার গ্রামীণ যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান ও আবাসন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছু হটেনি। নিজস্ব তহবিল থেকে কর্মশ্রী ও বাংলার বাড়ি প্রকল্প চালু রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নজির সৃষ্টি করেছে।

Latest article