চণ্ডীগড়: খোদ বিজেপি রাজ্যে প্রশাসনের শীর্ষস্তরে মানসিক নিপীড়ন ও অন্যায় চাপ তৈরির মারাত্মক অভিযোগ। জাতিগত বৈষম্য ও হেনস্থার অভিযোগ তুলে এক পুলিশকর্তার আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। বিজেপি শাসিত হরিয়ানার অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ তথা সিনিয়র আইপিএস আধিকারিক ওয়াই. পুরান কুমারের (Haryana y puran kumar) মৃত্যু আলোড়ন ফেলেছে রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে। খোদ ডিজিপির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে তাঁকে ছুটিতে পাঠানোর সম্ভাবনা। এদিকে শীর্ষ পুলিশকর্তার মৃত্যু সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসায় হরিয়ানার পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে নতুন করে একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আত্মঘাতী পুলিশকর্তার স্ত্রী নিজেও প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আইএএস অফিসার।
আরও পড়ুন-দেশের হাওয়া-বদলে কাঠগড়ায় রাজস্থানে বৃক্ষরোপণ: গাছ লাগানো ভাল, কিন্তু যেখানে-সেখানে নয়
গত ৭ অক্টোবর চণ্ডীগড়ে নিজের বাসভবনে আত্মহত্যা করেন পুলিশকর্তা পুরান কুমার (Haryana y puran kumar)। মৃত্যুর পর বাসভবন থেকে উদ্ধার হওয়া তাঁর স্বাক্ষর-সহ আট পাতার সুইসাইড নোটে বারবার ‘জাতিগত বৈষম্য’, ‘মানসিক হয়রানি’, ‘প্রকাশ্যে অপমান’ এবং ‘অত্যাচার’-এর উল্লেখ রয়েছে। সেইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, একশ্রেণির অসৎ অফিসার কীভাবে প্রশাসনের অন্দরমহলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সেই তথ্য। এই বিস্ফোরক চিঠিটি বিজেপি শাসিত হরিয়ানার প্রশাসনিক অব্যবস্থা ও দুর্নীতির বৃত্তকে ফাঁস করে দিয়েছে।
২০০১ ব্যাচের আইপিএস আধিকারিক পুরান কুমার অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এসেছিলেন এবং দীর্ঘ পুলিশ জীবনে হরিয়ানায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব সামলেছেন। তিনি অম্বালা ও রোহতক পুলিশ রেঞ্জের প্রধান থাকার পাশাপাশি হোমগার্ডস, টেলিকমিউনিকেশনস এবং আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের প্রধান ছিলেন। তাঁর সুইসাইড নোট থেকে স্পষ্ট হয়, কীভাবে প্রশাসনের সিস্টেমের মধ্যে ক্রমাগত অপমান ও পক্ষপাতিত্ব তাঁকে নিজের জীবন শেষ করে দিতে বাধ্য করেছে। মৃত আধিকারিকের স্ত্রী, আইএএস আধিকারিক অমনীত পি. কুমার ৮ অক্টোবর চণ্ডীগড় পুলিশের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি হরিয়ানার ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ শত্রুজিত সিং কাপুর এবং রোহতকের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট নরেন্দ্র বিজারনিয়ার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য একটি এফআইআর দায়ের করার দাবি জানিয়েছেন। তিনি তাঁর স্বামীর প্রতি জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগ তুলে এই বরিষ্ঠ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইন-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান। তিনি বলেন, এই শীর্ষকর্তাদের লাগাতার চাপের ফলেই তাঁর স্বামীকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে। নিজের অভিযোগে অমনীত কুমার লিখেছেন, এটা সাধারণ আত্মহত্যার ঘটনা নয়, বরং আমার স্বামীর (একজন তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের আধিকারিক) ওপর ক্ষমতাবান ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের পদ্ধতিগত নির্যাতনের সরাসরি ফল। তাঁরা তাঁদের পদমর্যাদা ব্যবহার করে তাঁকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন, শেষ পর্যন্ত তাঁকে এমন এক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছেন যে তাঁর কাছে আত্মহত্যা করা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ছিল না। চণ্ডীগড় পুলিশ বর্তমানে মামলার তদন্ত করছে। তবে অমনীত কুমারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলি নিয়ে শত্রুজিত সিং কাপুর বা নরেন্দ্র বিজারনিয়া কেউই জনসমক্ষে কোনও বক্তব্য দেননি। আত্মঘাতী পুলিশকর্তার স্ত্রী অমনীত কুমার বর্তমানে হরিয়ানা সরকারের বৈদেশিক সহযোগিতা বিভাগের কমিশনার ও সচিব পদে কর্মরত। তাঁর স্বামী চণ্ডীগড়ে তাঁদের বাসভবনে গুলি করে আত্মহত্যা করার সময় তিনি হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়াব সাইনির নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জাপান সফরে ছিলেন। পুরান কুমারের নোটে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে লাগাতার তাঁর বিরুদ্ধে বৈষম্য শুরু হয়। তারপর থেকে তিনি পদ্ধতিগত এবং ক্রমাগত লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্মুখীন হয়েছেন। স্ত্রী অমনীত কুমার বলেন, আমি শুধু আমার পরিবারের জন্য নয়, বরং প্রতিটি সৎ আধিকারিকের জীবনের মূল্য এবং মর্যাদার জন্য আবেদন করছি।