সুমন করাতি হুগলি: পুজোয় আড়ম্বর প্রয়োজন নেই তবে যেটা প্রয়োজন তা হল আচার ও নিষ্ঠা। অন্যথায় হতে পারে সর্বনাশ। তাই আড়ম্বরের দিকে নজর না দিয়ে নিষ্ঠা ভরে পুজো করাই কামারপুকুরের গুপ্তবাড়ির মূল লক্ষ্য। এই বাড়ির পুজো প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। কামারপুকুরের গুপ্তবাড়িতে পূজিতা হন শ্যামা। এই পুজো ‘বৈদ্যদের পুজো’ পুজো নামেই পরিচিত।
আরও পড়ুন-রাতের পর সকালেও তিনি সেই নবান্নেই
কামারপুকুরের গুপ্ত বাড়ির অনেকেই ছিলেন পেশায় বৈদ্য বা চিকিৎসক। সেই থেকেই পুজোর এই নাম। বাড়ির পুজোতে রয়েছে এক অদ্ভুত নিয়ম। দেবীকে এখানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। মূলত তার ভয়ংকর চণ্ডাল রূপের থেকে বাঁচতেই এই নিয়ম। জনশ্রুতি রয়েছে, একবার বাড়ির এক মহিলা খোলা চুলে সন্ধে দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। সারারাত তাঁর খোঁজ মেলেনি। পর দিন সকালে সেই মহিলার শাড়ির অংশ প্রতিমার ঠোঁটে আটকে থাকতে দেখা যায়। এরপর থেকেই সকলের বিশ্বাস, আচারে ত্রুটি হওয়ায় দেবী রুষ্ট হয়েছিলেন। এবং ওই মহিলাকে খেয়ে ফেলেছেন। তাই এই দেবীর পুজোয় নিষ্ঠাই সব।
দেবীর এখানে রুদ্র মূর্তি। রক্তঝরা জিভ, ঠোঁটের দু’দিকে থাকে রক্তে ভেজা শাড়ির আঁচলের অংশ। তন্ত্রবিধিতে পূজিতা দেবীর অঙ্গসজ্জায় থাকে তির। পুজো হয় একাসনে। ঘট তুলে পুরোহিত সেই যে পুজোয় বসেন, সব শেষে সুতো কেটে তবেই উঠতে পারেন।গুপ্ত পরিবারের ১৩ তম প্রজন্মের বংশধর অপূর্ব গুপ্ত বলেন, বংশানুক্রমে শুনে আসছি, এটা রণক্ষেত্রের মায়ের পুজো। পুজোর আড়ম্বর নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা থাকে না। কিন্তু আচার, নিষ্ঠা-ভক্তিতে ত্রুটি থাকা চলবে না। ভয়-ভীতির জন্যই মাকে লোহার শিকল বেঁধে রাখার রীতি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।