বিএলএ দের নিয়ে বৈঠকে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মূলত শহর কলকাতা ও সংলগ্ন জেলা থেকে আজ সেখানে উপস্থিত হয়েছেন প্রতিনিধিরা। কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলের ৪০ টি বিধানসভার বিএলএ উপস্থিত হয়েছেন। বাংলার ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৫৯ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে এবং এমতাবস্থায় বিজেপির ষড়যন্ত্রে দেড় কোটি নাম নাকি বাদ দেবে ইলেকশন কমিশন সোমবার নেবিএলএ (BLA) এবং বিএলএ-২ দের সতর্ক করে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ”হাত ঘোরালে নাড়ু পাব। নাড়ু নিয়ে ভোটে জিতব, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগাব। আর বাংলাকে দখল করব, বাংলাকে অপমান করব, বাংলার ইতিহাস ভুলিয়ে দেব। নানান রকম চালাকি। চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না।”
আরও পড়ুন-৮২ শতাংশ অর্থই বিজেপির পকেটে
কেন্দ্রের তড়িঘড়ি SIR সিদ্ধান্তকে তোপ দেগে তিনি বলেন “বিজেপি সব এজেন্সিকে দালাল বানিয়েছে। আরও দেড় কোটি নাম নাকি বাদ দিতে হবে, খোকাবাবুদের আবদার! বিজেপি তুমি আমাদের সাথে খেলে পারবে না। বাংলাকে জব্দ করতে এলে তোমাদের স্তব্ধ করে দেব! গায়ের জোরে দু বছরের কাজ দুমাসে করতে চাইছে। প্রতিদিন নির্বাচন কমিশন নির্দেশ বদল করছে। নির্বাচন কমিশনের ম্যাপিং-ই ভুল। ৪৬ টা প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। এর দায় কে নেবে? কমিশন তো এর দায় এড়াতে পারবে না। ডিলিমিটেশনে ঠিকানা বদলেছে, বাতিল। বিয়ে হয়ে অন্য বাড়িতে গিয়েছে, বাতিল। বাংলা ও ইংরেজিতে নামের বানানে ফারাক রয়েছে, বাতিল। এই অধিকার কে দিল? এলাকায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল চলবে। বিএলএ-১, বিএলএ-২ যাঁরা আছেন, তাঁদের ডিসটার্ব করা চলবে না। যখন ডিলিমিটেশন হল, একটা ভোটার আর একটা নির্বাচনী ক্ষেত্রে চলে গেল। মানে আগে ভবানীপুরটা ছিল আলিপুর। এখন হয়ে গিয়েছে ভবানীপুর। যুক্ত হল অন্য নতুন ওয়ার্ড। সব বিধানসভায় তাই হয়েছে। ম্যাপিংটাই তো ভুল। আপনাদের ম্যাপিং সম্পূর্ণ ভুল। এটি গ্রেট ব্লান্ডার। ২০০২ সালের পরে যে ডিলিমিটেশন হয়েছিল, সেটি কি বিবেচনায় রাখা হয়েছিল?”
এদিন বিএলএ (BLA) এবং বিএলএ-২ দের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”কোন কোন বৈধ ভোটারের নাম তালিকায় ওঠেনি তার বিস্তারিত খোঁজ নিতে হবে। এ ব্যাপারে বুথ লেভেল এজেন্টদের আরও সক্রিয় ও সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হবে। যাদের যা প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট দরকার তা দেখতে হবে বিএলএ-দের। ভোটের সময় অন্য রাজ্য থেকে নাম তুলতে এলে অবজেকশন দিতে হবে। মতুয়াদের ভোট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আদিবাসীদের ভোট কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির অনেকেও বিএলও হয়েছেন, এটা এই প্রথম।”
আরও পড়ুন-সাঁওতালি ভাষা দিবসে শুভেচ্ছা, সাঁওতালি-আদিবাসীদের উন্নয়নের খতিয়ান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
নিজের পরিবার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আমার বাবা-মায়ের জন্ম শংসাপত্র চাইলে দিতে পারব না। ওনারা তো বাড়িতে হয়েছিলেন, হাসপাতালে নয়। মোদী-শাহের কাছে চাইলে ওরা দিতে পারবেন? ভুয়ো শংসাপত্র দেবেন। আমরা ফেক বানাই না, বড় দিন আসছে, কেক বানাই। সেই কেক খেয়ে তোমাদের (বিজেপিকে) হজম করব। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ দেখাতে পারবেন? ও সব তো লুকিয়ে ডুপ্লিকেট দেখাচ্ছে। এরা পারে না এমন কোনও কাজ নেই। একটা ডুপ্লিকেট, ফেক (শংসাপত্র) বানাতে লাগে এক সেকেন্ড। কিন্তু আমরা তো ডুপ্লিকেট বানাব না। কোনও মহিলা বিয়ে করেছেন, কিন্তু পদবি বদলাননি। কমিশন এমন একাধিক মহিলা ভোটারের নাম বাদ দিয়েছে।”
আরও পড়ুন-রাতে বাড়িতে আগুন, ঝলসে মৃত একই পরিবারের ৪
এরপরেই নাম নিয়ে বিভ্রাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘’ইংরেজিতে নামটা অন্য শোনাচ্ছে, কিন্তু বাংলায় অন্য়। কেউ বাবা-মায়ের নাম লিখতে গিয়ে ‘এ’-র জায়গায় ‘ই’ লিখেছে। বাংলায় যেটা ‘আ’ হয়, ইংরেজিতে সেটা ‘ডবল এ’ হয়। একটা হকার, দোকানদার, একটা গরিব মানুষ, বস্তির মানুষ, একটা মহল্লার মানুষ, কলোনির মানুষ তোমার ইংরেজি বুঝবে কী ভাবে। কিন্তু সেই বিভ্রাটের জন্য নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ভুল ম্যাপিং। সম্পূর্ণ ভুল ম্যাপিং হয়েছে। ২০০২ সালের পর যে পুনর্বিন্যাস হয়েছিল, সেটা কি এসআইআর-এ ধরা হয়েছিল? একটি ভোটারের নাম ২০০২ সালে অন্য ঠিকানায় ছিল, কিন্তু পুনর্বিন্যাসের পর ওয়ার্ড বদলেছে ঠিকানাও বদলেছে। এখন তো আবার AI হয়েছে। একই নাম দিয়ে রাখছে। বিএলওদের দোষ নেই। কলকাতা জেলা আগে অন্যরকম ছিল। আগে ১০১টি ওয়ার্ড ছিল, ১৪৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। কারণ ২০০৯ সালে আসন পুনর্বিন্যাস হয়েছিল। গোটা এসআইআর প্রক্রিয়াটাই অপরিকল্পিত। চাইলে আমার গলাও কেটে দিতে পারেন, তাও আমি মানুষের কথা বলবই। গায়ের জোরে যে কাজ করতে দু’বছর করতে লাগে, সেটা দু’মাসে করতে হবে? যাতে সরকারে আগের ছয় মাস কোনও উন্নয়ন মূলক কাজ করতে না পারে?”

