মানবতার পূজারি গুরু নানক

Must read

‘এক ওঙ্কার’-এর বার্তা ছড়িয়ে ছিলেন মানুষটি। এক ওঙ্কারের অর্থ এক ঈশ্বর, যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিতে অবস্থান করেন এবং চিরন্তন সত্য ধারণ করেন। এই বার্তার মাধ্যমে তিনি বলতে চেয়েছিলেন ঈশ্বরের প্রতি ধ্যান এবং বিশ্বাস রাখা জরুরি। সমস্ত মানবজাতির একতা যা নিঃস্বার্থ সেবা প্রদান করে এবং সমস্ত প্রাণীর আশীর্বাদ ও সমৃদ্ধির জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গৃহস্থ জীবন যাপনের সৎ আচরণ ও সরল জীবনের বার্তা দেয়। তাঁর অনুগামীদের বলা হয় শিখ। যা সংস্কৃত শব্দ শিষ্য এবং শিক্ষার মিশ্রণ। পালি ভাষায় যাকে শিখিও বলা যেতে পারে। কে তিনি?
পিতা কল্যাণচাঁদ দাস বেদী ও মা তৃপ্তির পুত্র গুরু নানক। যিনি প্রচার করেছিলেন যে সৃষ্টির প্রতিটি অংশে একমাত্র ঈশ্বর আছেন এবং তিনিই চিরন্তন সত্য। তিনি সাম্য, প্রেম এবং দয়ার উপর ভিত্তি করে আধ্যাত্মিক ও সামাজিক বার্তা দিয়েছিলেন। জাতিভেদ প্রথা এবং সব ধরনের বৈষম্যের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি সমস্ত মানুষের মধ্যে সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়েছিলেন।
নানকের জন্মকথা ও শৈশব
গুরু নানক ১৪৬৯ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানের তালওয়ান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। নানকের জন্ম তারিখ নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে তবে জানা যায় হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে কার্তিক মাসে জন্ম তাঁর। যা সাধারণত কার্তিক পূর্ণিমা নামে পরিচিত। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অক্টোবর-নভেম্বর।
গুরু নানকের শৈশবকাল কেটেছে পরিবারের গবাদি পশুপালন ও সুফি ও সাধুদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। কুড়ি বছর বয়সে তিনি সুলতানপুরে চলে আসেন এবং সেখানে বেশ কয়েক বছর হিসাবরক্ষকের কাজ করলেও আধ্যাত্মিক অনুশাসনের প্রতি তাঁর মনোযোগ ছিল বেশি। ছোট থেকেই তিনি স্বতন্ত্র ভাবধারার মানুষ ছিলেন। নানকের বয়স যখন পনেরো বছর, তখন তাঁর বাবা একদিন তাঁকে কুড়ি টাকা দিয়ে বাজারে যেতে এবং কিছু জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে বলেন। আর বললেন তা যেন লাভজনক হয়। বাবা নানকের সঙ্গে বাড়ির পরিচারককেও পাঠালেন। নানকের সঙ্গে সেই পরিচারক বালা চুহা কানায় পৌঁছালেন। পথে নানকের ফকিরদের একটি দলের সঙ্গে দেখা হল। তিনি মনে মনে ভাবলেন আমার কাছে যখন এই টাকা রয়েছে তখন আমি এই ফকিরদের খাবার খাইয়ে দিই এটাই আমার কাছে সবথেকে লাভজনক হবে। তিনি তৎক্ষণাৎ খাবার কিনে তাদের বিলাসবহুলভাবে খাওয়ালেন। তারপর তিনি বাড়িতে ফিরে এলেন। পরিচারক নানকের বাবাকে সব খুলে বললে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হলেন।
এরপর তিনি নানককে ভ্রমণের ব্যবসার কথা বললে তাতে নানক একেবারেই রাজি নন। তিনি তাঁর ঈশ্বর এবং সেই সংক্রান্ত বিষয়ে তেই বেশি আগ্রহী।

আরও পড়ুন-ট্রফি জয়ের স্বাদ চান অধিনায়ক, ফাইনালে বৃষ্টির পূর্বাভাস, চিন্তায় দু’দল

এরপরেও বাবা তাঁকে বলেন, ‘‘তুমি যদি ব্যবসা পছন্দ না করো তাহলে তুমি কোন পদে চাকরি করো।’’ নানকের স্পষ্ট উত্তর— ‘‘আমি ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের একজন দাস। আমি আমার প্রভুর সেবায় সত্যতা এবং পূর্ণ হৃদয়ের সাথে আমার কর্তব্য পালন করব।’’ চিন্তিত পিতা এরপর নানকের মনকে জাগতিক বিষয়ের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন তিনি নানককে জমি চাষের কাজ দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত করলেন। এতে কোনও লাভ হল না। গবাদি পশুরা প্রতিবেশী খেতে ঢুকে খেত নষ্ট করছিল এবং নানা অভিযোগ আসছিল তখন পিতা নানককে তাঁর অলসতার জন্য তিরস্কার করলেন। নানক উত্তর দিলেন, আমি অলস নই কিন্তু আমার নিজের খেত পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত আছি। বাবা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার খেত কোথায়? নানক উত্তর দিলেন, আমার দেহই হল চাষাবাদ।
বিনয় হল সেচের জন্য জল। আমি ভগবানের পবিত্র নামের বীজ দিয়ে খেত বপন করেছি।
সন্তুষ্টি হল আমার খেতের ঝাড়। নম্রতা হল তার বেড়া। ভালবাসা এবং ভক্তির সঙ্গে বীজ অঙ্কুরিত হলে একটি ভাল ফসল ফলবে। মন ঘোরাতে চিন্তিত বাবা তাঁকে একবার একটি ছোট দোকানের দায়িত্ব দেন। কিন্তু নানক দোকানের সমস্ত জিনিসপত্র সাধু ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেন।
জনশ্রুতি এই যে, প্রায় ত্রিশ বছর বয়সে নানকের এক রহস্যময় অভিজ্ঞতা হয়েছিল। নদীতে স্নান করার সময় নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। সবার ধারণা হয় যে তিনি ডুবে গেছেন। তাঁর কোনও খোঁজ মিলছিল না এবং এটাই বিশ্বাস করা হয় যে, তার অন্তর্ধানের সময় ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সংযুক্তি ঘটে এবং তিনি অমরত্বের সন্ধান পান, ঈশ্বরের দ্বারা জ্ঞানপ্রাপ্তিও ঘটেছিল। গুরু নানক ছিলেন প্রথম দশজন শিখ গুরুর একজন। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বাবা নানক নামেও তিনি পরিচিত। প্রতিবছর তাঁর জন্মদিন বিশ্বব্যাপী গুরু নানক গুরুপুরব হিসেবে
পালিত হয়। ভারতে এটি গুরু নানক জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়।

আরও পড়ুন-জয়পুরে স্কুলের পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যু ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ার

গুরু নানকের পাঁচটি নীতি
বন্দ ছাকো
গুরু নানকের বার্তা ছিল এই যে ঈশ্বর আমাদের যা কিছু দেন তা গরিব দুঃখী অভাবীদের মধ্যে ভাগ করে ভোগ করা উচিত।
কিরাত কারো
এর অর্থ হল সত্যিকারের জীবনযাপন করা আমাদের আত্ম সুখের জন্য অন্যদের প্রভাবিত না করা, কঠোর পরিশ্রম করা এবং সৎভাবে উপার্জন করা।
নাম জপো
নাম জপ মানে সত্য ঈশ্বরের নাম জপ করা, এটি ক্রোধ, লোভ, মোহ, অহংকার এবং কাম— এই পাঁচটি মন্দকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঈশ্বরের নামের ধ্যানের উপরে জোর দেন।
সরবত দা ভাল্লা
জাতি-লিঙ্গ এবং ধর্ম নির্বিশেষে অন্যের সুখের জন্য প্রার্থনা করুন প্রত্যেকেরই অন্যের মঙ্গল কামনা করা উচিত।
ভয় ছাড়াই সত্য কথা বলুন
সর্বদা নির্ভয়ে সত্য কথা বলার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন। হয় যুদ্ধে আমরা জিতব নয় যুদ্ধে হেরে যাব। কৌশিক ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহেবে বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এক ঈশ্বরের নামে ধ্যান এবং বিশ্বাস এটি সমস্ত মানবজাতির একতা যারা নিঃস্বার্থ সেবা প্রদান করে এবং সকল প্রাণীর আশীর্বাদ ও সমৃদ্ধির জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারের সন্ধান করে এবং বেহেস্তের জীবন যাপনের সময় সৎ আচরণ ও জীবিকা নির্বাহ করা।

নানকের জীবনের রহস্যময় অভিজ্ঞতা
ছোট থেকেই নানকের মধ্যে ছিল প্রবল ঈশ্বরচিন্তা এবং নানান জিজ্ঞাসা।
পরিবারের লোকেরা তাঁর এত আধ্যাত্মিকতার প্রতি আকর্ষণ দেখে অল্প বয়সেই নানকের বিয়ে দিয়ে দেন।
এরপর নানকের সন্তানও হয়, সন্তানের জন্মের পর তাঁর মধ্যে দার্শনিক চিন্তা আরও বাড়তে থাকে। খুশবন্ত সিংয়ের হিস্ট্রি অফ দ্য সিক্স বই অনুসারে তিনি মারদানা নামে একটি মুসলিম কবি দলে যোগ দেন যারা প্রতি রাতে গান গাইত। অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার উপর তারা গুরুত্ব দিত। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা আগে নানক নদীতে স্নান করতে যেতেন।
জীবনের ৩০ বছর বয়সে পৌঁছে, একদিন ভোরবেলা নদীতে স্নান করতে গিয়ে এক রহস্যময় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন গুরু নানক। যদিও তিনি একে তাঁর ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ বলেই বর্ণনা করেছেন।
নানক বলেছেন ঈশ্বর তাঁকে পান করার জন্য এক কাপ অমৃত দিয়েছিলেন। সঙ্গে নানককে এও বলেন, ‘‘আমি তোমার সঙ্গে আছি। তোমার মাধ্যমে আমার নাম মহিমান্বিত হবে। যে তোমাকে অনুসরণ করবে আমি তাঁকে রক্ষা করব। পৃথিবীবাসীকে প্রার্থনা করতে শেখাও। জগতের পথ দেখে বিব্রত হবে না। জীবনে দাতব্য (দান) অজু (পরিচ্ছন্নতা), সেবা (সেবাকার্য) এবং সিমরান (প্রার্থনা)-এর উপর জোর দাও। এটাই হোক তোমার জীবনের লক্ষ্য।’’
সেই যে তিনি জলে ডুবেছিলেন, তিনদিন তিনরাত ধরে তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি নিখোঁজ ছিলেন। আত্মীয় প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন যে নানক নদীতে ডুবে গেছেন। কিন্তু চতুর্থ দিনে সবাইকে অবাক করে নানককে ফের দেখতে পাওয়া যায়। নানক এরপরই ফকিরের দলে গিয়ে যোগ দেন। তিনি বারবার বলতে শুরু করেন, ‘‘হিন্দু নেই মুসলমান নেই। সবাই শুধু মানুষ।’’
নানক তাঁর বার্তা ছড়িয়ে দিতে হেঁটে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তাঁর শিক্ষা প্রচারের জন্য শ্রীলঙ্কা, বাগদাদ এবং মধ্য এশিয়া ভ্রমণ করেন। তাঁর শেষ যাত্রা ছিল মক্কা এবং মদিনায়। ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।
তাঁর এই ভ্রমণকে বলা হত ‘উদাসিস’। সম্পূর্ণ খালি পায়ে হেঁটে তাঁর এই পরিভ্রমণ ছিল। নানক হিন্দু সাধু এবং মুসলিম ফকিরের পোশাকের মিশ্রণে তৈরি বিশেষ পোশাক পরতেন। তিনি পণ্ডিত সুফিসাধক এবং অন্যান্য ধর্মীয় ব্যক্তির সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।
নানক তাঁর ‘এক ঈশ্বর’ এই মতবাদ প্রচারের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি মক্কায় এক মসজিদে ছিলেন দীর্ঘ সময়। সেখানে কাবার দিকে পা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এই কাজটিকে ঈশ্বরের প্রতি গুরুতর অসম্মান বলে মনে করেছিলেন প্রার্থনাকারীরা। তাঁরা নানককে প্রশ্ন করেন কেন তিনি এমন কাজ করেছেন? উত্তরের নানক বলেছিলেন, ‘‘তাহলে আমায় এমন একদিকে ঘুরিয়ে দিন যেখানে কোনও ঈশ্বর বা কাবা নেই!’’ অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় নানকের এই কথার সঙ্গে সঙ্গে গোটা মসজিদ ঘুরতে শুরু করেছিল। অর্থাৎ নানক বলতে চেয়েছিলেন ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান।
গুরু নানক একবার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ভ্রমণকালে একটি পাহাড়ের পাদদেশে পিপুল গাছের নিচে বসে ছিলেন। পাহাড়ের উপরে বালি ওয়ানধারি নামে একজন মুসলিম সাধু থাকতেন পাহাড়ের উপরে তখন একটি জলের ঝরনা ছিল।
সেই ঝরনার জল গুরু নানক সংগ্রহ করতেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এই অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ওঁর জনপ্রিয়তা দেখে মুসলিম সাধু খুব ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন এবং তিনি ঝরনা থেকে জল তুলতে নিষেধ করেন।
গুরু নানকের শিষ্য মুসলমান সাধুর এই বারণের কথা জানান। গুরু নানক তাঁকে বলেন— ‘‘ভয় পেও না। ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমাদের জন্য অতি শীঘ্রই জল পাঠাবেন।’’ দেখা গেল অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পাহাড়ের ওপরে যে ঝরনা ছিল তার জল শুকিয়ে গেল।
বরং নানক যেখানে বসে পাহাড়ের নিচে সাধনা করতেন সেখানে একটি ঝরনা দেখা গেল। সেই সাধু অত্যন্ত রেগে নানকের উদ্দেশ্যে একটি বড় পাথর ছুঁড়ে মারলেন। একটুও বিচলিত না হয়ে গুরু নানক তাঁর খোলা হাত দিয়ে পাথরটিকে থামিয়ে দিলেন।
পাথরের ওপর তাঁর হাতের ছাপ এখনও বিদ্যমান। তারপর সেই সাধক গুরু নানকের কাছে এসে তাঁর পায়ে প্রণাম করলেন এবং ক্ষমা চাইলেন।
গুরু নানক হেসে অহংকারী ও হিংসাপরায়ণ মানুষটিকে ক্ষমা করেন। সেই ঝরনার পাশে এখন একটি সুন্দর মন্দির রয়েছে, যার নাম ‘পুঞ্জা সাহেব।’
তাঁর ভ্রমণ নিয়ে অনেক রহস্যময় কাহিনি আছে যা প্রমাণ করে যে তিনি কীভাবে মানব চেতনাকে জাগ্রত করেছিলেন যাতে মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে এবং সততার পথ দিয়ে চলতে পারে।
গুরু নানক একবার সৈয়দপুরে যান। তারপর জঙ্গল ও প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে হেঁটে একটি সরাইখানায় পৌঁছান। সেই সরাইখানার মালিক সজ্জন ছিলেন একজন ডাকাত এবং খুনি। তিনি ভ্রমণকারীদের তাঁর সরাইখানায় ডাকতেন। তাদের ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করতেন। এবং তারপর তাদের ডাকাতি করে হত্যা করতেন। নানক যখন তাঁর সরাইখানায় যান গুরুর মুখের উজ্জ্বলতা দেখে ডাকাতটি ভেবেছিলেন তিনি একজন ব্যবসায়ী। এবং এঁকে হত্যা করে তিনি অনেক কিছু পাবেন। নানক ঘুমোতে যাওয়ার সময় প্রতিদিনের মতোই একটি স্তোত্র গেয়েছিলেন। স্ত্রোতের তাৎপর্য বুঝতে পেরে সরাইখানার ডাকাত-মালিক ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং জীবনের মন্দপথ ত্যাগ করে একজন সত্যিকারের ঈশ্বরপ্রেমী হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর সরাইখানাকে ধর্মশালায় রূপান্তরিত করেছিলেন ধর্মীয় উপাসনা স্থান হিসাবে। এটিই ছিল গুরু-শিষ্যের সমাবেশের জন্য প্রথম ও প্রধান কেন্দ্র।
নানক তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলো কর্তারপুরে কাটিয়েছিলেন। তিনি এবং তাঁর শিষ্যরা একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতেন। তাঁরা সূর্যোদয়ের আগে উঠতেন, ঠান্ডা জলে স্নান করতেন এবং সকালের প্রার্থনা করার জন্য মন্দিরে হাজির হতেন। অভাবীদের সাহায্য করতেন, খাবার রান্না করতেন, সন্ধেবেলায় স্তবগানের জন্য জমায়েত হতেন। খাবার খেতেন, প্রার্থনা করতেন এবং তারপর বাড়ি ফিরতেন। এই পদ্ধতি সব গুরুদ্বারগুলোই অনুসরণ করা শুরু করে। গুরুনানক ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন।
নানকের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত উদার তিনি বর্ণের নিয়ম মেনে চলতেন না। মানুষের কুসংস্কার দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। পবিত্রতা ন্যায়বিচার মঙ্গল এবং ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা প্রচার করেছিলেন।
মানুষের মনের মধ্যে কুটিলতা কলুষতা দূর করতে ঈশ্বরের উপাসনা এবং ধর্ম ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত বিশ্বাসের মধ্যে প্রকৃত চেতনা সঞ্চার করার জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন। ‘বাহে গুরু’ হল গুরু নানকের অনুগামীদের জন্য এক পবিত্র মন্ত্র। আরেকটি পবিত্র মন্ত্র হল ঈশ্বর এক এবং অভিন্ন। তাঁর নামই একমাত্র সত্য এবং তিনি স্রষ্টা। তিনি সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত। তিনি ভয়হীন। তিনি শত্রুতামুক্ত। তিনি অমর। তিনি জন্মহীন। তিনি স্বজন্ম এবং স্ব-অস্তিত্বশীল। তিনি অন্ধকার (অজ্ঞানতা) দূরকারি এবং তিনি করুণাময়।

Latest article