গ্রাম চিকিৎসালয়

মুক্তি পেয়েছে ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’। তুলে ধরা হয়েছে এমন এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছবি, যেখানে ছিল না কোনও উন্নত চিকিৎসা-পরিষেবা। অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা সেই গ্রামে আসেন একজন এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক। তাঁকে কেন্দ্র করেই দানা বেঁধেছে কাহিনি। কেমন হল সিরিজটি? জানালেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিল ‘পঞ্চায়েত’। দর্শক এবং সমালোচকরা ভরিয়ে দিয়েছিলেন প্রশংসায়। ‘পঞ্চায়েত’-এর নির্মাতা দ্য ভাইরাল ফিভার বা টিভিএফ ৯ মে, দর্শকের দরবারে নিয়ে এলেন নতুন ওয়েব সিরিজ ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’। আগের সিরিজে লেগে ছিল সারল্য, গ্রামের মাটির গন্ধ। এবারেও তাই। নাগরিক জীবনের ঝাঁ-চকচকে ছবি দেখে দেখে ক্লান্ত দর্শকেরা এই সিরিজগুলো থেকে পাচ্ছেন চোখের আরাম, মনের আরাম। দ্য ভাইরাল ফিভার-এর প্রেসিডেন্ট বিজয় কোশি বলেছেন, ‘এই সিরিজের মাধ্যমে আমরা একটি হৃদয়গ্রাহী এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প তুলে ধরেছি। উপস্থাপন করেছি হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে।’
কাহিনির প্রেক্ষাপট এক প্রত্যন্ত গ্রাম। চালচুলোহীন, তাড়াহুড়োহীন অলস জীবন। সবথেকে বড় কথা, গ্রামে ছিল না কোনও দক্ষ চিকিৎসক। সেখানেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক হয়ে আসেন ‘গোল্ড মেডেলিস্ট’ ডাঃ প্রভাত সিনহা। নিজের বাবার বিশাল হাসপাতাল ছেড়ে তাঁর এই অজ পাড়াগাঁয়ে আসা শুধু মানুষের সেবা করার জন্যই। কিন্তু মুশকিল হল, এই গ্রামে কেউ তাঁর পরিষেবা নিতেই চান না। এর পিছনে আছে মূলত দুটি কারণ। একদিকে অশিক্ষার অন্ধকার, অন্যদিকে প্রভাতের আগে আসা শহুরে চিকিৎসকদের উদাসীনতা, অবহেলা। দ্বিমুখী ঘা খেতে খেতে এই গ্রামে কারও প্রত্যাশার শেষ বিন্দুটিও আর অবশিষ্ট নেই। তাছাড়া চিকিৎসালয় বা হাসপাতালের অবস্থাও বেহাল। সেই গ্রামে কি প্রভাতের মতো উজ্জ্বল ডাক্তার আদৌ মানানসই? একের পর এক পর্ব পার হয়ে যায় এই দ্বন্দ্বেই। শেষ পর্যন্ত একজনও রোগী চিকিৎসালয়ে আসেন কি না, তাই নিয়েই গল্প।
এমবিবিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ডাঃ প্রভাত সিনহার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমল পরাশর। ১৬ বছর ধরে অভিনয় করলেও তাঁকে ‘ট্রিপলিং’ সিরিজের কারণেই মূলত বেশি করে মনে রেখেছেন দর্শকরা। আগে সিরিয়াস চরিত্রে তাঁকে খুব একটা দেখা যায়নি। এই সিরিজে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। যোগ্য সঙ্গত করেছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই কর্মী, যথাক্রমে ফুটানিজি এবং গোবিন্দর ভূমিকায় অভিনয় করা আনন্দেশ্বর দ্বিবেদী এবং আকাশ মাখিজা।
হাতুড়ে ডাক্তার চেতকের ভূমিকায় যথাযথ অভিনয় করেছেন বিনয় পাঠক। কোনও ডিগ্রি ছাড়াই বছরের পর বছর গ্রামবাসীদের ভালবাসা এবং বিশ্বাস অর্জন করে চিকিৎসা করে চলেছেন তিনি। অসৎ উপায়ে। রোগ নির্ধারণ করেন গুগল ঘেঁটে। ওষুধপত্রের ব্যবস্থা হয়ে যায় চোরাই পথে। গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে।
এই সিরিজের প্রধান আকর্ষণ ইন্দু তথা নার্স দিদির ভূমিকায় অভিনয় করা গরিমা সিং। চরিত্রটি সৎ, পরিশ্রমী। স্বামী চলে গিয়েছেন তাঁকে ছেড়ে। অভাবের সংসার। একা হাতে সন্তানকে মানুষ করেছেন। ইন্দু যেন আসলে এই পোড়া দেশের মানবিক অবয়ব। নিজের সব গেলেও তিনি গ্রামের সবার জন্য ভাবেন, শিশুদের জন্য সময়মতো টিকা নিয়ে যান। সবাইকে আগলে রাখেন। অথচ দিন শেষে তাঁরই কপালে এসে ধাক্কা দেয় আবহমান ট্র্যাজেডি। কাঁদতে কাঁদতে দ্বিধায় ভোগেন। ভেঙে পড়েন। কাঙাল হন। তবু লক্ষ্যে থাকেন অবিচল। তিনি মানসিক রোগে ধুঁকতে থাকা মিথ্যে মানুষের দেশে বিরল এক সুস্থিরমতি জননী।
টানা ২৭ দিন শ্যুটিং হয়েছে ছত্তিশগড়ের গ্রামে।
সিরিজের নির্মাতা দীপককুমার মিশ্র গ্রামের সারল্য পর্দায় তুলে ধরতে সিদ্ধহস্ত। সেই কারণেই হয়তো কিছু সংলাপ এবং কিছু দৃশ্য ভাল লাগে। মন ছুঁয়ে যায়। তবে সবটাই যে ভাল, তা কিন্তু নয়। ভাল লাগার রেশ ক্ষণিকের। ‘পঞ্চায়েত’-এ ফুলেরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে দর্শকেরা যতটা মিশে গিয়েছিলেন, ভটকন্ডি গ্রামের ক্ষেত্রে ততটা হবে বলে মনে হয় না। কোথাও যেন একটা ফাঁক থেকে গেছে। অথচ ট্রেলার মুক্তির পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেকেই।
এরমধ্যে একটি বিতর্কে জড়িয়েছে সিরিজটি। বিনয় পাঠকের বিরুদ্ধে উঠেছে গল্প চুরির অভিযোগ। পরিচালক অনিন্দ্যবিকাশ দত্ত দাবি করেছেন, এই সিরিজের মূল গল্প, এমনকী চরিত্র তাঁর একটি স্ক্রিপ্ট থেকে নকল করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একগুচ্ছ স্ক্রিনশট পোস্ট করে জানিয়েছিলেন ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ সিরিজের মূল গল্প তাঁর স্ক্রিপ্ট কোয়াক শঙ্করের থেকে টোকা। তিনি নাকি প্রথমে তাঁর সিরিজে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে বিনয় পাঠকের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিনয় নাকি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে ‘গ্রাম চিকিৎসালয়’ সিরিজের ট্রেলার প্রকাশ্যে আসতে অনিন্দ্য দেখেন, সিরিজের গল্পের সঙ্গে তাঁর চিত্রনাট্যের দারুণ মিল, আর এই সিরিজে মুখ্য ভূমিকায় আছেন বিনয় পাঠকই। এই বিতর্কের প্রভাব অ্যামাজন প্রাইমের পাঁচ পর্বের সিরিজের উপর পড়ল কিনা, সেটা সময় বলবে।

Latest article